সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা যাচাই-বাছাই ছাড়া প্রকাশ না করতে বিআরটিএর চিঠি

0
111
বিআরটিএ

সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের পরিসংখ্যান যাচাই-বাছাই ছাড়া প্রকাশ না করতে বেসরকারি সংগঠনগুলোকে চিঠি দিয়েছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। নিয়ন্ত্রক এই সংস্থার ভাষ্য, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের পরিসংখ্যান একেক প্রতিষ্ঠানের একেক রকম, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।

আগে পুলিশের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সড়কে দুর্ঘটনা, আহত এবং নিহতের সংখ্যা প্রকাশ করত বিআরটিএ, যা বেসরকারি সংগঠনগুলোর প্রকাশিত পরিসংখ্যানের তুলনায় অনেক কম। চলতি বছরের শুরু থেকে বিভাগীয় কার্যালয়ের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করেছে বিআরটিএ।

নিয়ন্ত্রক এই সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত মার্চ মাসে সারাদেশে ৩৮৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪১৫ জন। আহত হয়েছেন ৬৮৮ জন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মার্চে ৪৮৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৬৪ জন নিহত এবং ১ হাজার ৯৭ জন আহত হয়েছেন। একই দিন যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ৪৮৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৩৮ জন নিহত এবং ১ হাজার ১৩৮ জন আহত হয়েছেন।

সংখ্যার এই তারতম্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে গত ৬ এপ্রিল বেসরকারি চারটি সংগঠনকে প্রথম দফায় চিঠি দেয় বিআরটিএ। রোড সেফটির নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেছেন, তাঁরা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, ৩৬২ দুর্ঘটনায় ৫০২ জন নিহত হয়েছেন। প্রতিদিন অনেক দুর্ঘটনা হিসাবের বাইরে থেকে যায়। গড়ে প্রতিদিন চারটি অপ্রকাশিত দুর্ঘটনা ধরে মার্চের ৩১ দিনে ১২৪টি দুর্ঘটনা হিসাবে আসেনি। আর প্রতিদিন গড়ে দুর্ঘটনায় আহত দু’জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ হিসাবে আরও ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে মার্চে। সাকল্যে ৫৮৬ দুর্ঘটনায় ৫৬৪ জন নিহত হয়েছেন।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেছেন, ৬ এপ্রিল দুপুরে চিঠি দিয়ে বিকেল ৪টার মধ্যে ব্যাখ্যা চায় বিআরটিএ। সময় স্বল্পতার কারণে সমিতি ওই দিন ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। তবে ব্যাখ্যা তৈরি করেছে। এর মধ্যে গতকাল বুধবার চিঠি দিয়ে যাচাই-বাছাই ছাড়া পরিসংখ্যান প্রকাশ করতে নিষেধ করেছে বিআরটিএ। বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী স্বাক্ষরিত ১১ এপ্রিলের এই চিঠিতে বলা হয়, রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যান তাৎক্ষণিক যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে করা হয়। এতে দেখা যায়, মার্চে ৩২২ দুর্ঘটনায় ৪৬০ জন নিহত এবং ১ হাজার ২৮ জন আহত হয়েছেন। শতভাগ সরেজমিন যাচাই হলে হতাহতের সংখ্যা আরও কমবে। বিভিন্ন সংগঠন একই তথ্যের ভিত্তিতে পরিসংখ্যান করলেও হতাহতের তথ্য একেক রকম।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী এবং সাইদুর রহমান– দু’জনই বলেছেন, তাঁরা সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে পরিসংখ্যান তৈরি করেন। আর বিআরটিএর হিসাবে, মার্চ মাসে ৩৮৭ দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৪১৫ জনের। তারা কীসের ভিত্তিতে এই তথ্য প্রকাশ করেছে? বিআরটিএর জনবলের প্রতিটি দুর্ঘটনা লিপিবদ্ধ করার সক্ষমতা আছে কি? পুলিশের পরিসংখ্যানের সঙ্গে বিআরটিএর তথ্যের ফারাক রয়েছে। বিআরটিএ জানিয়েছে, গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ৬৩০ দুর্ঘটনায় ৬৩৬ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশের হিসাবে এ দুই মাসে ৫৫৭ দুর্ঘটনায় ৫৪২ জন নিহত হয়েছেন।

গত ১৫ জানুয়ারি অংশীজন সভায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী দাবি করেছিলেন, সড়কে প্রতিটি মৃত্যুর তথ্য পুলিশের তালিকায় আসে। কিন্তু বিআরটিএ তথ্য প্রকাশ শুরুর পর পুলিশের প্রতিবেদনে সংখ্যার তারতম্যের বিষয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, দুর্ঘটনার কয়েক দিন পর আহত অবস্থায় কারও মৃত্যু হলে, সেই তথ্য পুলিশ মামলার অভিযোগপত্র দেওয়ার সময়ে আসে। সে কারণে তথ্যে তারতম্য হয়েছে।

বিআরটিএর সঙ্গে যাচাই-বাছাই ছাড়া তথ্য প্রকাশ না করার নির্দেশনার বিষয়ে তিনি বলেছেন, একটি সংস্থা বলছে, বছরে নাকি ১৫ হাজার মানুষ সড়কে মারা যায়। তাদের প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে যে, বাংলাদেশে বছরে ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় সড়কে। এসব অতিরঞ্জিত তথ্যে সড়ক নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে। সে কারণেই একটি একীভূত তথ্য প্রয়োজন। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে দুর্ঘটনার ডাটা সেন্টার তৈরিতে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এতে সব বিভ্রান্তি দূর হবে। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে জনসংখ্যা, যানবাহন ও সড়কের অনুপাতে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা অনেক কম। তবে সরকার চায়, সড়কে যেন একটি মৃত্যুও না হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.