বিরল ও বিপুল লোকসানে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক

0
99
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ছবি: রয়টার্স

বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ। ইতিমধ্যে ফেডের ক্ষতি ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। লোকসানের পরিমাণ ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ফেডারেল রিজার্ভ বন্ড থেকে যে সুদ আয় করে থাকে, এখন তার চেয়ে বেশি সুদ তাকে পরিশোধ করতে হচ্ছে। পরিস্থিতি কোথায় যাবে, তা নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা থাকলেও কোনো কোনো পর্যবেক্ষক বিশ্বাস করেন, ফেডের লোকসানের পরিমাণ কমার আগে বরং তা দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ বিষয়ে ফেডের সাবেক কর্মকর্তা ও বর্তমানে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক উইলিয়াম ইংলিশের সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁর ভাষ্য, ফেডের লোকসানের পরিমাণ ২০২৫ সালের মধ্যে ২০০ বিলিয়ন বা ২০ হাজার কোটি ডলারের উঠে যেতে পারে।

ভবিষ্যতে সরকারের রাজস্ব বিভাগকে মুনাফা দিতে ফেডকে যে পরিমাণ অর্থ আয় করতে হবে, সেটা তারা করতে পারবে না বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। কোম্পানির ব্যালান্স শিটে যাকে বলা হয় ডেফার্ড অ্যাসেট। তবে ফেডের এভাবে লোকসানের মুখে পড়া বিরল ঘটনা।

লোকসান হলেও নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে ফেড সজাগ। তারা জানিয়েছে, মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা বা লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে এই লোকসান বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।

তবে ফেডের এই লোকসানের বিষয়টি বিস্ময়কর নয় বলেই মনে করছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সংবাদে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের মার্চ থেকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে তারা যেমন আগ্রাসীভাবে নীতি সুদহার বাড়িয়েছে, তাতে এটা হওয়ারই কথা। মূল্যস্ফীতির চাপ এখন কমে আসছে। অনেকেই ধারণা করছেন, ফেড আর নীতি সুদহার বাড়াবে না অথবা সর্বোচ্চ সুদহারের কাছাকাছি চলে গেছে।

করোনাভাইরাসজনিত মহামারির সময় থেকে ফেড আগ্রাসীভাবে বন্ড কিনেছে। মূলত সুদহার কম রেখে অর্থনীতির পালে হাওয়া দিতে তারা তখন এভাবে বন্ড কেনে। এ প্রক্রিয়া ‘কোয়ান্টিটেটিভ ইজিং’ নামে পরিচিত, যার মাধ্যমে আর্থিক ব্যবস্থায় বিপুল অর্থ সঞ্চারিত হয়েছে। ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের পক্ষে ঋণ করাও সহজ হয়েছে।

কিন্তু গত এক বছরে ফেড এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি ডলারের ট্রেজারি ও মর্টগেজ বন্ড বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। তারা আরও বন্ড বিক্রি করবে বলেও জানিয়েছে। ফেড যখন বন্ড বিক্রি করে দেয়, তখন তারা বাজার থেকে অর্থ গ্রহণ করে। এ কারণে বাজারে তারল্যসংকট হয়। তারা যখন বাজার থেকে অর্থ তুলে নেয়, তখন সুদ পরিশোধের পরিমাণও কমে যায়।

ফেডারেল রিজার্ভ মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আমানত ও রিভার্স রেপোর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে। সে কারণে ফেডকে ব্যাংক ও অর্থ ব্যবস্থাপনাকারীদের সুদ পরিশোধ করতে হয়। তারল্য কমে গেলে ফেডের সুদ পরিশোধের ব্যয় কমে যায়, অর্থাৎ আমানত ও রিভার্স রেপোর হার কমে যায়।

উইলিয়াম ইংলিশ আরও বলেন, ‘ধীরে ধীরে ফেডের ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে, এমনকি নীতি সুদহার বেশি থাকলেও। আমানত ও রিভার্স রেপোর হার কমছে, তবে ফেড নতুন করে যেসব সিকিউরিটিজ কিনছে, সেগুলোর সুদ বাড়ছে।’ অর্থাৎ তার ব্যয় কমলেও আয় বাড়ছে। তবে পরিস্থিতি এত অনিশ্চিত যে এ প্রক্রিয়া মোটেও মসৃণ নয়, বরং খুবই জটিলতাপূর্ণ।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকগুলোতে আমানত কমছে। গত বুধবার এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার, ২০২১ সালের শেষ ভাগের তুলনায় ১ লাখ কোটি ডলার কম। তবে রিভার্স রেপোর দৈনিক বকেয়ার পরিমাণও কমেছে, ২০২২ সালের জুনে যা ছিল দুই লাখ কোটি ডলার, গত বৃহস্পতিবার তা দেড় লাখ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। চলতি বছরের শেষার্ধে এ পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা।

গত এক দশকে ফেড সরকারের রাজস্ব বিভাগকে বিপুল অঙ্কের অর্থ জমা দিয়েছে। সেই অর্থ দিয়ে সরকারের বাজেটঘাটতি পূরণ করা হয়েছে। এখন সে লোকসানের মুখে। ফলে তার পক্ষে সরকারের রাজস্ব বিভাগকে অর্থ ফেরত দেওয়া কিছুদিন সম্ভব হবে না।

ফেডের সেন্ট লুইস শাখার সাবেক প্রধান জেমস বুলার্ড বলেন, গত এক দশকে ফেড রাজস্ব বিভাগকে যে এক লাখ কোটি ডলার দিয়েছে, তার কিছুটা রেখে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু আইনে সেই বিধান নেই।
তবে ফেড আবার আগের ধারায় ফিরবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.