বিশ্বজুড়ে গুপ্তচরবৃত্তির ছায়াযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র-চীন

0
120
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পতাকা

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চীনের গুপ্তচর বেলুন যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশের ওপর চক্কর দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এটি শনাক্ত ও ধ্বংস করার পর মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানতে পারে, এ ঘটনায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দেশটির শীর্ষ সামরিক জেনারেলদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় বেলুনটি পৌঁছার আগে তাঁকে কিছুই জানাননি তারা। জিনপিং গুপ্তচর বেলুনের বিরোধী না হলেও তাঁকে না জানানোয় ক্ষুব্ধ হন তিনি। এমনটাই মনে করছেন মার্কিন গোয়েন্দারা। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।

বেলুনের ওই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে অত্যন্ত গোপনীয় পাল্টাপাল্টি গুপ্তচর প্রতিযোগিতাই নির্দেশ করে। এটি চীনের গুপ্তচরবৃত্তির বড় পরিকল্পনার ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। চীনের সামরিক ও প্রযুক্তিগত উত্থান ঠেকাতে ওয়াশিংটনের গুপ্তচরবৃত্তি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কৌশলের অংশ। কারণ, এরই মধ্যে দেশটির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে চীন। চীনের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাহসী পদক্ষেপ জিনপিংয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তিনি তাঁর বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আরও সক্রিয় করেছেন।

আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, জিনপিং তাইওয়ানের বিষয়ে তাঁর উদ্দেশ্য পূরণে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে গুপ্তচর নিয়োগের চেষ্টা করছে চীন। ফলে তাদের শনাক্তে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অনুসন্ধান জোরদার করেছে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। এরই মধ্যে গোয়েন্দারা গত ১২ মাসে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে চীনা নাগরিকদের অন্তত ১২টি অনুপ্রবেশ শনাক্ত করেছে।

নিউইয়র্ক টাইমস

সিআইএ ও পেন্টাগনের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা চীনে গুপ্তচরবৃত্তির ওপর দৃষ্টি দিতে নতুন কেন্দ্র স্থাপন করেছে। চীনের উপকূলে স্পাই প্লেন ব্যবহার করাসহ ইলেকট্রনিক যোগাযোগ ঠেকাতে তাদের ক্ষমতা বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

স্নায়ুযুদ্ধের সময় আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিযোগিতার চেয়ে চীনের সঙ্গে গুপ্তচর দ্বন্দ্ব আরও ব্যাপক। এফবিআই পরিচালক ক্রিস্টোফার রে বলেন, ‘চীনের গোয়েন্দা পরিষেবা যুক্তরাষ্ট্রের প্রজন্মের জন্য চ্যালেঞ্জ।’

এদিকে, নিজেদের প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বে নজরদারি বাড়াতে চাইছে বেইজিং। উভয় দেশই তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি বিকাশের জন্য মরিয়া। অবশ্য চীন এটিকে অন্যভাবে দেখে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেছেন, চীনের নজরদারির তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র এক নম্বরে রয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম গুপ্তচর নেটওয়ার্ক বেইজিংয়ের।

ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য চীনা এজেন্সিগুলো চেষ্টা চালাচ্ছে। এ নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তারা আগের চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। তারা বলেছেন, চীনের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মার্কিন সরকারের পাশাপাশি প্রযুক্তি কোম্পানি ও প্রতিরক্ষা শিল্পে এজেন্ট নিয়োগের চেষ্টা করছে।

এদিকে কী কারণে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল লি শ্যাংফুকে দুর্নীতির জন্য তদন্তের মুখোমুখি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলো, সে বিষয়ে এখন তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

সাবেক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সফটওয়্যার রয়েছে। এই প্রযুক্তি মুখ চিনতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের গতি শনাক্ত করতে পারে। ছদ্মবেশ ধারণ করলেও কাজ হয় না। বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যাতে তথ্য পেতে না পারে, সে জন্য জিনপিং মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক যোগাযোগের ব্যবহার সীমিত করেছেন। তাঁর সরকারের কর্মকর্তারা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করেন ঠিকই, কিন্তু তা থেকে তথ্য পাওয়া কঠিন; সেই প্রযুক্তি যুক্ত করেছে চীন।

যুক্তরাষ্ট্রও সতর্ক। চীনে ভ্রমণকারী দেশটির কর্মকর্তাদের সরকারি গোপনীয়তা ফাঁস এড়াতে তাদের ফোন, ল্যাপটপসহ ব্যবহৃত ডিভাইসগুলো বাড়িতে রেখে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চীনবিষয়ক সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা বিশ্লেষক ও জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির সিনিয়র ফেলো ডেনিস ওয়াইল্ডার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তারা কী করছেন, সেই উদ্দেশ্য বোঝাই হলো চীনের গোয়েন্দাদের প্রধান অগ্রাধিকার।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.