১২ কিলোমিটার চালিয়ে আসার পর কেন ট্রেনে আগুনের খবর পান চালক

0
123
আগুনে পুড়েছে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটির তিনটি বগি। আগুন লাগার পর আজ ভোরে তেজগাঁও রেলস্টেশনে ট্রেনটি থামানো হয়

নেত্রকোনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভোররাতে থেমেছিল ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনে। সেখানেই ট্রেনের বগিতে আগুন দিয়ে দুর্বৃত্তরা নেমে যায় বলে ধারণা তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের। তবে চালক ট্রেনে আগুন লাগার খবর পেয়েছিলেন সেখান থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আসার পর তেজগাঁও স্টেশনে পৌঁছে।

আন্তনগর ট্রেনটিতে আগুনের এ ঘটনায় দগ্ধ হয়ে এক মা ও তাঁর শিশুসন্তানসহ চারজন নিহত হয়েছেন। আগুনের খবর পেয়ে চালক ট্রেনটি থামালে হয়তো প্রাণহানির এ ঘটনা এড়ানো যেত বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন। কেন তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেনে আগুনের খবর পেলেন না, সেটি এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

ট্রেনে আগুনের এ ঘটনায় আহত হয়েছেন নুরুল হক আবদুল কাদের নামের এক ব্যক্তি। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি যে বগিতে ছিলেন, সেই বগিতেই আগুনের সূত্রপাত হয় বলে দাবি করেন তিনি।

নুরুল হকের ভাষ্য, বিমানবন্দর স্টেশন পার হয়ে বনানীর কাছাকাছি এসে আগুন দেখতে পান। তখন নিরাপত্তাকর্মীদের পোশাক পরা কয়েকজন অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নিয়ে আসেন। কিছুক্ষণ পরই দেখা যায় চারপাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। তখন ট্রেন অনেক গতিতে চলছিল। দরজা খুলে গেটের কাছে গিয়ে দাঁড়ান তিনি। ধোঁয়ার কারণে তিনি নিশ্বাস নিতে পারছিলেন না। তেজগাঁও স্টেশনের কাছাকাছি আসার পর তিনি ট্রেন থেকে লাফ দেন।

কয়েক ঘণ্টা আগেও হয়তো ট্রেনের বগিটি ছিল গল্পে-কথায় সরগরম। ভোরের দিকে কেউ হয়তো চোখ বুজে জিরিয়ে নিচ্ছিলেন। আর এখন চারপাশে ধ্বংসের চিহ্ন নিয়ে থমকে আছে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস
কয়েক ঘণ্টা আগেও হয়তো ট্রেনের বগিটি ছিল গল্পে-কথায় সরগরম। ভোরের দিকে কেউ হয়তো চোখ বুজে জিরিয়ে নিচ্ছিলেন। আর এখন চারপাশে ধ্বংসের চিহ্ন নিয়ে থমকে আছে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস

কেন এমন হলো জানতে চাইলে রেলওয়ে জেলা ঢাকার পুলিশ সুপার (এসপি) আনোয়ার হোসেন বলেন, বগির সুপারভাইজারের কাছে ট্রেনের পরিচালক ও চালকের মুঠোফোন নম্বর ছিল না। এ কারণে তিনি আগুন লাগার তথ্য তাঁদের জানাতে পারেননি। বিষয়টি আরও বিস্তারিত জানার জন্য চালকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন পুলিশ সুপার।

নেত্রকোনা থেকে ছেড়ে আসা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক ছিলেন দিলীপ কুমার মণ্ডল। তিনি ১০ বছর ধরে লোকোমাস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান। দিলীপ কুমার বলেন, ট্রেনের ইঞ্জিনের দায়িত্বে থাকেন তিনি। বগিতে আগুন লাগলে সেই তথ্য তাঁকে না জানালে সেটি চালকের আসনে বসে বোঝা প্রায় অসম্ভব। তেজগাঁও রেলস্টেশনে আসার পর তাঁকে বিপজ্জনক পরিস্থিতির কথা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন থামানো হয়।

 ওই ট্রেনের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন খালেদ মোশারফ। তিনি জানান, ট্রেনে ১৪টি বগি ছিল। তিনি ছিলেন একেবারে শেষ বগিতে। আগুন লাগে সামনের দিক থেকে ৬ নম্বর বগিতে। আর পেছন থেকে ৮ নম্বর বগিতে। তেজগাঁও রেলস্টেশনে প্রবেশ করার সময় সিগন্যাল অনুকূলে আছে কি না, তা পরীক্ষা করছিলেন তিনি। এ সময় তিনি দেখতে পান ট্রেনের সামনের দিকে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ট্রেনের চালককে মুঠোফোনে বিপজ্জনক সংকেত দেন। তখনই ট্রেন থামানো হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.