যাঁর নামে মিশে রাহুল ও শচীন, সেই রাচিন মাতালেন বিশ্বকাপ

0
98
রাচিন রবীন্দ্র। গতকাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর। ছবি: এএফপি

রাচিন রবীন্দ্র—বাংলাদেশের সমর্থকদের কাছে এই নামটা চেনা ২০২১ সাল থেকেই। সে বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে মিরপুরে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল এ ব্যাটিং অলরাউন্ডারের। আর গতকাল তো বিশ্বকাপ অভিষেকেই নামটা খোদাই করে রাখলেন!

ডেভন কনওয়ে এবং রাচিনের সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডকে ৯ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপে শুভসূচনা করেছে নিউজিল্যান্ড। ১২৩ রানের ইনিংসের পাশাপাশি বল করেও ১টি উইকেট নেওয়ায় হয়েছে ম্যাচসেরা। রাচিন একে তো ভারতীয় বংশোদ্ভূত আর বিশ্বকাপও যেহেতু ভারতে হচ্ছে তাই তাঁর নাম নিয়ে আলাদা করে আগ্রহ জাগা অস্বাভাবিক কিছু না। সংবাদকর্মীদের নিজের নামের রহস্যটা ভেঙে বলেছেনও ২৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।

‘চ্যাম্পিয়ন’ ইংল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে বিশ্বকাপ শুরু ‘রানার্সআপ’ নিউজিল্যান্ডের

ভারতের দুই কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার ও রাহুল দ্রাবিড়ের খেলার ফুটেজ দেখেছেন রাচিন রবীন্দ্র। গতকাল ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরির পেছনে দুই কিংবদন্তির খেলার ফুটেজ দেখে পাওয়া প্রেরণার কথাও জানিয়েছেন তিনি। আরও জানিয়েছেন মজার এক তথ্য। তাঁর নামের প্রথম অংশ ‘রাচিন’ একটু ভালোভাবে খেয়াল করুন—রাহুল দ্রাবিড়ের ‘রা’ এবং শচীন টেন্ডুলকারের ‘চিন’! এবার ভেতরের গল্পটা বলা যাক।

ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে নব্বই দশকে নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে পাড়ি জমিয়েছিলেন রাচিন রবীন্দ্রর বাবা রবি কৃঞ্চমূর্তি ও মা দীপা কৃঞ্চমূর্তি। রবি পেশায় সফটওয়্যার আর্কিটেক্ট হলেও এক সময় ক্লাব ক্রিকেট খেলতেন এবং খেলাটি ভালোবাসেন।

১৯৯৯ সালের ১৮ নভেম্বর রাচিন রবীন্দ্র তাঁদের ঘর আলো করে আসার পর সন্তানের নামটা রেখেছিলেন রবি কৃষ্ণমূর্তি। এখন নিশ্চয়ই দুইয়ে দু্ইয়ে চার মিলে যাচ্ছে! শুনুন রাচিন রবীন্দ্রর মুখেই। কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘বাবা-মা রাহুল দ্রাবিড় ও শচীন টেন্ডুলকারকে পছন্দ করেন। তাদের নামও পছন্দ ছিল তাদের। রাহুল থেকে “রা” এবং শচীন থেকে “চিন”। অসাধারণ দুই খেলোয়াড়। তাদের নামে নাম হওয়ায় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হয়।’

৫২ বছরের ওয়ানডে ইতিহাসে ইংল্যান্ডই প্রথম

গতকাল ইংল্যান্ডকে হারানোর পর সংবাদকর্মীদের কাছে সে কথাই জানিয়েছেন রাচিন রবীন্দ্র, ‘তারা (রাহুল দ্রাবিড় ও শচীন টেন্ডুলকার) দুজন স্পেশাল ক্রিকেটার। তাদের অনেক গল্প শুনেছি এবং খেলার প্রচুর ফুটেজ দেখেছি। বাবা-মা এবং ভারতের দুই ক্রিকেটারের প্রভাবটা যেভাবে নিজের ওপর পড়েছে তাতে ভালোই লাগে।’ রাচিন নিজের আদর্শ ক্রিকেটার বেছে নিয়েছেন এই দুই কিংবদন্তির মধ্য থেকেই, ‘অনেক ফুটেজ যেহেতু দেখেছি, শচীন টেন্ডুলকারকে আদর্শ বানিয়েছি। বাঁহাতি (ব্যাটসম্যান) হওয়ায় অন্যদেরও অনুসরণ করতে হয়েছে। ব্রায়ান লারাকে ভালোবাসি, কুমার সাঙ্গাকারাকেও।’

রাচিনের এই প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিটি অন্য কারণেও বিশেষ কিছু। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই ক্রিকেটার সেঞ্চুরিটি পেলেন ভারতের মাটিতেই, ‘সেঞ্চুরি সব সময়ই বিশেষ কিছু। তবে সেটি ভারতে করতে পারায় ভালো লাগছে। ভারতীয় শেকড়টা বরাবরই উপভোগ করি। পারিবারিক যোগসূত্রটা আমি সব সময় ধরে রাখি। বেঙ্গালুরুতে আসলেই দাদা-দাদির সঙ্গে দেখা করি।’ চার বছর আগে এই বেঙ্গালুরুতে বসেই সর্বশেষ বিশ্বকাপের ফাইনাল টিভিতে দেখেছিলেন রাচিন। তখন কে জানত, চার বছর সেই ভারতের মাটিতেই বিশ্বকাপ অভিষেকে হবেন ম্যাচসেরা!

টেন্ডুলকারের সেমিফাইনালিস্টদের তালিকায় নেই পাকিস্তান

শুধু কি ম্যাচসেরা, দারুণ এক তালিকাতেও নাম লিখিয়েছেন রাচিন। বিশ্বকাপ অভিষেকে তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে পেয়েছেন সেঞ্চুরি। ২০১১ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২২ বছর ১০৬ দিন বয়সে সেঞ্চুরি করে রেকর্ডটি এখনো ধরে রেখেছেন বিরাট কোহলি। তাঁর আগে রেকর্ডটি ছিল জিম্বাবুইয়ান কিংবদন্তি অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের।

বিশ্বকাপ অভিষেকেই স্মরণীয় এক ইনিংস খেলেছেন রাচিন রবীন্দ্র। ছবি: এএফপি

১৯৯২ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৩ বছর ৩০১ দিন বয়সে সেঞ্চুরি করেছিলেন ফ্লাওয়ার। রাচিন গতকাল সেঞ্চুরিটি করেছেন ২৩ বছর ৩২১ দিন বয়সে। এর মধ্য দিয়ে ছেলেদের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবেও সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়লেন রাচিন। আগের রেকর্ডটি নাথান অ্যাস্টলের। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ২৪ বছর ১৫২ দিন বয়সে সেঞ্চুরি করেছিলেন। প্রতিপক্ষ? এই ইংল্যান্ড-ই! ভেন্যু? এই ভারত-ই, আহমেদাবাদে!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.