১৫ মাস পরও হয়নি কমিটি

0
67
আওয়ামী লীগ

বিরোধ নিষ্পত্তি না করেই ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেওয়া হয়েছে প্রায় ১০ মাস আগে। কমিটিতে দুই পক্ষের নেতাদের পদবি দেওয়া হয়েছে।

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি দুই ভাগে বিভক্ত অন্তত চার বছর ধরে। সর্বশেষ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে এক পক্ষ থেকে সভাপতি ও অপর পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কয়েক মাস পর ৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্য কেন্দ্র ও জেলা কমিটিতে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু ১৫ মাস হতে চললেও কমিটি অনুমোদন পায়নি।

দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলকে সুসংগঠিত করার উদ্দেশ্যে হয়েছিল সর্বশেষ সম্মেলন। কর্মীদের আশা ছিল নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটির আগে দুই পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তি হবে। কিন্তু বিরোধ নিষ্পত্তি না করেই ৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেওয়া হয়েছে প্রায় ১০ মাস আগে। কমিটিতে দুই পক্ষের প্রায় সমানসংখ্যক নেতাদের পদ-পদবি দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজ্জামেল হোসাইনকে সভাপতি ও প্রিয়তোষ বিশ্বাসকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এর আগের কমিটিতে মোজ্জামেল হোসাইন ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আর প্রিয়তোষ বিশ্বাস ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। এ দুজনের নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষিত ত্রিবার্ষিক কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পর এক বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন মিলছে না।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রস্তাবিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওকত উছমান বলেন, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৯ সালে। তাঁদের ইচ্ছা ছিল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইউনিয়নগুলোতে সম্মেলন করে নতুন করে কমিটি করা। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন না হওয়ায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ সারা দেশে সম্মেলন করে নতুন কমিটি করেছে। কিন্তু ধোবাউড়ায় এখনো বিরোধ রয়ে গেছে। বিরোধ নিষ্পত্তি না হলে নির্বাচনে একসঙ্গে কাজ করা কঠিন হয়ে যাবে।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ধোবাউড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের বিরোধ সৃষ্টি হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাধারণ সম্পাদক প্রিয়তোষ বিশ্বাস। নির্বাচনে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে (স্বতন্ত্র) নির্বাচন করেন উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডেভিড রানা চিসিম। নির্বাচনে ডেভিড রানা চিসিম জয়ী হন।

ডেভিড রানা সভাপতি পক্ষের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। এর পর থেকে দুই পক্ষের বিরোধ শুরু। বিরোধে দলীয় সব কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করা হয়। প্রস্তাবিত কমিটিতে ডেভিড রানাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।

বিরোধের বিষয়ে প্রিয়তোষ বিশ্বাস বলেন, ‘বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। পরে বিরোধপূর্ণ দুই পক্ষের নেতাদের রেখেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে কেন্দ্র ও জেলা কমিটিতে জমা দেওয়া হয়েছে।’

ডেভিড রানা বলেন, হয়তো কিছু মতবিরোধ রয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি দুই অংশের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে হয়েছে। এ ছাড়া গত ১১ মার্চ ময়মনসিংহে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় সবাই ঐক্যবদ্ধভাবেই অংশ নিয়েছেন।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলমের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এহতেশামুল আলম বলেছিলেন, ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে। দলের মধ্যে বিরোধ থাকলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.