দুই বিবস্ত্র নারীর ভিডিও, দুই মাস পর মণিপুর নিয়ে প্রথম মুখ খুললেন মোদি

0
114
সহিংসতা বন্ধ করে শান্তি ফিরিয়ে আনার দাবিতে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে গত সোমবার নারীদের বিক্ষোভ

দুই মাস আগে ধারণ করা মণিপুর রাজ্যের সহিংসতার একটি ভিডিও নতুন করে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। ওই ভিডিও অবিলম্বে প্রত্যাহারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে নির্দেশ দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় চূড়ান্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

এই ক্ষোভের মুখে এত দিন ধরে মণিপুর নিয়ে মৌন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ বৃহস্পতিবার প্রথম মুখ খুললেন। তিনি বলেন, এই অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। একজন অপরাধীও পার পাবে না।

আজই শুরু হয়েছে ভারতীয় সংসদের বাদল অধিবেশন। প্রথম দিনেই মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য কংগ্রেসসহ বিরোধীরা মুলতবি প্রস্তাব জমা দেন। সরকারপক্ষও আলোচনায় রাজি।

ভিডিওটিতে যে ভয়াবহ দৃশ্য দেখা গেছে, তা গত ৪ মে ধারণ করা। আগের দিনই হিন্দু মেইতি ও খ্রিষ্টান কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত দাঙ্গায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুর। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, দুই মণিপুরি তরুণীকে বিবস্ত্র করে এক দল উত্তেজিত জনতা রাস্তা দিয়ে হাঁটিয়ে একটি মাঠে নিয়ে যাচ্ছে। সেই মাঠে ওই দুই নারী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন।

এত দিন পর ওই পুরোনো ভিডিও কী করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল, কারা তা করল, কোন উদ্দেশ্যে—তা দ্রুত আলোচনায় উঠে আসে। গতকাল বুধবার রাতেই কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় তৎপর হয়ে ওঠে। সামাজিক মাধ্যম কেন ওই ভিডিও বন্ধে উদ্যোগী হলো না, সেই প্রশ্ন আলোচিত হতে থাকে।

সরকার মনে করছে, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর বোঝা উচিত ছিল, ওই ভিডিও নতুন করে অশান্তি সৃষ্টি করবে। সে জন্য আগেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। ভিডিওটি যাতে ভাইরাল না হয়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি ছিল। এ নিয়ে আজ সকাল থেকেই রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। নির্দেশ দেওয়া হয় সেই ভিডিও প্রত্যাহারের। মণিপুর প্রশাসন সকাল ১০টা নাগাদ জানায়, ওই ঘটনার অন্যতম প্রধান পান্ডাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিজেপি–শাসিত মণিপুরে অশান্তির ১০ সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যে অন্তত ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন সহস্রাধিক। অগুন্তি ঘরবাড়ি, গির্জা, মন্দির ধূলিসাৎ হয়েছে। ৬০ হাজার মণিপুরি এখনো শরণার্থীশিবিরে বন্দী।

মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে এত দিন একবারের জন্যও প্রধানমন্ত্রী মোদি মুখ খোলেননি। বিরোধীদের সমস্বর প্রতিবাদের মধ্যেই ভাইরাল হয় ভিডিওটি। যেদিন তা জনসমক্ষে ছড়িয়ে পড়ে, তার পরের দিন থেকেই শুরু সংসদের অধিবেশন। সেই অধিবেশনে যোগ দেওয়ার মুখে প্রধানমন্ত্রী প্রথমবারের মতো সরব হলেন। একই সঙ্গে প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।

বিরোধীরা অবশ্য মণিপুর নিয়ে আলোচনার জন্য লোকসভায় মুলতবি প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। সাধারণত আইনশৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার দায়িত্ব বর্তায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিরোধীদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীকে জবাবদিহি করতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.