ফ্রান্সে ঝিনুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাস, বেচাকেনা সাময়িকভাবে বন্ধ

0
70
ঝিনুক, ছবি: রয়টার্স

এবারের নববর্ষে ফ্রান্সে ঝিনুকের ব্যবসা মার খেয়েছে, যদিও নববর্ষ উদ্‌যাপনে ঝিনুক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ফ্রান্সের রেন শহরের ফিলিপ লে গল নামের এক বিক্রেতা এএফপিকে বলেছেন, বাজারে যত ঝিনুক তিনি নিয়ে এসেছিলেন, তার মাত্র ১০ শতাংশের মতো বিক্রি হয়েছে।

এএফপির সূত্রে টাইমস অব ইন্ডিয়া বলেছে, ফ্রান্সের ঝিনুক নিয়ে স্বাস্থ্যগত উদ্বেগ তৈরি হওয়ায় বেচাকেনা তলানিতে ঠেকেছে। ফ্রান্সের গিরোন্দ অঞ্চলের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দেখেছে, খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে মানুষ হজমের সমস্যায় পড়েছে। এর ফলে ঝিনুকের বিক্রি কমে গেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, এই রোগের জন্য দায়ী হচ্ছে নরোভাইরাস। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে প্রকৃতির ভাইরাস, যার কারণে মানুষের বমি ও ডায়রিয়া হয়। ফ্রান্সের দক্ষিণ–পশ্চিম আটলান্টিক উপকূলে ঝিনুকের মধ্যে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে।

এই পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ দ্রুত সেই অঞ্চলে ঝিনুকের চাষ ও বিক্রি বন্ধ করে দেয়। সেই সঙ্গে ক্যালভাদোস ও মাঞ্চ নামের উত্তরের আরও দুটি অঞ্চলেও পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ঝিনুক চাষ ও বিক্রয় বন্ধ করে দেওয়া হয়।

একই সঙ্গে যেসব ঝিনুক তোলা হয়ে গেছে, সেগুলো বিক্রি বন্ধ করতে এবং ক্রেতারা যেসব ঝিনুক কিনেছেন, সেগুলো ফেরত দিতে বলা হয়েছে।

বিষয়টি হলো, অতিবৃষ্টির কারণে একটি পানি পরিশোধনাগার ভেসে যাওয়ায় নোংরা পানি সাগরের পানিতে মিশে ঝিনুকের মধ্যে দূষণ ছড়িয়ে দিয়েছে।

ফ্রান্সের কর্তৃপক্ষ বলেছে, ঝিনুকের মান পুরোপুরি সন্তোষজনক হওয়ামাত্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে।

কিন্তু ঝিনুক উৎপাদনকারীদের সংগঠনের সতর্কবাণী, নিষেধাজ্ঞার কারণে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সংকট হতে যাচ্ছে। দেশটির ন্যাশনাল শেলফিশ ফার্মিং ফেডারেশনের সভাপতি লে গল বলেছেন, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে; তাঁরা ঝিনুক কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন, বিপর্যয় নেমে এসেছে।

লে গল আরও বলেন, ফ্রান্সের মাত্র ১০ শতাংশ ঝিনুক দূষণের শিকার। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে পুরো শিল্পে তার প্রভাব পড়েছে।

চাষিরা বলছেন, দূষণ ছড়িয়ে পড়ার দায় তাঁদের নয়, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের।

ফ্রান্স সরকারের সমুদ্রবিষয়ক কনিষ্ঠ মন্ত্রী হারভি বেরভিল বলেছেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হলো দূষিত পানি পরিশোধনে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিনিয়োগ। তিনি আরও বলেন, এই সাময়িক নিষেধাজ্ঞা ঝিনুক উৎপাদনকারীদের ওপর নয়, বরং তা ভাইরাসের ওপর দেওয়া হয়েছে, ঝিনুক উৎপাদনের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।

মন্ত্রী যা-ই বলুন না কেন, ফ্রান্সের ঝিনুকচাষিরা মনে করছেন, বছরের পর বছর ধরে পানি পরিশোধনে বিনিয়োগ কমে যাওয়ার শিকার হয়েছেন তাঁরা। ঝিনুক চাষি অলিভিয়ের লাবান বলেছেন, গত দুই বছরে দুবার এ রকম ঘটল, এটা নিছক কোনো ভুল নয়। বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি আরও বলেন, এভাবে চলতে পারে না।

তবে মন্ত্রী বারভিল অঙ্গীকার করেছেন, সরকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে দ্রুততার সঙ্গে পানি পরিশোধনে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করবে। সরকার স্থানীয় চাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে প্রস্তুত আছে বলেও তিনি জানান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.