আশ্রয়কেন্দ্রে আর্তনাদ আজিজাদের

0
86
ঝড়ের কবল থেকে রক্ষা পেতে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেন উপকূলবাসী। রোববার শাহপরীর দ্বীপ থেকে তোলা

মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে গেলে শাহপরীর দ্বীপ উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সামনে আছে বড় একটি খেলার মাঠ। দু’পাশে দুটি দ্বিতল ভবন। সেই ভবনের একটিতে দাঁড়িয়ে আছেন আজিজা। বয়স আনুমানিক ৬০ বছর। দৃষ্টিতে তাঁর অসহায়ত্ব। মুষ্টিবদ্ধ হাত। সাংবাদিক বহন করা মাইক্রোবাস দেখেই রোববার দুপুর ২টার দিকে ছুটে এলেন আজিজা।

শুরুতেই তাঁর প্রশ্ন, ‘আপনারা কি কোনো খাবার আনছেন? সকাল থেকে না খেয়ে আছি।’ পাশেই ছিলেন স্থানীয়  ইউপি সদস্য রেজাউল করিম রেজু। আজিজাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন তিনি। এর মধ্যে হাজির হলেন রোকসানা বেগমও। তিনি ছুটে এসে দিলেন নতুন অভিযোগ। জানালেন, খাবার পানি নেই, দুটি টিউবওয়েল আছে দ্বিতীয় তলায়। কিন্তু পানি ওঠে না একটাতেও।

এ অভিযোগ নিয়ে কথা হয় আরও অন্তত ১০ জনের সঙ্গে। তাঁদের একজন হেলাল উদ্দিন। থাকেন কুলালপাড়া এলাকায়। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের এই বাসিন্দা বললেন– অভিযোগ সঠিক।  খাবার ও পানি– কোনোটি চেয়েও পাননি তিনি। টয়লেটেরও নেই সুব্যবস্থা। একবার টয়লেটে গেলে, লাইন ধরতে হয় একঘণ্টা।

এসব অভিযোগের জবাব জানতে চাই স্থানীয় ইউপি মেম্বার রেজাউল করিমের কাছে। তিনি বললেন, ‘অভিযোগ সত্য। কিন্তু আমার কিছু করার নেই। আপনি ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’

ইউএনও মো. কামরুজ্জামান বললেন– খাবার ও পানির ব্যবস্থা আছে। এখান থেকে নিতে একটু সময় লাগবে।  কত সময় লাগতে পারে তা দুপুর ২টায়ও বলতে পারলেন না ইউএনও। উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলমকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল– কেন সকালের খাবার দুপুরেও আসেনি? কী আছে খাবারের মেন্যুতে? দুটি প্রশ্নের  উত্তর একসঙ্গে দিয়ে তিনি বললেন– জানি না। এমন চিত্র মিলেছে আরও তিনটি আশ্রয়কেন্দ্রে।

রোববার বাতাসের তীব্রতা বাড়তে থাকলে আশ্রয়কেন্দ্রে বাড়তে থাকে ভিড়। তখন কথা হয় রাশেদা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, সকালে আবহাওয়া খারাপ হতে দেখে পরিবারের ৮ সদস্যকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। ঝড় থামলেও এখন আর ফিরবেন না। কারণ তাঁর থাকার ঘরটি তছনছ হয়ে গেছে বাতাসে।

শাহপরীর দ্বীপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে কথা হয় স্বেচ্ছাসেবক মিনারা বেগমের সঙ্গে। তিন দিন ধরে সেবা দিচ্ছেন তিনি। কিন্তু কী খেয়েছেন, কীভাবে  আশ্রয়কেন্দ্রে এলেন– এসব একবারের জন্যও জিজ্ঞেস করেনি কেউ। এভাবেই শত সমস্যা নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে হাজারো মানুষ। তাদের আর্তনাদ শোনার কেউ নেই টেকনাফে।

এদিকে শনিবার চট্টগ্রামের পতেঙ্গার লালদিয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ৩০০ মানুষকে শুকনো খাবার দেওয়া হয়। তবে সবাইকে ঠাসাঠাসি করে সেখানে ঘুমাতে হয়েছে। ব্যবহার করতে হয় একটি টয়লেট। রাতে খাবার পানি নিয়ে চলে কাড়াকাড়ি। গতকাল দুপুরে ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম থেকে মিয়ানমারে চলে গেছে খবর পেতেই আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়তে শুরু করেন তাঁরা।

একই চিত্র দেখা যায় পতেঙ্গা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা আশ্রয়কেন্দ্রে। সেখানে শনিবার দুই শতাধিক মানুষ আশ্রয় নেন। বেড়িবাঁধের পাশে থাকা আরেকটি ইবতেদিয়া মাদ্রাসায় আশ্রয় নেন শতাধিক মানুষ। তাঁরা রাতে চিড়া ও গুড় খেয়েই কাটান। নগরের এ দুটি আশ্রয়কেন্দ্র থেকেও গতকাল দুপুরের পর মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করেন। সন্দ্বীপের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও ফাঁকা হয়ে গেছে।

ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে শনিবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ৬ উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে ৮২ হাজার মানুষকে নিয়ে যায়। এর মধ্যে বাঁশখালী উপজেলায় ১১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪৫ হাজার ১৪৩ জন, সন্দ্বীপে ১৬২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২৯ হাজার ৮৮৫ জন, আনোয়ারায় ৩৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ হাজার ২৮০ জন, সীতাকুণ্ডে ৬২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ হাজার ২৮৯ জন, কর্ণফুলীতে ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২০০ জন এবং মিরসরাইয়ে দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬০ জন আশ্রয় নিয়েছিল।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.