বোমা হামলা বন্ধ না হলে আলোচনা নয়

বিবিসিকে সুদানের আরএসএফ প্রধান হেমেদতি

0
105
আরএসএফ জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো ওরফে হেমেদতি

সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো ওরফে হেমেদতি বলেছেন, তাঁর সেনাদের ওপর বোমা হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আলোচনায় বসবেন না।

প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সুদানের সামরিক বাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে সংঘাত চলছে, তা থামাতে বিবাদমান দু’পক্ষকে বার বার যুদ্ধ বিরতির ঘোষণা দিয়ে শান্তি সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে আসছে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

কিন্তু সেসব আহ্বানে তেমন কাজ হচ্ছে না; বরং দেখা গেছে— দুই পক্ষ যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘাত অব্যাহত আছে।

এই সংঘাতে কয়েক শ মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। প্রাণ বাঁচাতে সুদান ছাড়ছেন বিদেশি নাগরিকরা।

এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেনারেল হেমেদতি বলেছেন, তৃতীয় দফায় তিন দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পরেও তার সেনাদের ওপর অবিরাম বোম হামলা হচ্ছে। তিনি চলমান সহিংসতার জন্য সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সুদানকে ধ্বংস করতে চাই না।’

টেলিফোনে বিবিসিকে জেনারেল হেমেদতি বলেন, তিনি আলোচনায় বসতে রাজি, তবে এজন্য যুদ্ধবিরতি মানতে হবে। শত্রুতা বন্ধ করলেই আমরা আলোচনায় বসতে পারি।

আরএসএফের প্রধান জানান, জেনারেল বুরহানের সঙ্গে তাঁর কোনো ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নেই। সুদানের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের ঘনিষ্ঠদের সরকারি চাকরিতে সুযোগ দেওয়ার জন্য বুরহানকে বিশ্বাসঘাতক আখ্যায়িত করেছেন তিনি। ২০১৯ সালে বশিরের নেতৃত্বাধীন ইসলামপন্থী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। সুদানের সেনাবাহিনী ও আরএসএফ এতে নেতৃত্ব দিয়েছিল। এর মূল নেতৃত্বে ছিলেন জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহান এবং জেনারেল হেমেদি উভয়েই।

বশিরকে উৎখাতের পর ‘সভরিন কাউন্সিল (সার্বভৌম পরিষদ) নামের একটি পরিষদ দেশটি পরিচালনা করে আসছে। সেই পরিষদের প্রেসিডেন্ট সুদানের সেনাপ্রধান জেনারেল বুরহান এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট আরএসএফের শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল হেমেদি।

সাক্ষাৎকারে বিবিসিকে হেমেদি বলেন, জেনারেল বুরহানের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত কোনো সমস্যা নেই। তবে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের ঘনিষ্টদের সঙ্গে জেনারেল বুরহানের ব্যাপক ঘনিষ্টতা এবং তাদেরকে সরকারে অন্তর্ভূক্ত করার চেষ্টার কারণে বুরহানকে এখন বিশ্বাসঘাতক মনে করেন তিনি।

রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে সুদানের ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে প্রশ্রয় দিতেন ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশির। তার শাসনামলের ৩০ বছর কঠোর ইসলামি শাসন ও শরিয়া আইন জারি ছিল সুদানে।

বিবিসিকে হেমেদি জানান, সেনাপ্রধান জেনারেল বুরহানও ওমর আল বশিরের পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন।দুর্ভাগ্যবশত, বুরহানকে চালাচ্ছে কট্টরপন্থী ইসলামী গোষ্ঠীগুলো। তিনি তাদের স্বার্থকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন।

বিবিসিকে হেমেদি বলেন, ‘আমি বেসামরিক সরকারের অপেক্ষায় আছি, যেটি একটি সম্পূর্ণ বেসামরিক সরকার হবে। আমার নীতি এটাই।’

যুদ্ধরত সেনাসদস্যদের উদ্দেশে জেনারেল হেমেদি বলেন, ‘আরএসএফ সদস্যরা সেনাবাহিনীর শত্রু ছিল না। সংকটকালে দেশকে রক্ষায় সেনাবাহিনী ও আরএসএফ কাঁধে কাঁধ লিয়ে লড়াই করেছে।’

‘আমরা আপনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করব না। দয়া করে আপনারা নিজ নিজ ডিভিশনে চলে যান, আমরা আপনাদের সঙ্গে লড়াই করব না,’ সেনাসদস্যদের বলেন হেমেদি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.