সংগ্রহশালা রবিউলের ‘মুদ্রাগুণ’

0
82

দাস কেনাবেচার মুদ্রা ‘স্লেভ ব্রেসলেট মানি’, চায়ের তৈরি ‘টি ব্রিক মানি’; কী নেই রবিউল ইসলামের সংগ্রহে! আকারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও ক্ষুদ্র; মানে দামি ও কম দামি ছাড়াও আড়াই হাজার বছর আগের বিনিময় প্রথার নানা ধাতব মুদ্রার বিশাল সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন তিনি। স্কুলজীবনের যে আগ্রহ সবার চোখে ‘মুদ্রাদোষ’ ছিল, এখন তা-ই রবিউলকে গুণান্বিত করেছে। বিবেচিত হচ্ছে ‘মুদ্রাগুণ’ হিসেবে।

খুলনা নগরীর গোবরচাকা এলাকার রবিউল ইসলাম আশির দশকে নগরীর সেন্ট যোসেফস স্কুলে পড়ার সময় শখের বশে ডাকটিকিট সংগ্রহ করতেন। পরে ২০০০ সাল থেকে ব্যাংক নোট, সোনা-রুপাসহ ধাতব মুদ্রা, বিভিন্ন দেশের কৃষ্টি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষিকাজ ও বন্যপ্রাণী তুলে ধরা নোট, হাইব্রিড পলিমার নোট, ছিদ্র মুদ্রা সংগ্রহ তাঁর নেশায় পরিণত হয়। বাগেরহাটের মোংলায় একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরির এ নির্বাহী পরিচালক চাকরিজীবনের পাশাপাশি গত ২৩ বছরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ১২ হাজারের বেশি কয়েন ও ব্যাংক নোট জোগাড় করেছেন। সংগ্রহে রয়েছে আগে দেশ ছিল এখন নেই অথবা নাম পরিবর্তন হয়েছে– এমন তিন শতাধিক দেশের প্রায় ৪ হাজার ৬০০টি ব্যাংক নোট। ৪০০টি বিলুপ্ত দেশ ও সাম্রাজ্যের প্রায় ৭ হাজার ৭০০ কয়েন জোগাড় করেছেন। পানামা বাদে বর্তমান বিশ্বের সব দেশের ব্যাংক নোট ও কয়েনের বিশাল সাম্রাজ্য গড়েছেন রবিউল। বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ, পরিচিতদের মাধ্যমে এবং ইউরোপ-আমেরিকার বড় বড় ডিলার থেকে দুষ্প্রাপ্য এসব মুদ্রা সংগ্রহ করেছেন তিনি।

আড়াই হাজার বছর আগের যেসব সাম্রাজ্য ছিল, সেগুলোর ধাতব মুদ্রার পাশাপাশি বাংলার সুলতান, মোগল, ব্রিটিশ শাসন, পাকিস্তান আমল ও স্বাধীন বাংলাদেশের সব ধরনের কয়েন এবং কাগজের নোট রয়েছে তাঁর কাছে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর করা ব্যাংক নোট যেমন– সিরিয়াল নম্বরের সব ডিজিট একই সংখ্যার টাকা, অর্থাৎ টাকার সিরিয়াল নম্বরের সব ১, ২ অথবা অন্য কোনো সংখ্যা; বিশেষ সিরিয়ালের নোট, ত্রুটিপূর্ণ ও নমুনা নোট; সংখ্যার ঊর্ধ্বমুখী ক্রমানুসারে, সর্বপ্রথম ও সর্বশেষ সিরিয়ালের নোট; বাংলাদেশের সাবেক এবং বর্তমান সব কয়েন ও নোট সংগ্রহ করেছেন রবিউল। রয়েছে পলিমার ব্যাংক নোটের প্রায় ৪০০ ধরন, ১ মূল্যমানের (১ টাকা, ১ ডলার) বিভিন্ন দেশের প্রায় ৯০০ নোট।

রবিউল ইসলাম

রবিউল জানান, ২০১৭ সালে মালয়েশিয়া ১৪ দশমিক ৫ ইঞ্চি লম্বা ও ৮ দশমিক ৬ ইঞ্চি চওড়া ৬০০ রিঙ্গিতের স্মারক নোট বের করে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় আকারের এ স্মারক নোট তাঁর সংগ্রহে রয়েছে। একইভাবে ২০১০ সালে আমেরিকার এক ব্যক্তির মাধ্যমে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ক্ষুদ্র রোমানিয়ার ১০ ‘বানি’ (দেশটির মুদ্রা) সংগ্রহ করেন। ১৯১৭ সালে চালু করা নোটটি ১ দশমিক ৭৩ ইঞ্চি লম্বা ও ১ দশমিক ৩ ইঞ্চি চওড়া। ১৯১২ সালে রাশিয়া ৫০০ রুবল মানের ব্যাংক নোট বের করে, যা ১০ দশমিক ৮৩ ইঞ্চি লম্বা ও ৫ ইঞ্চি চওড়া। প্রচলিত ব্যাংক নোটের মধ্যে এটিই এখনও সবচেয়ে বড়। সর্বোচ্চ জিম্বাবুয়ের ওয়ান হান্ড্রেড ট্রিলিয়ন ডলার এবং সর্বনিম্ন ওয়ান সেন্ট সংগ্রহকে সমৃদ্ধ করেছে বলে তিনি মনে করেন।

রবিউল ইসলাম বলেছেন, আমার কাছে ‘স্লেভ ব্রেসলেট মানি’ আছে, যা দিয়ে এক সময় দাস কেনাবেচা হতো। অদ্ভুত ধরনের বিভিন্ন কয়েন ও কড়ি আছে। চীনের ২ হাজার ২০০ বছর আগের ছুরি আকৃতির কয়েন ও ১ হাজার বছর আগের চায়ের তৈরি ‘টি ব্রিক মানি’ সংগ্রহ করেছি। দেশে অনেকে মুদ্রা সংগ্রহ করলেও আমার মতো এত বিশাল ও বিষয়ভিত্তিক সংগ্রহ কারও আছে বলে মনে হয় না।

তিনি আরও বলেন, ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রহ থেকে শখের বশে মুদ্রা সংগ্রহ করি। কারণ একটি দেশের মুদ্রার সঙ্গেই তার ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। আমাদের এ অঞ্চলে আড়াই হাজার বছর আগে চালু হওয়া কয়েন যেদিন হাতে পাই, অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করেছিল। মূলত অফিস শেষে প্রতিদিন মুদ্রা সংগ্রহ ও তা বাড়িতে সাজিয়ে রাখার কাজ করি। আমি বিষয়ভিত্তিক মুদ্রা সংগ্রহ করে থাকি। দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৬টি একক প্রদর্শনী করেছি। এসব সংগ্রহ দিয়ে নিজস্ব জাদুঘর করার ইচ্ছা রয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.