সর্বজনীন পেনশনের জন্য কর্তৃপক্ষ গঠন, সুবিধা পাবেন না সরকারি কর্মচারীরা

0
117
সরকার

আইন অনুযায়ী, সরকার যতক্ষণ এটিকে সব নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন ঐচ্ছিক থাকবে। সর্বজনীন পেনশনে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সী সব বাংলাদেশি নাগরিক অংশ নিতে পারবেন। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরাও বিশেষ বিবেচনায় সুযোগ পাবেন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরাও অংশ নিতে পারবেন। তবে আপাতত সরকারি ও আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতাবহির্ভূত থাকবেন।

বর্তমানে শুধু সরকারি কর্মচারীরা অবসরের পর পেনশন-সুবিধা পান। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় তাঁদের আওতাবহির্ভূত রাখা হলেও আইনে বলা হয়েছে, সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতিতে সরকারি অথবা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের চাঁদার অংশ জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে। তবে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত সরকারি ও আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত থাকবেন না।

সবার জন্য পেনশন চালু করার বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে অর্থমন্ত্রীরা প্রতিবারই বাজেটে এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা’ চালু করার বিষয়ে একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে অর্থ বিভাগ।

সেই ধারাবাহিকতায় গত ২২ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল ২০২২ জাতীয় সংসদে তোলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিলটি পাস হওয়ার পর পেনশন ব্যবস্থা চালু করার আইনি ভিত্তি তৈরি হয়।

আইনে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় ১৮ বছর বা তার বেশি বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সী সব বাংলাদেশি নাগরিক অংশ নিতে পারবেন। বিশেষ বিবেচনায় পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা প্রক্রিয়াটির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন। মাসিক পেনশন-সুবিধা পেতে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর চাঁদাদাতাকে ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে।

এতে বলা হয়, চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন পাবেন। একজন পেনশনার আজীবন পেনশন-সুবিধা পাবেন। পেনশনে থাকাকালে ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে পেনশনার মারা গেলে অবশিষ্ট সময়কালের জন্য মাসিক পেনশন পাবেন তাঁর নমিনি। এ ক্ষেত্রে মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত যে অর্থ পেতেন, সেই অর্থ নমিনি পাবেন বলে আইনে উল্লেখ আছে।

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় মাসিক সর্বনিম্ন চাঁদার হার কত হবে, তা নির্ধারণ করবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। তবে মাসিক চাঁদা দিতে দেরি হলে ফিসহ বকেয়া অর্থ পরিশোধ করে পেনশন হিসাব সচল রাখার সুযোগ পাবেন পেনশনাররা। এমনকি পেনশন তহবিলে জমা হওয়া অর্থ উত্তোলনের প্রয়োজন হলে চাঁদাদাতা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ ঋণ নিতে পারবেন। এ জন্য নির্ধারিত ফি দিতে হবে। ফিসহ পরিশোধিত অর্থ চাঁদাদাতার নিজ হিসাবেই জমা হবে। প্রত্যেক চাঁদাদাতার জন্য একটি পৃথক ও স্বতন্ত্র পেনশন হিসাব থাকবে।

আইনে বলা হয়েছে, পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে। এতে কর রেয়াত থাকবে। এ ছাড়া মাসিক পেনশন বাবদ পাওয়া অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে।

আইনে বলা হয়েছে, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য থাকবে। আর ১৬ সদস্যের একটি পেনশন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হবে। এই পর্ষদের চেয়ারম্যান হবেন অর্থমন্ত্রী।

এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, অর্থ বিভাগের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি, এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি, উইমেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এই কর্তৃপক্ষের সদস্য হবেন। পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসচিব হবেন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.