মণিপুর ফের অশান্ত, সাবেক বিধায়কসহ গ্রেপ্তার ৩

0
118
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা অস্ত্র। ছবি -এনডিটিভি

ফের অশান্ত হয়ে উঠেছে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুর। কয়েক দিন বিরতির পর আবারও নতুন করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার স্থানীয় সময় বিকেলে রাজধানী ইম্ফলে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নতুন করে কারফিউ জারি করা হয়েছে রাজ্যটিতে। আগে ইম্ফলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। সোমবারের উত্তেজনার পর দুপুর ১টার পরে কারফিউ জারি করা হয়।

এদিকে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর মণিপুরের একজন সাবেক বিধায়কসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং সন্ধ্যায় বলেন, সাবেক বিধায়কসহ তিন সশস্ত্র ব্যক্তি নিউ চেকন এলাকায় দোকানদারদের দোকান বন্ধ করার হুমকি দেয়। খবর এনডিটিভির।

পুলিশ জানায়, রাজধানী ইম্ফলের নিউ চেকন এলাকায় মেইতি ও কুকি সম্প্রদায়ের কয়েকজনের মধ্যে বাজারের জায়গা নিয়ে সংঘর্ষ বাধলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দু’পক্ষের মধ্যে প্রথমে হাতাহাতি হয়। তার পরই লাঠি এবং অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে শুরু হয় সংঘর্ষ। তাতে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। বাজারের বেশ কিছু দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে এ সময়।

প্রায় এক মাস ধরে বিভিন্ন কারণে মণিপুর রাজ্যে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। দীর্ঘদিন ধরে মণিপুরের সমতলের বাসিন্দা মেইতি সম্প্রদায়ের সঙ্গে কুকি এবং নাগা জনগোষ্ঠীর নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীর বিরোধ চলছে। মেইতি সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের দাবি, তপশিলি উপজাতিদের তালিকাভুক্ত হওয়া। সম্প্রতি হাইকোর্ট মেইতি সম্প্রদায়কে তপশিলি উপজাতিভুক্তদের তালিকায় আনা যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেন। এর পরই নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য।

হাইকোর্টের নির্দেশের প্রতিবাদে ৩ মে চূড়াচাঁদপুর জেলার তোরবাঙে ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন মণিপুর’ (এটিএসইউএম) ‘আদিবাসী সংহতি পদযাত্রা’র ডাক দেয়। সেখান থেকে সহিংসতার সূত্রপাত হয়। এক সপ্তাহ ধরে চলা এ সহিংসতায় ৭০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। কয়েক কোটি রুপির সম্পত্তির ক্ষতি হয়। লাখো মানুষ ঘর ছেড়ে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিতে বাধ্য হয়।

সোমবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে ইম্ফল পশ্চিম জেলার চেকন বাজার এলাকায় মেইতি ও কুকি-নাগা জনগোষ্ঠীর মধ্যে বচসা ও হাতাহাতি শুরু হয়। পরে লাঠি ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে শুরু হয় সংঘর্ষ। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হন। এরপরই বাজারের একাধিক দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আসাম রাইফেলস আর্মি ও মনিপুর পুলিশ।

সূত্রের খবর- মাসখানেক ধরে চলা এই পরিস্থিতিতে মণিপুরে শান্তি ফেরাতে লোকচক্ষুর আড়ালে কলকাতার নাগাল্যান্ড হাউসে বৈঠক হয়েছে। নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন এনএসসিএন-আইএম নেতা উংমাতেম ভাশুমের মধ্যস্থতায় বৈঠকে বসেছিলেন যুযুধান মেইতি ও কুকি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। সল্টলেকের নাগাল্যান্ড হাউসে গত সপ্তাহের শেষে হয়েছে এই বৈঠক।

মনিপুরে মৈতই জনগোষ্ঠীর অন্যতম অভিযোগ- নাগাল্যান্ড থেকে অবৈধ খ্রিস্টান অভিবাসীরা মণিপুরে আশ্রয় নেওযায় জনবিন্যাসে পরিবর্তন আসছে। মণিপুরের সাম্প্রতিক সহিংসতায় মেইতি ও কুকিদের সঙ্গে নাগারাও জড়িয়ে পড়ে। ফলে মণিপুরের আঁচ দ্রুত নাগাল্যান্ডেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কায় মণিপুরে শান্তি ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এনএসসিএন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.