সেই সোধির বোলিংয়েই নিউজিল্যান্ডের জয়

0
123
৬ উইকেট নিয়েছেন সোধি

প্রেসবক্সের বাইরে তখন মানকাডিং নিয়ে তুমুল বিতর্ক। এক দল বলছে, হাসান মাহমুদ ঠিক কাজটাই করেছেন। অধিনায়ক লিটন দাস বরং ভুল করেছেন। ইশ সোধিকে ফিরিয়ে আনা ঠিক হয়নি। আরেক দল স্পিরিট অব ক্রিকেটের বিষয়টি আলোচনায় টেনে আনলেন। ধারাভাষ্যকার মাইক হেইসম্যান স্পিরিট অব ক্রিকেটে বিশ্বাসী। ব্যাটসম্যানকে সতর্ক না করে মানকাডিং করায় তিনি বেশ বিরক্ত হয়েছিলেন। তবে সোধিকে আবার ফিরিয়ে আনায় খুশিও হয়েছেন।

যেই সোধিকে নিয়ে কথা হচ্ছে, তাঁকে বাংলাদেশ দল নন স্ট্রাইক প্রান্তে রানআউট করার পর শুধু ফিরিয়ে আনেনি, বুকে টেনে নিয়েছে হাসিমুখে। ১৭ রানে অপরাজিত থাকা সেই সোধি ফিরে এসে আরও ১৮ রান যোগ করেন, নিউজিল্যান্ড যোগ করে আরও ৩০। তাতে নিউজিল্যান্ডের রানটা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫৪ রানে।

দারুণ খেলতে থাকা তামিম–মাহমুদউল্লাহ উইকেট ছুঁড়ে এসেছেন
দারুণ খেলতে থাকা তামিম–মাহমুদউল্লাহ উইকেট ছুঁড়ে এসেছেন

এরপর যে সোধিকে বুকে টেনে নিয়েছে, সেই সোধির ঘূর্ণিতেই বাংলাদেশের ভরাডুবি। বাংলাদেশের রান তাড়ায় সোধির নিলেন ৬ উইকেট। ১০ ওভারে মাত্র ৩৯ রান দিয়েছেন এই লেগ স্পিনার। যা ওয়ানডেতে কিউই স্পিনারদের সেরা বোলিং। এমন বোলিংয়ের পর যা হওয়ার ঠিক তা-ই হয়েছে। বাংলাদেশ ৪১.১ ওভারে ১৬৮ রানে অলআউট। ৮৬ রানের বড় জয়ে নিউজিল্যান্ড  এখন তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।

অথচ লক্ষ্যটা যখন ২৫৪, তখন যেমন শুরুর আশায় থাকে দলগুলো, ঠিক তেমন শুরুই পেয়েছে বাংলাদেশ দল। লিটন দাস কাইল জেমিসনের বলে দলীয় ১৯ রানের সময় ৬ রান করে আউট হয়েছেন। তবে  তিনে নামা তানজিম হাসানের সঙ্গে তামিম ইকবালের জুটিতে ছিল চোখ ধাঁধানো কিছু শট। কিউই পেসারদের অন দ্য আপে খেলে দুজনই রান করছিলেন স্বাচ্ছন্দ্যে। ১০ ওভারের প্রথম পাওয়ার প্লেতে আসে ৫৪ রান।

ম্যাচটা ঘুরে যায় পাওয়ার প্লের পরেই ১১তম ওভারে। সোধির প্রথম ওভারেই মিড অফ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন দারুণ খেলতে থাকা তানজিদ (১৬)। একই ওভারে কোনো রান না করেই সোধিকে ফিরতি ক্যাচ দেন সৌম্য সরকার। সোধির পরের ওভারে গুগলিতে ধরাশায়ী তাওহিদ হৃদয় (৪)।

সৌম্য আরও একবার ব্যর্থ
সৌম্য আরও একবার ব্যর্থ

৬০–৭০, এই ১০ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন ঘোর বিপদে, তখন মিরপুরের ভরা গ্যালারি তামিমের দিকে তাকিয়ে। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান কঠিন পথটা পাড়ি দেবেন, আরেক অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে গড়বেন জুটি। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের আরও একটি ধসের আশাবাদীরা নিশ্চয়ই এভাবেই ভাবছিলেন। কিন্তু সে কাঙ্ক্ষিত জুটি বড় হয়নি। ৫৮ বলে ৪৪ রান করে তামিম যখন খেলছিলেন স্বাচ্ছন্দ্যে, তখনই ভুলটা করেন। সোধির লেগের দিকে বেরিয়ে যাওয়া বলে গ্লাভস ছুঁইয়ে কট বিহাইন্ড হন তামিম।

প্রায় একই ভুল করেছেন মাহমুদউল্লাহও। অনিয়মিত বোলার কোল ম্যাকনকির দৃষ্টিকটু শর্ট বলটি চাইলে গ্যালারিতে পাঠাতে পারতেন মাহমুদউল্লাহ। ছেড়ে দিলে তা হতো ওয়াইড। কিন্তু হলো উল্টোটা। মাহমুদউল্লাহর পুল শটটা গেল শর্ট ফাইন লেগে থাকা অ্যালেনের হাতে। নিজের ভুলে নিজেই বিস্মিত মনে হচ্ছিল মাহমুদউল্লাহকে। ম্যাকনকির প্রতিক্রিয়া ছিল অন্যরকম। এমন বলে উইকেট পেয়ে তিনি যেন লজ্জাই পেলেন! ফেরার ম্যাচে মাহমুদউল্লাহর ৭৬ বলে ৪৯ রানের ইনিংসটি থামে এভাবেই। দুই অভিজ্ঞকে হারিয়ে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা তখন নেই বললেই চলে। মেহেদী হাসানের ১৭ ও নাসুম আহমেদের ২১ রান শুধু বাংলাদেশের ইনিংসটাকে দীর্ঘই করেছে।

প্রথম ম্যাচের মতো আজও বাংলাদেশের বোলিং ইনিংসের শুরুটা ভালো হয় মোস্তাফিজুর রহমানের সৌজন্যে। দুই কিউই ওপেনার উইল ইয়াং ও ফিন অ্যালেনকে বড় কিছু করার আগেই আউট করেন তিনি। তৃতীয় পেসার হিসেবে সুযোগ পাওয়া খালেদ আহমেদও তাঁর স্পেলের শুরুটা করেন উইকেট নিয়ে। নিজের অভিষেক ম্যাচের প্রথম ওভারেই চ্যাড বসকে শর্ট বলের ফাঁদে ফেলেন তিনি। ১৯ বলে ১৪ রান করে দারুণ শুরুর পরও ইনিংস লম্বা হয়নি তাঁর।

অভিষেকে ৩ উইকেট নিয়েছেন খালেদ
অভিষেকে ৩ উইকেট নিয়েছেন খালেদ

৩৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ড তখন বড় বিপদে। সেখান থেকে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান টম ব্লান্ডেল ও হেনরি নিকোলস ৯৫ রানের জুটি গড়ে কঠিন সময়টা পার করেন। ভালো স্ট্রাইক রেটে রান তুলে নিউজিল্যান্ডকে বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখান। দুজনের যুগলবন্দীতে ফাটল ধরান দ্বিতীয় স্পেলে বোলিং করতে আসা খালেদ। ২৭তম ওভারে খালেদের রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা বলে ব্যাট ছুঁইয়ে কট বিহাইন্ড হন নিকোলস। আউট হওয়ার আগে ৬১ বলে ৬টি চারের সৌজন্যে ৪৯ রান করেন এই বাঁহাতি। মাঝের ওভারের ওই ধাক্কার পর আর কোনো বড় জুটি গড়তে দেয়নি বাংলাদেশের বোলাররা।

রাচিন রবীন্দ্রকে আউট করে উইকেটের খাতা খোলেন মেহেদী হাসান। উইকেট পেয়েছেন হাসান মাহমুদও। ৩৪তম ওভারে দারুণ এক ইয়র্কারে ফিফটি করে এগোতে থাকা টম ব্লান্ডেলের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন হাসান। ৬৬ বল খেলে ৬৮ রান করা এই কিউই উইকেটকিপার তখন দারুণ খেলছিলেন, ৬টি চার ও ১টি ছক্কা ছিল তাঁর ১০৩ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে। কোল ম্যাকনকি, ইশ সোধি, কাইল জেমিসনদের ছোট ছোট ইনিংস নিউজিল্যান্ডের রানটাকে নিয়ে যায় আড়াই শ’র ওপারে।

সোধি আবারও ক্রিজে ফেরার পর
সোধি আবারও ক্রিজে ফেরার পর, ছবি: টুইটার

তিন লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল সোধির ইনিংসটি। বাংলাদেশ দলের পেসার হাসান ৪৫.৩ ওভারে ওভারে নন স্ট্রাইকে থাকা সোধিকে ‘মানকাডিং’ করেন। বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে মানকাডিং করলেন এই ডানহাতি পেসার। ঝিমিয়ে পড়া মিরপুর তখন জেগে ওঠে। দুই দলের ঝিমিয়ে পড়া সিরিজটিও যেন আলোচনার খোরাক পেল এতে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.