মাইকিং শুরু, তবুও আশ্রয় কেন্দ্রমুখী হতে অনীহা

0
87
উপকূলের বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে প্রশাসনের মাইকিং।

উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোকা। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় ১ হাজার ১২০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চাল, বিস্কুটসহ শুকনো খাবার মজুদ রেখেছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন। এছাড়া প্রায় ১৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূলের বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে মাইকিং শুরু হয়েছে। তবে এখনও কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে যায়নি।

উপকূলের লোকজন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সতর্কতা সংকেত বাড়লে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাধ্য করা হবে। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ইতিমধ্যে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ‘অ্যালার্ট-২’ জারি করেছে। একই সঙ্গে লাইটার জাহাজগুলোকে কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু এলাকার দিকে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জেটি ও বহির্নোঙরে থাকা জাহাজগুলোকে ইঞ্জিন চালু রাখতে বলা হয়েছে যাতে তাৎক্ষণিক নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পারে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংকেতের ওপর নির্ভর করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অ্যালার্ট জারি করে থাকে। বর্তমানে বন্দর কর্তৃপক্ষ ‘অ্যালার্ট-২’ জারি করেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কতা সংকেত বাড়লে পর্যায়ক্রমে বন্দরে জাহাজ চলাচল ও পণ্য খালাস বন্ধ করে দেওয়া হবে, যাতে বন্দর জেটি, চ্যানেল, হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

এদিকে চট্টগ্রাম জেলায় ১ হাজার ৩০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে জেলা প্রশাসন। যেখানে প্রায় পাঁচ লাখ এক হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন বলে দাবি প্রশাসনের।

অন্যদিকে করপোরেশন এলাকায় ৯০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। তাদের দাবি, এসব আশ্রয় কেন্দ্রে এক লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন।

সরেজমিনে পতেঙ্গা উপকূলে গিয়ে দেখা গেছে, শুক্রবার বিকেলে সাগর তেমন উত্তাল ছিল না। স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা উচ্চ ঢেউ ছিল। যথা সময়ে লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় নিয়ে কোনো ভাবা দেখা যায়নি স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সতর্কতা সংকেত বাড়লে তারা আশ্রয় কেন্দ্রে যাবেন। এর আগে ঘর-বাড়ি ফেলে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চান না।

পতেঙ্গা আকমল আলী সড়কের জেলে পাড়ার বাসিন্দা রুপম দাশ বলেন, এখন চার নম্বর সংকেত চলছে। সতর্কতা সংকেত বাড়লে পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যাব। এখন বাসা-বাড়ি ফেলে কই যাব।’

রুমকি রানী দাশ নামের এক গৃহিনী বলেন, ‘আগে ঘূর্ণিঝড় আসুক তারপর দেখা যাবে।’

দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সালেহ আহম্মদ চৌধুরী বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে ১৫টি সাইক্লোন শেল্টার আছে। এছাড়া অনেক বহুতল ভবন আছে। দুর্যোগ হলে সাধারণ মানুষকে আশ্রয় দিতে বাড়ির মালিকদের বলা হয়েছে। এখনো লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে মাইকিং শুরু করিনি। এমনিতে লোকজনকে সতর্ক করা হচ্ছে। বিপদ সংকেত বাড়লে তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে।’

উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুল বারেক বলেন, আমার ওয়ার্ডে ১৮টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় সবধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে মাইকিং শুরু করা হবে।

সন্দ্বীপ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দ্বীপ সন্দ্বীপে উপজেলা প্রশাসন মাইকিং শুরু করলেও এখনও লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছেন না। লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক থাকলেও তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এখানে ১৬২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিপদ সংকেত বাড়লে লোকজনের আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানিয়েছেন, উপকূলীয় এলাকার কুমিরা এলাকায় শুক্রবার বিকেল থেকে যথা সময়ে লোকজনকে নিরাপদ স্থান ও আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে মাইকিং শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু লোকজনের মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার প্রতি কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। তবে বিপদ সংকেত বাড়লে লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে বাধ্য করা হবে। এখানে ৬২টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালীতে ১২২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে ৯৭ হাজার ৬০০ জন আশ্রয় নিতে পারবেন।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ পরবর্তী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিপিপি’র ৮ হাজার ৮৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, দুর্যোগ পরবর্তী ত্রাণ তৎপরতার জন্য ৬০৮ মেট্রিকটন চাল, সাড়ে ৩ মেট্রিকটন টোস্ট বিস্কুট, ৩ দশমিক ৪ মেট্রিকটন ড্রাই কেক, ৩০ হাজার প্যাকেট বক্স ওরস্যালাইন ও ৬০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুদ রাখা হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত সরঞ্জামসহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের রেসকিউ বোট ও মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, নগরীর দামপাড়ায় শাখা কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য ও সেবার জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০২৩৩৩৩৬৩০৭৩৯ জরুরি সেবা নম্বরে যোগাযোগের জন্য বলা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, দুর্যোগ মোকাবেলায় আরবান মেডিকেল টিম, আরবান ভলান্টিয়ার ও উদ্ধারকর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার, প্রয়োজনীয় যানবাহন ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ও সড়কবাতি নির্বিঘ্ন রাখার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.