ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় যুবলীগের সাবেক নেতাসহ তিনজনের কারাদণ্ড

0
149
রায় ঘোষণার পর দণ্ড পাওয়া আসামিদের কারাগারে নেওয়া হচ্ছে। রোববার রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত প্রাঙ্গণে, ছবি: সংগৃহীত

ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নামে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন প্রচারের পর প্রতারণার মাধ্যমে ১৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় যুবলীগের সাবেক নেতাসহ তিনজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ রোববার রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক জিয়াউর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে আসামিদের জরিমানাও করা হয়েছে।

দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা যুবলীগের সাবেক নেতা এবং উপজেলার খাঁপাড়া গ্রামের রাব্বি শাকিল ওরফে ডিজে শাকিল (৩২), নওগাঁর মান্দা উপজেলার গাড়িক্ষেত্র গ্রামের হারুন রশিদ ওরফে সাইফুল (২৬) এবং তাড়াশ উপজেলার কুসুমবি গ্রামের হুমায়ুন কবীর (২৮)। রায় ঘোষণার সময় শাকিল ও হারুন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তবে হুমায়ুন কবীর পলাতক।

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ইসমত আরা রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বগুড়ার বাসিন্দা তারেক ও অভি ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর শাকিল ও হারুনের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করেন। মামলায় শাকিলকে আদালত দুটি ধারায় পাঁচ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ করে টাকা জরিমানা করেছেন। জরিমানার অর্থ অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অপর আসামি হারুন ও হুমায়ুনকে দুটি ধারায় এক বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার অর্থ অনাদায়ে আরও তিন মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ইসমত আরা আরও বলেন, আসামিদের সাজা একটার পর অন্যটা কার্যকর হবে বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন। রায় ঘোষণার সময় শাকিল ও হারুন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলায় অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার বাসিন্দা তারেক ও অভি নামের দুই ব্যবসায়ী ‘ইন্টারন্যাশনাল লোন সার্ভিস’ নামে ফেসবুকের একটি পেজে ঋণ দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেখেন। এরপর তাঁরা যোগাযোগ করলে তাঁদের দুজনকে সাড়ে চার কোটি টাকা ঋণ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। এ জন্য ইন্টারন্যাশনাল লোন সার্ভিসের পক্ষ থেকে শাকিল ও হারুন তাঁদের বাড়ি পরিদর্শন করেন। এ সময় তাঁরা ৫ শতাংশ কমিশনে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দুজনের কাছ থেকে প্রায় ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। পরে ঋণ দেওয়ার জন্য তাঁরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বিভিন্ন কাগজপত্র ও চেকের স্ক্যান কপি ই-মেইলে পাঠান। কিন্তু ওই চেকের টাকা তোলার মেয়াদ পার হয়ে গেলেও তাঁদের আসল কপি দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে সন্দেহ হলে যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে তাঁরা প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন। এ নিয়ে প্রথমে দুজনের নামে মামলা করা হয়। পরে পুলিশের তদন্তে আরেক আসামি হুমায়ুন কবীরকে শনাক্ত করা হয়। দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত তিন আসামির বিরুদ্ধে আজ রায় ঘোষণা করেন।

২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রতারণার শিকার দুজন মামলা করলে ওই বছরের ১২ আগস্ট তাড়াশ থেকে দুই সহযোগীসহ শাকিলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তাঁর কার্যালয় থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ২০১ কোটি ৭২ লাখ টাকার চেক এবং সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের ভুয়া নিয়োগপত্র জব্দ করে বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর ১৩ আগস্ট তাঁকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্র জানায়, আসামিদের গ্রেপ্তারের পর দেশের বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য ভুক্তভোগী ডিবি পুলিশের কাছে ফোন করেন, যাঁদের অধিকাংশই শাকিলের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.