ক্রিকেটের ‘হোম’ লর্ডস তো ছেলেদের, মেয়েদের জায়গা সামান্যই

0
113
লর্ডসে এখন পর্যন্ত কোনো টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি ইংল্যান্ডের নারী ক্রিকেট দল

দ্য ইনডিপেনডেন্ট কমিশন ফর ইকুইটি ইন ক্রিকেটের (আইসিইসি) প্রতিবেদন ইংল্যান্ড ক্রিকেটের ভিতকে বড়সড় ধাক্কাই দিয়েছে। বর্ণবাদ, নারী ক্রিকেটারদের যৌন হয়রানি, ধর্মীয় বিদ্বেষ, নারী-পুরুষের বেতন-ভাতায় চূড়ান্ত বৈষম্যের পাশাপাশি এই প্রতিবেদনে ‘হোম অব ক্রিকেট’ লর্ডসে নারী-পুরুষের খেলার বৈষম্যও তুলে ধরা হয়েছে। ক্রিকেট খেলার আইন প্রণয়নকারী সংস্থা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) মাঠ হলো লর্ডস। এই প্রতিবেদনে এমসিসির জন্যও কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।

লর্ডসে এখন পর্যন্ত কোনো টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি ইংল্যান্ডের নারী ক্রিকেটাররা। ২০১৭ সালে এই লর্ডসে বিশ্বকাপ ফাইনাল জেতার পর ইংল্যান্ডের নারী জাতীয় দল এখন পর্যন্ত লর্ডসে খেলতে পেরেছে মাত্র একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। সংখ্যা শিগগির দুই হবে। ৮ জুলাই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি খেলবে ইংল্যান্ড। অন্যদিকে, ইংল্যান্ড পুরুষ ক্রিকেট দল ২০২০ সালের মহামারির বছর ছাড়া এই শতাব্দীতে প্রতিবছর লর্ডসে কমপক্ষে দুটি টেস্ট ও একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে।

ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান রিচার্ড থম্পসনও এই বৈষম্যকে অগ্রহণযোগ্য বলছেন, ‘এমনটা অগ্রহণযোগ্য, আমরা এটা নিশ্চিত করতে যাচ্ছি যেন ২০২৬ সালে ইংল্যান্ডের নারী দল টেস্ট খেলতে পারে, এটা যদিও আরও আগে হওয়া উচিত। ২০২৬ সালে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যখন আমরা আয়োজন করব, তখন এই বিষয়টা বিবেচনা করা হবে।’

প্রতিবেদন প্রকাশের পরই রিচার্ড থম্পসন এক বিবৃতিতে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনাও করেছেন, ‘ইসিবি ও খেলাটির নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে আমি তাঁদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যাঁরা কখনো না কখনো ক্রিকেট থেকে ছিটকে পড়েছেন এবং যাঁদের এই অনুভূতি দেওয়া হয়েছে যে ক্রিকেট তাঁদের জন্য নয়। ক্রিকেট সবার খেলা হওয়া উচিত এবং সব সময় তা-ই ছিল। তবে প্রতিবেদনের শক্তিশালী উপসংহারগুলো থেকে বোঝা যায় যে দীর্ঘকাল ধরে এখানে নারী ও কালো মানুষেরা অবহেলিত হয়ে ছিল। আমরা এর জন্য সত্যিই দুঃখিত।’

১৮৫১ সাল থেকে লর্ডসে বার্ষিক প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলে আসছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। দুটি বিশ্বযুদ্ধ আর মহামারির প্রথম বছর ছাড়া যা কখনো বন্ধ হয়নি। এদের মতোই লর্ডসে খেলার দীর্ঘ ইতিহাস আছে ইংল্যান্ডের দুটি প্রাইভেট স্কুল ইটন ও হ্যারো। ২০২৩ সালের পর থেকে লর্ডসে ঐতিহাসিক এই প্রতিযোগিতা বন্ধ করার সুপারিশ করেছে আইসিইসি। এর পরিবর্তে লর্ডসে ছেলে ও মেয়েদের জাতীয় অনূর্ধ্ব–১৯ স্কুল ক্রিকেটের ফাইনাল রাখার দাবি জানানো হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

লর্ডসে আরও একটি টেস্ট খেলার অপেক্ষায় স্টোকসরা
লর্ডসে আরও একটি টেস্ট খেলার অপেক্ষায় স্টোকসরা

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অল্পসংখ্যক স্কুলপড়ুয়া ছাত্রের লর্ডসে খেলার সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে, যেখানে প্রতিবছর লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। যেখানে ইংল্যান্ডের নারী ক্রিকেট দল একটা ম্যাচও খেলেনি, সেখানে দুটি ব্যয়বহুল স্কুলের ছাত্ররা ও শীর্ষ দুটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা প্রতিবছর খেলছে, এটাও গ্রহণযোগ্য নয়।’

এমসিসিও প্রতিক্রিয়া জানাতে দেরি করেনি। এমসিসির প্রধান নির্বাহী ও সচিব গাই ল্যাভেন্ডার এই প্রতিবেদন সম্পর্কে বলেছেন, ‘আইসিইসি প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আজ (গতকাল) গ্রহণ করেছি। আমাদের মনে হয়েছে, ইংল্যান্ডের ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত সবার এই প্রতিবেদনটা হজম করা কঠিন। এই প্রতিবেদনে এমসিসির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা বিস্তারিতভাবে বিষয়টি বিশ্লেষণ করছি। ক্রিকেটকে দেশের সবচেয়ে শুদ্ধ খেলা হিসেবে নিশ্চিত করতে আমরা দায়বদ্ধ।’

ইংলিশ ক্রিকেটে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও লিঙ্গবৈষম্যের ব্যাপারগুলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে খতিয়ে দেখতে ২০২০ সালের নভেম্বরে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) এই কমিশন গঠন করে। ক্রিকেটার, আম্পায়ার, ক্রিকেট প্রশাসক, সমর্থকসহ মোট চার হাজার ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে ৩১৭ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইসিইসি, যার শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘হোল্ডিং আপ আ মিরর টু ক্রিকেট’।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.