স্কুল চলছে, তবে আছে ভয়-শঙ্কা

0
108
অবরোধের মধ্যে চলছে বিভিন্ন শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা। গতকাল সকালে রাজধানীর উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে

দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এখন শিক্ষাবর্ষের শেষ সময় চলছে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। কোথাও আবার শেষ সময়ের ক্লাস চলছে। কিন্তু হরতাল-অবরোধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই দুই স্তরে পড়ুয়া প্রায় তিন কোটি শিক্ষার্থীর পড়াশোনা নিয়ে একধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ভয় নিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। বিশেষ করে যানবাহনে আগুন দেওয়ায় অভিভাবকদের মধ্যে ভয় বাড়ছে।

অবরোধের কারণে ঢাকা শহর এলাকায় ও ঢাকার বাইরের শহর এলাকার কোনো কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে গেছে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে উপস্থিতি একেবারেই কম থাকায় ক্লাস হচ্ছে না। তবে ঢাকার বাইরের এবং ঢাকার মধ্যেও শ্রেণিভেদে অনেক বিদ্যালয়ে উপস্থিতিতে তেমন প্রভাব পড়েনি।

গত দুই দিনে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ২৮টি বিদ্যালয়ের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে এসব চিত্র পেয়েছেন। অনেকের মতে, এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো অসুবিধা হয়নি। তবে হরতাল-অবরোধ দীর্ঘ হলে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি বাড়তে পারে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের রুটিন দায়িত্বে থাকা পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) মো. শাহেদুল খবীর চৌধুরী বলেন, এখন পর্যন্ত ঘোষিত সময়েই ক্লাস-পরীক্ষার সিদ্ধান্ত আছে। তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

অন্যান্য বছর বার্ষিক পরীক্ষা ডিসেম্বরে নেওয়া হলেও জাতীয় নির্বাচনের কারণে এ বছর বিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক পরীক্ষা ও মূল্যায়ন (নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী) নভেম্বর মাসেই শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা বিভাগ।

কিন্তু তার আগেই হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপিসহ কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দল। ইতিমধ্যে এক দিন হরতাল ও পাঁচ দিন অবরোধ হয়েছে। আগামীকাল বুধ ও পরদিন বৃহস্পতিবারও দুই দিনের অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। সামনেও এ ধরনের কর্মসূচি আরও আসতে পারে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা আছে।

এখন পর্যন্ত ঘোষিত সময়েই ক্লাস-পরীক্ষার সিদ্ধান্ত আছে। তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের রুটিন দায়িত্বে থাকা পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) মো. শাহেদুল খবীর চৌধুরী

স্কুল চলছে, ভয় অভিভাবকদের

রাজধানীর উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা গেল, দ্বিতীয় ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। অন্যদিকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ক্লাস চলছে।

বাংলা বিষয়ের একজন শিক্ষক জানালেন, একেক দিন একাধিক শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা চলছে, যা শুরু হয়েছে রোববার থেকে।

পরীক্ষা থাকায় বকশীবাজার থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া সন্তানকে নিয়ে এসেছিলেন ব্যাংকার মো. আলমগীর হোসেন। তিনি বললেন, ভয় নিয়ে স্কুলে আসতে হয়।

আগের দিন রোববার মতিঝিলে অবস্থিত আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে জানা গেল, বিদ্যালয়ে ক্লাস হয়েছে, তবে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি খুবই কম। নবম শ্রেণির এক ছাত্র বলল, তাদের ক্লাসে ৭০ জনের মতো শিক্ষার্থী। উপস্থিত ছিল ১৫ জন। একই দিনে কাকরাইল এলাকায় উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে গেলে দুই শিক্ষক জানান, শিক্ষার্থী উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে, তাই ক্লাস হয়নি।

গতকাল সোমবার রাজধানীর হাজারীবাগ বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে দেখা গেল, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক। প্রধান শিক্ষক শেখ মোহাম্মদ ছায়িদ উল্লা বললেন, তাঁদের বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ৩১৫ জন। এর মধ্যে উপস্থিত ছিল ২৪১ জন।

ঢাকার বাইরের চিত্র

সিলেট নগরের জিন্দাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক্‌-প্রাথমিকে (শিশুশ্রেণি) মোট শিক্ষার্থী ২৭ জন। তাদের মধ্যে গতকাল উপস্থিত ছিল ১০ জন। অথচ হরতাল-অবরোধের আগে গত ১৬ অক্টোবর এই ক্লাসে উপস্থিত ছিল ২০ জন।

ওই বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রের চাচা শাকিল আহমদ বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় ভাতিজাকে তিনি বিদ্যালয়ে দিয়ে যান। কিন্তু বার্ষিক পরীক্ষার সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকলে মুশকিল হবে।

রাজশাহী নগরের লক্ষ্মীপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অষ্টম ও নবম শ্রেণির পরীক্ষা চলছে। তাতে উপস্থিতি শতভাগ। অন্যদিকে ষষ্ঠ শ্রেণির ক শাখার মোট ৫৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্লাসে উপস্থিত ছিল ৪৮ জন।

চট্টগ্রাম নগরের হামজারবাগ এলাকায় অবস্থিত রহমানিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ২ হাজার ৯৬০ জন। গতকাল সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে গিয়ে কথা হয় বিভিন্ন শ্রেণির পাঁচ শিক্ষার্থী, দুই শিক্ষক ও তিন অভিভাবকের সঙ্গে। শিক্ষকদের দাবি, তাঁরা নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন। কারণ, তাঁদের বিদ্যালয়ে আশপাশের শিক্ষার্থীরাই পড়ছে।

বরিশাল নগরের আমতলা মোড়ে এ আর এস মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টিতে পাঠদান চললেও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি তুলনামূলক কম।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রংপুর শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরের চব্বিশ হাজারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের সদরের মিরসরাই সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, কুমিল্লা নগরের নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া হাইস্কুল, ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিদ্যালয়ে তুলনামূলক উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ না দেওয়ার পরামর্শ

বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ বলেন, এই অশান্ত পরিস্থিতিতে কমবেশি সবাই দুরবস্থার মধ্যে আছে। পরীক্ষা ঘিরে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ না দিয়ে মূল বিষয়ে সংক্ষেপ করে পরীক্ষা নেওয়া যায়, যাতে তিন-চার দিনে শেষ করা যায়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.