আটকে গেল বেসরকারি শিক্ষক বদলির উদ্যোগ

নীতিমালা চূড়ান্তকরণ সভায় শিক্ষা প্রশাসনের আপত্তি

0
26
শিক্ষা মন্ত্রণালয়

দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় ছিল বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বদলির সুযোগ পাবেন। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সুপারিশে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষক বদলি নীতিমালা ২০২৪’-এর খসড়া প্রণয়ন করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে গতকাল রোববার সভা করে বিষয়টি চূড়ান্ত করতে গেলে কিছু আইনগত দিক তুলে ধরে আপাতত বদলি চালু না করার পক্ষে মত দেন শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন কর্মকর্তা। এর পর পুঙ্খানুপুঙ্খ আইনগত দিক খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নিতে বলেন সভার সভাপতি শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

সারাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ৫ লাখের মতো। তারা সরকার থেকে বেতনের মূল অংশ ও কিছু ভাতা পান। বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা নেই। এক প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করে সেখান থেকেই অবসর নিতে হয়। একসময় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরিভাবে নিজেদের উদ্যোগে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিত। কিন্তু এখন কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠান এনটিআরসিএর অধীন অনুষ্ঠিত পরীক্ষার মাধ্যমে এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। আগে এই পরীক্ষায় পাস করার পর একটি নিবন্ধন সনদ দেওয়া হতো। তার পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান আলাদা পরীক্ষা নিয়ে নিবন্ধনধারীদের মধ্যে থেকে নিয়োগ দিত। তবে এখন এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠান ঠিক করে সুপারিশ করে।

গতকাল সচিবালয়ে সভায় অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রী বদলি নিয়ে উপস্থিত কর্মকর্তাদের মতামত জানতে চান। এ সময় একটি সংস্থার শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানান, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম চলছে। ৯৬ হাজারের বেশি শূন্য পদ থাকলেও পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অর্ধেক পদও পূরণ হবে না। এ অবস্থায় বদলি চালু করা হলে

গ্রামের সব শিক্ষক শহরে চলে আসবেন। গ্রামের স্কুলগুলোতে খালি হওয়া পদগুলো আর পূরণ করা সম্ভব হবে না। এজন্য আপাতত বদলি চালু না করতে মত দেন তিনি।
শিক্ষা প্রশাসনের আরেক কর্মকর্তা সরাসরি বদলি চালু করা বা সম্ভব হলে সম পদে এবং সম স্কেলে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। তবে এ ক্ষেত্রে মামলাসহ আরও কিছু জটিলতা দেখা দেওয়ায় এ প্রস্তাবও আপাতত অনুমোদন না করার সিদ্ধান্ত হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত এক কর্মকর্তা বলেন, মূলত একটি সংস্থার শীর্ষ এক কর্মকর্তা আপাতত বদলি চালু না করার পক্ষে মত দিয়েছেন। ওই কর্মকর্তার কথায় যুক্তি থাকায় আপাতত বদলি চালু হচ্ছে না। বদলির প্রক্রিয়া কবে চালু হবে, সে বিষয়ে নতুন করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘কিছু আইনগত বিষয় সামনে চলে আসায় বদলি নীতিমালা চূড়ান্ত করা যায়নি। বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ আমরা (সরকার) নই। তাদের নিয়োগ দেয় ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডি। আমরা বদলি করলে প্রশ্ন উঠতে পারে– নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ না হয়ে তাদের বদলি করার আমরা কে? ভবিষ্যতে এ নিয়ে মামলাও হতে পারে।’

সরকারি শিক্ষকদের মতো বেসরকারি শিক্ষকরাও বদলি হতে পারবেন– এমন উদ্যোগ নিয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। নিজেদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করে প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে আনার পর গতকাল বৈঠকে বসেছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। শেষ মুহূর্তে সেই প্রক্রিয়া আটকে দিলেন তারা।

প্রণীত খসড়া নীতিমালায় বদলির ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতামূলক নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, বদলির আবেদন অধিকার বা সুযোগ হিসেবে দাবি করা যাবে না। বদলির জন্য কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংগঠনের সুপারিশ শৃঙ্খলাজনিত অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। বদলির জন্য বদলি হওয়া শিক্ষক কোনো ভাতা পাবেন না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.