প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টায় মেসিকে দেখতে যান বেকহাম

0
109
লিওনেল মেসি ও ডেভিড বেকহাম

লিওনেল মেসির আগমন বলে কথা! ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রপাত উপেক্ষা করেই গত ১৬ জুন সন্ধ্যায় ফ্লোরিডার পোর্ট লডারডেলের ডিআরভি পিএনকে স্টেডিয়ামে জড়ো হয়েছিলেন হাজারো ফুটবলপ্রেমী। মেসি-বরণ অনুষ্ঠানের সময় নামা বৃষ্টিকে সেদিন ‘পবিত্র জল’ বলেছিলেন ইন্টার মায়ামির সহমালিক জর্জ ম্যাস। আর মেসিকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন ‘আমেরিকার নম্বর ১০’ হিসেবে।

ডেভিড বেকহামের কাছেও ব্যাপারটা একই রকম। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ও মায়ামির আরেক সহমালিক বেকহামের মতে, তাঁর ক্লাবে মেসির যোগ দেওয়ার ঘটনা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল নয়; দেশটির ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসেরই সবচেয়ে বড় দলবদল। জমকালো আয়োজনে মেসিকে মায়ামিতে বরণ করে নেওয়ার চার দিন পর মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাবটির হয়ে তাঁর অভিষেক হয়েছে।

মার্কিন ফুটবলে আর্জেন্টাইন তারকার প্রথম ম্যাচের প্রাক্কালে ক্রীড়াবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘দ্য অ্যাথলেটিক’কে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বেকহাম। শুনিয়েছেন মেসিকে আনার পরিকল্পনার কথা। জানিয়েছেন তাঁকে ঘিরে সমর্থকদের উন্মাদনা, প্রত্যাশা ও মার্কিন ফুটবলে বাঁকবদলের সম্ভাবনা। সাবেক ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বর্তমান মালিকানা নিয়েও অল্পবিস্তর আলোচনা করেছেন।

বেকহাম বলেন, ‘আমরা এখন বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রীড়াবাজার নিয়ে আলোচনা করছি। বিশ্বকাপ জয়ের পরের বছরই লিওনেল মেসিকে ইন্টার মায়ামিতে, এমএলএসে নিয়ে আসা; সেটাও তিন বছর বয়সী একটা দলে…এটা বিশাল অর্জন।’ মেসিকে নিজের দলে ভেড়ানোকে কি খেলোয়াড়ি জীবনের অর্জনের সঙ্গে তুলনা করা যায়? ৪৮ বছর বয়সী বেকহামের উত্তর, ‘কখনোই ভাবিনি খেলোয়াড় ও ক্লাবের মালিক হিসেবে একই রকম অনুভূতি হবে। যখন আমার কাছে ফোন এল, মনে হচ্ছিল আমি ওল্ড ট্রাফোর্ড বা ওয়েম্বলিতে হাঁটছি। অনুভূতিটা এমন যেন আমরা সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে পেছনে ফেলে সর্বকালের সেরা ফুটবলারকে দলে আনছি।’

মেসির সঙ্গে বেকহামের একটা মিলও আছে। ২০০৭ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস গ্যালাক্সিতে অভিষেক হয়েছিল বেকহামের, ইন্টার মায়ামিতে মেসির অভিষেক ২০২৩ সালে। ব্যবধান ১৬ বছরের হলেও তারিখটা একই—২১ জুলাই! রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে বেকহাম যখন মার্কিন মুলুকে পাড়ি জমান, তখন কত কথাই না শুনতে হয়েছে। পুরো যুক্তরাষ্ট্রে তখন মাত্র ছয়টি স্টেডিয়াম পুরোপুরি ফুটবলের জন্য বরাদ্দ ছিল। কিন্তু বেকহামের মধ্যে মার্কিন ফুটবলকে বদলে দেওয়ার তাড়না কাজ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলকে মনেপ্রাণে ভালোবেসেছেন তিনি। সেখানে থেকে যেতে চেয়েছেন।

ইন্টার মায়ামির জার্সিতে মাঠ মাতাচ্ছেন লিওনেল মেসি
ইন্টার মায়ামির জার্সিতে মাঠ মাতাচ্ছেন লিওনেল মেসি

ইউরোপে যা কিছু শিখেছেন, সেটা যুক্তরাষ্ট্রেও আনতে চেয়েছেন। তাঁর মনে হয়েছে, মেসিও এমন ভাবনা থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন, ‘আমি বলছি না সব আমার চাওয়াতেই হয়েছে। লিগ যখন ধুঁকছিল, তখন অসংখ্য মানুষ আমাকে লস অ্যাঞ্জেলেসে চেয়েছিলেন। তবে তাঁরা দূরদর্শী ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। আমার মনে হয়, লিও (মেসি) সেটা দেখেছে এবং সব ভেবেচিন্তে এটাকে একটা সুযোগ হিসেবে নিয়েছে। সে আরও দেখেছে যে এটা একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প। এখানে আমি জিততে চাই। হোসে ও জর্জ (ম্যাস) জিততে চায়। লিও নিজেও জিততে চায়। ওর এখানে যোগ দেওয়ার ঘটনা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল নয়; দেশটির ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসেরই সবচেয়ে বড় দলবদল।’

এক ক্লাব ছেড়ে আরেক ক্লাবে যাওয়াকে অনেকে নতুন জায়গায় খেলার সুযোগ হিসেবে দেখলেও মেসির চোখে সেটা পরবর্তী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করার বলে মনে করেন বেকহাম, ‘বিশ্বকাপ জয় ওর অর্জনকে পরিপূর্ণতা দিয়েছে। খেলোয়াড় হিসেবে সম্ভাব্য সবকিছুই সে জিতেছে। ওর কাছে এটা (মায়ামিতে নাম লেখানো) শুধু এ দেশের ফুটবলকে বদলে দেওয়ার চ্যালেঞ্জই নয়, পরবর্তী প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগানোরও। সে যখন মাঠে নামবে, শিশুরা ওর কথা বলবে, ওকে দেখে শিখবে। এ দেশে ফুটবলকে সে আরও বড় পরিসরে তুলে ধরবে। ইতিমধ্যেই সে এটা করে ফেলেছে। শুধু মায়ামি বা যুক্তরাষ্ট্র নয়, এখানে আসার পর পুরো বিশ্ব ওকে নিয়ে কথা বলছে।’

পিএসজি সমর্থকদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল মেসির। বিশেষ করে ক্লাবটির কট্টর সমর্থকগোষ্ঠী (আলট্রাস নামে পরিচিত) বিশ্বকাপের পর পিএসজির জার্সিতে খেলা প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই তাঁকে দুয়ো দিয়েছেন। রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী ফুটবলার তাই মৌসুম শেষেই প্যারিস ছাড়ার ঘোষণা দেন। নতুন গন্তব্য হিসেবে সৌদি ক্লাব আল হিলালে যাওয়ার গুঞ্জন জোরেশোরে শোনা যাচ্ছিল। সম্ভাবনা ছিল পুরোনো ঠিকানা বার্সেলোনায় ফেরারও। তবে ৭ জুন প্যারিসে বসেই স্পেনের দুই সংবাদমাধ্যম দেপোর্তিভো ও স্পোর্তকে সাক্ষাৎকার দেন মেসি। সেদিনই বলেন, ‘আমি ইন্টার মায়ামিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

সুখবরটা বেকহাম কীভাবে পেয়েছেন, শুনুন তাঁর মুখেই, ‘পরিবারের সঙ্গে আমি জাপানে ছিলাম। ভোর পাঁচটায় জেগে উঠি। কারণ, আমার ফোন বেজেই চলছিল। আমার স্ত্রী (ভিক্টোরিয়া বেকহাম) বলল, “ফোন বন্ধ করে রাখো।” কিন্তু ফোন হাতে নিয়ে মনে হলো, কী একটা হয়েছে। চশমা পরে ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই দেখি, লিও আসছে! সে নিজেই ঘোষণা দিয়েছে। আমার স্ত্রী এরপর বলল, “কী বোঝাতে চাইছ? সে কিসের ঘোষণা দিয়েছে?” আমি বললাম, টিভিতে এসে লিও নিশ্চিত করেছে যে সে ইন্টার মায়ামিতে আসছে। ওর কথা বলতে গিয়ে আমি রোমাঞ্চিত হয়ে পড়েছিলাম।’

এবার জোড়া গোল করলেন মেসি
এবার জোড়া গোল করলেন মেসি

মনে রাখার মতো অনেক মুহূর্ত বেকহামের জীবনে এসেছে। কিন্তু সেরা কোনটা? সর্বকালের অন্যতম সেরা সেট–পিস বিশেষজ্ঞের জবাব, ‘কোনো সন্দেহ নেই, এটা (মেসির আগমন) অন্যতম সেরা। ও কয়েক দিন হলো এখানে (মায়ামিতে) এসেছে। আমি প্রতিদিন সকাল সাড়ে সাতটায় ওর সঙ্গে দেখা করতে যাই। নিজেকে বিশ্বাস করাতে চাই যে এটা সত্য।’

ইন্টার মায়ামির পাশাপাশি ইংলিশ ফুটবলের চতুর্থ স্তরের ক্লাব সালফোর্ড সিটিরও সহমালিক বেকহাম। কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় ক্লাব মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হয়েছে তাঁর। সাক্ষাৎকারে সাবেক ক্লাব ইউনাইটেডের মালিকানা নিয়ে কথা বলেছেন। প্রিয় ক্লাবকে আর গ্লেজার পরিবারের মালিকানাধীন দেখতে চান না বেকহাম, ‘অবশ্যই ওদের চলে যাওয়া উচিত। কারণ, সমর্থকেরা আর তাদের চান না। একবার যদি আপনি সমর্থক হারান, বিশেষ করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাবের সমর্থক; তাহলে তাঁদের ফিরিয়ে আনা খুব কঠিন। অর্জনের দিক থেকে এবং আর্থিকভাবে অবশ্যই তারা সফল। কিন্তু এখন বদলের সময় এসেছে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.