অগ্নিকাণ্ডের বড় কারণ নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম

ইন্দ্রজিৎ সরকার

0
141
ফাইল ছবি

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাতাসে জলীয় বাষ্প কমলে পরিবেশ এমনিতেই তপ্ত থাকে

শুষ্ক মৌসুমে এমনিতেই দেশে অগ্নিকাণ্ডের প্রবণতা বেশি। এর মধ্যে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এ কারণে সাম্প্রতিক সময়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, অগ্নিকাণ্ডের বড় কারণ– নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যবহার। এখন বিপণিবিতানগুলোতে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে। বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এত চাপ নিতে না পারায় ঘটছে বিপর্যয়। এ ছাড়া বেশিরভাগ স্থানে নেই অগ্নিনিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে সচেতনতা বাড়ানো এবং প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
কিছু দিন ধরে ঢাকাসহ সারাদেশে একের পর এক অগ্নিকাণ্ড ঘটেই চলেছে। সোমবার ঢাকায় পাঁচটিসহ সারাদেশে অন্তত ২৩টি আগুনের ঘটনা ঘটে। এর আগে গত শনিবার ঢাকার নিউ সুপারমার্কেটে আগুন লাগে। এতে আড়াইশর বেশি দোকান পুড়ে যায়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে নবাবপুরে টিনশেড গুদামে আগুন লাগে। ৪ এপ্রিল ভোরে গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনে পাঁচ মার্কেটের প্রায় পাঁচ হাজার দোকান ভস্মীভূত হয়। ক্ষতি হয় দেড় হাজার কোটি টাকার।

ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান (অব.) বলেন, আমাদের বাসা-অফিস-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক তারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিম্নমানের হয়। উচ্চ তাপ ও অতিরিক্ত চাপে এগুলো থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হচ্ছে। কোনো কোনো সময় সিলিংয়ের ভেতর দিয়ে তার নেওয়া হয়, তাপে অনেক সময় তা গলে যায়। ইউপিএসসহ নানারকম বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যবহার বেড়েছে। তবে সেগুলো যথাযথভাবে দেখভাল বা নির্দিষ্ট সময় পরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় না। এসব থেকে বৈদ্যুতিক গোলযোগ ঘটে। আর আমাদের বেশিরভাগ বিপণিবিতান বেশ পুরোনো।

সামান্য সংস্কার করে সেগুলো চলছে। এসব জায়গায় আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। ফলে আগুন লাগলে তা বড় আকার ধারণ করে। তাছাড়া আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবন– সবখানেই এখন সিনথেটিক জিনিসপত্রের ব্যবহার বেড়েছে। এগুলো দাহ্যবস্তু হওয়ায় আগুন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ছে। আবার অনেক সময় অসৎ উদ্দেশ্য থেকে কোনো স্বার্থসিদ্ধির জন্যও আগুন লাগানো হয়।

অগ্নিকাণ্ড ঠেকাতে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, অগ্নিনিরাপত্তা খাতে কেউ বিনিয়োগ করতে চায় না। অথচ জীবন ও মালপত্র রক্ষায় এটি খুব জরুরি। বিপণিবিতান বা আবাসিক ভবনে আগুন নেভানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখতে হবে। নিরাপত্তা কর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে, মাঝেমধ্যেই অগ্নিনির্বাপণ মহড়া দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পর পর বৈদ্যুতিক সংযোগ ও সরঞ্জাম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।

ঈদের আগে বিপণিবিতানগুলোয় কেন আগুন বেশি লাগছে– এমন প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন্স শাখার সাবেক পরিচালক মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ (অব.) বলেন, বিপণিবিতানগুলোয় বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে। বৈদ্যুতিক তারের যে কপার কন্ডাকটর, নির্দিষ্ট মাত্রা পেরিয়ে গেলে তা আর চাপ নিতে পারে না। ফলে এক সময় শর্টসার্কিট হয়। বিপণিবিতানগুলোয় বৈদ্যুতিক সংযোগের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে। এখন সেখানে বৈদ্যুতিক আলোর সাজসজ্জা বেশি। দোকানে বিশেষ সজ্জা করতে গিয়ে অনেক সময় দেয়াল ফুটো করতে গিয়ে বিদ্যুতের তার ছিদ্র বা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার মার্কেটের ভেতর রেস্তোরাঁয় রান্না হয়। এ কারণে তাপ সৃষ্টি হয়। আগুনের স্ফুলিঙ্গ থেকে কখনও কখনও অগ্নিকাণ্ড ঘটছে।

সাবেক এ কর্মকর্তা বলেন,  দেশে এখন তাপপ্রবাহ চলছে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৭৫ থেকে ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে। ফলে সবকিছু তপ্ত হয়ে আগুন লাগার উপযোগী হয়ে আছে। এসব ঘটনা এড়াতে সচেতন থাকতে হবে। ব্যবহার করতে হবে উন্নতমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম। পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে। আগুন শনাক্তরণ যন্ত্র ও অ্যালার্মের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ব্যক্তি পর্যায়ের এসব উদ্যোগের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার কার্যকর ভূমিকা থাকতে হবে।

তিনি বলেন, মার্কেটগুলোকে আগুনের ঝুঁকিমুক্ত করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি। কারণ ফায়ার সার্ভিস কোনো ব্যবস্থা নিতে গেলেই দেখা যায়, প্রভাবশালী কেউ সামনে চলে আসেন। এ ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.