প্রতি ঘনমিটারের প্রস্তাবিত দাম ৫১.১২ টাকা

0
114
ভোলার গ্যাস

ঘাটতি মেটাতে ভোলার উদ্বৃত্ত গ্যাস ঢাকাসহ আশপাশের শিল্পকারখানায় ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে সরকার। সিএনজি (সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস) আকারে ভোলার গ্যাস পরিবহন করা হবে। গ্রাহক পর্যায়ে এই গ্যাসের প্রতি ঘনমিটারের দাম প্রস্তাব করা হয়েছে ৫১ দশমিক ১২ টাকা। এই গ্যাস সিএনজি আকারে পরিবহনের সম্ভাব্যতা যাচাই কমিটির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে কার্যকর হওয়া গ্যাসের বর্ধিত দর অনুসারে শিল্প গ্রাহকদের প্রতি ঘনমিটারের দাম এখন ৩০ টাকা। এ ছাড়া সিএনজি ফিলিং স্টেশনে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম পড়ছে ৪৩ টাকা।

ভয়াবহ গ্যাস সংকটে ব্যাহত হচ্ছে শিল্প উৎপাদন। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। এমন সংকটে ভোলার গ্যাস আলোচনায় এসেছে। চাহিদা কম থাকায় ভোলার দুই ক্ষেত্রের উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেক গ্যাস তোলা হচ্ছে। এরই মধ্যে চারটি কোম্পানি সিএনজি আকারে গ্যাস পরিবহনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এগুলো হলো ইন্ট্রাকো সিএনজি দৈনিক ৫ থেকে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি), পার্কার বাংলাদেশ ২৩ দশমিক ৩৪ এমএমসিএফ, হাওলাদার বাংলাদেশ ২৬ দশমিক ৬৭ এমএমসিএফ এবং সুপার গ্যাস ৪ এমএমসিএফ গ্যাস সিএনজি আকারে পরিবহনের প্রস্তাব দিয়েছে। বিশেষভাবে রূপান্তরিত ট্রাকে সিলিন্ডারে ভরে (ক্যাসকেড প্রক্রিয়ায়) সড়কপথে অথবা বার্জে জলপথে নেওয়ার কথা জানিয়েছে আগ্রহী কোম্পানিগুলো। জানা গেছে, দৈনিক ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সিএনজিতে পরিণত করে পরিবহনের জন্য ৬০টি কম্প্রেসর এবং ২৩৮টি ক্যাসকেড ট্যাঙ্কার প্রয়োজন।

ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে পরিবহনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করে। কমিটি গত ৩১ অক্টোবর প্রতিবেদন পেট্রোবাংলায় জমা দেয়। প্রতিবেদন অনুসারে বর্তমানে ভোলায় বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৮৬ এমএমসিএফ। ভোলার গ্যাসক্ষেত্রের দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ১২০ এমএমসিএফ। উদ্বৃত্ত গ্যাসের পরিমাণ বর্তমানে ৩৪ এমএমসিএফ।

ভোলার দুই গ্যাসক্ষেত্রের মালিক বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে সক্ষমতা আরও বাড়বে।

প্রতিবেদনে প্রতি ঘনমিটার ফিড গ্যাসের মূল্য ধরা হয়েছে ২৬ টাকা, সিএনজি স্টেশনগুলোর ক্ষেত্রে ৩৫ টাকা। এই ২৬ টাকার মধ্যে উৎপাদন চার্জ ৩.১০৭৯ টাকা, এলএনজি চার্জ ১৬.৫১৬৪ টাকা, গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের ০.৯৪৯৮ টাকা, বিইআরসি গবেষণা তহবিল ০.০৩ টাকা, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল ০.৯৪১ টাকা, ট্রান্সমিশন চার্জ ০.৪৭৭৮ টাকা. ডিস্ট্রিবিউশন চার্জ ০.৮৫৩১ টাকা এবং মূল্য সংযোজন কর ৩.১২৪০ টাকা। যে কোম্পানি গ্যাস পরিবহন করবে তার মার্জিন ধরা হয়েছে ৮ টাকা। ভোলা থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ২৩৫ কিলোমিটারে পরিবহন খরচ ধরা হয়েছে ১৭.১২ টাকা। এটাও অপারেটর পাবে। দূরত্ব হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে এই খরচ কমবেশি হবে।

জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম. তামিম বলেন, সিএনজি আকারে ভোলার গ্যাস আনার পরিকল্পনা ভালো উদ্যোগ। অনেক দেশেই এখন এই পদ্ধতি ব্যবহূত হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোর পরিবহন সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সিএনজি আকারে গ্যাস পরিবহন খুব ঝুঁকিপূর্ণ।

ভোলায় গ্যাসের সন্ধানে প্রথম ভূকম্পন জরিপ চালানো হয় ১৯৮৬-৮৭ সালে। প্রথম অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয় ১৯৯৪ সালে। এরপর আরও তিনটি কূপ খনন করা হয়েছে। ২০০৯ সালের ১১ মে ভোলার শাহবাজপুর ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে বাপেক্স। দৈনিক উত্তোলন সক্ষমতা ১২ কোটি ঘনফুট হলেও বর্তমানে শাহবাজপুর ক্ষেত্র থেকে দিনে ৬.৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস তোলা হচ্ছে। একটি নতুন কূপ খোঁড়া হচ্ছে। এই গ্যাসক্ষেত্রে দেড় ট্রিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাসের মজুত রয়েছে বলে ধারণা বাপেক্সের। এর ৩৩ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত ভোলা উত্তর গ্যাসক্ষেত্রে ২.৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সক্ষমতার একটি কূপ রয়েছে। আরও কূপ খনন করা হচ্ছে। ভোলা উত্তরে ০.৬৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুত থাকতে পারে। শাহবাজপুর ক্ষেত্র থেকে বর্তমানে ভোলার দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে (২২৫ ও ৩৫ মেগাওয়াট) গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয় শিল্প ও আবাসিক গ্রাহকদেরও গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। দেশে এখন গ্যাসের চাহিদা দিনে ৩৮০ কোটি ঘনফুট। এলএনজিসহ বর্তমানে পেট্রোবাংলা দিনে ২৬৭ কোটি ঘনফুট গ্যাস দিচ্ছে।

হাসনাইন ইমতিয়াজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.