তাঁদের বৃষ্টিভেজা ঈদযাত্রা

0
101
বৃষ্টিতে ভিজেই গন্তব্যের দিকে।

পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে রাজবাড়ীর গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য আজ বুধবার সকাল নয়টা থেকেই অপেক্ষা করছিলেন দুই বন্ধু আল আমিন ও শুভ মণ্ডল। কিন্তু বৃষ্টি থামে না। একপর্যায়ে বৃষ্টিতে ভিজেই গ্রামে যাওয়ার জন্য সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরের বাসা থেকে রওনা দেন তাঁরা। গণপরিবহন না পেয়ে রিকশায় করে রওনা দেন। গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে আসতে আসতে অনেকটা ভিজেই যান।

দুপুর ১২টার দিকে বাস টার্মিনালে রিকশা থেকে নামার পর আল আমিন বলেন, ‘অনেক জোরে বৃষ্টি পড়ছে। বাতাসও আছে। এ জন্য ভিজে গেছি। আর ঈদের মাত্র আজকের দিন বাকি। এদিকে বৃষ্টি থামার লক্ষণ নেই। রাস্তায় যানজট হবে। যেতেও সময় লাগবে। তাই এখন বের না হলে বাড়ি যেতে যেতে তো ঈদ শেষ হয়ে যাবে।’

রাজধানীতে আজ সকাল থেকেই বৃষ্টি। এ কারণে তাঁদের মতো যাঁরা আজকে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছাড়তে বের হয়েছেন, তাঁদের অল্পবিস্তর হলেও বৃষ্টির স্বাদ গ্রহণ করতে হচ্ছে।

রাজধানীর গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে দেখা যায়, বাস, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও রিকশায় করে মানুষ সেখানে আসছেন। বাসে এলে নামার পর অনেকেই ভিজে যাচ্ছেন। সিএনজি চালিত অটোরিকশার যাত্রীরা একটু কম ভিজচ্ছেন। মোটরসাইকেল ও রিকশার যাত্রীরা ভিজে যাচ্ছেন।

প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গন্তব্যে রওনা হয়েছেন ঘরমুখী মানুষ। গাবতলী, ঢাকা, ২৮ জুন
প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গন্তব্যে রওনা হয়েছেন ঘরমুখী মানুষ। গাবতলী, ঢাকা, ২৮ জুন

মো. মোছা খান দুই শিশু ও স্ত্রীকে নিয়ে কুষ্টিয়ার গ্রামের বাড়ি মোটরসাইকেলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু সকাল থেকেই বৃষ্টি থাকায় সেই পরিকল্পনা বাতিল করেন। স্ত্রী ও সন্তানদের বাসে বাড়ি পাঠিয়ে তিনি মোটরসাইকেলে যাবেন। সেই চিন্তা থেকে একটু বৃষ্টি কমলে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বাড্ডার বাসা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোটরসাইকেলে রওনা দেন তিনি। গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে আসতে আসতে সবাই কাকভেজা হয়ে যান। বেসরকারি চাকরিজীবী মোছা খান বলেন, ‘গাবতলী আসতেই আমরা সবাই ভিজে শেষ।’

অনেক যাত্রীই গাবতলী পার হয়ে আমিনবাজার ও তার পরবর্তী স্থান যাচ্ছেন। আমিনবাজার সেতুর ওপর শত শত মানুষ বৃষ্টিতে ভিজে অপেক্ষা করছেন। সেখান থেকে ট্রাকে ও লোকাল বাসে করে তাঁরা যাত্রা করছেন। অনেকেই আজ বৃষ্টির কারণে আমিনবাজারের দিকে যেতে না পেরে গাবতলী বাস টার্মিনালেই থাকছেন। এ ছাড়া অনেকে ছাতা হাতে এবং কেউ কেউ ছাতা ছাড়াই ভিজে হেঁটে গাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন।

বাস ছাড়তে দেরি

গাবতলী থেকে যাওয়া দক্ষিণাঞ্চলের বাস ঠিক সময় ছাড়তে পারছে না। নবীনগর থেকে গাবতলী পর্যন্ত যানজটের শিকার হওয়ায় বাস আসতে দেরি করছে। ফলে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বাস ছাড়তে দেরি হচ্ছে।

বেসরকারি চাকরিজীবী মাজেদুল ইসলাম স্ত্রীকে নিয়ে যশোরের গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য জে লাইন পরিবহনের একটি বাসের টিকিট কাটেন। বাস ছাড়ার কথা ছিল সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে। মাজেদুল ইসলাম বলেন, সাড়ে ১১টা পার হয়ে গেল, এখনো বাস ছাড়েনি।

ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী দ্রুতি পরিবহনের ম্যানেজার তরিকুল ইসলাম বলেন, নবীনগর থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত যানজট থাকায় পাঁচ-ছয় ঘণ্টা দেরি হচ্ছে।

বাস দেরিতে আসায় অনেককে বাসের টিকিট পেতেও বেগ পেতে হচ্ছে। স্বামী ও সন্তান নিয়ে যশোর যাবেন ঝুমুর আক্তার। তিনি বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে এসেছি। এক ঘণ্টা পর একটা বাসে টিকিট পেয়েছি।’

 বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢাকা ছাড়ার প্রস্তুতি। রাজধানীর গাবতলী থেকে তোলা। ২৮ জুন
বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢাকা ছাড়ার প্রস্তুতি। রাজধানীর গাবতলী থেকে তোলা। ২৮ জুন

গাবতলী থেকে উত্তরাঞ্চলের বাস আজ ১৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা দেরি করে ছাড়ছে। তবে গত রাতের বাস ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে।

শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আরিফুর রহমান বলেন, গত রাত ৯টার বাস আজ ভোর ৫টায় ছেড়ে গেছে। গাবতলীর গরুর হাটের কারণে কল্যাণপুর থেকে যানজট। এই যানজট নবীনগর পর্যন্ত।

যমুনা সেতু এলাকায়ও যানজট রয়েছে। তা ছাড়া টার্মিনাল ছাড়াও বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে রাস্তার ওপর গাড়ি রেখে যাত্রী তোলা হয়, এ কারণেও যানজট হচ্ছে।

গতকাল ও আজকের যানজট এবং এর কারণ নিয়ে উত্তরাঞ্চলগামী দেশ ট্রাভেলস, গ্রামীণ ট্রাভেলসসহ অন্যান্য পরিবহনও একই ধরনের কথা বলছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.