পশু কোরবানির নির্দিষ্ট স্থান এবার থাকছে না

0
92
কোরবানি পশু

পশু কোরবানির জন্য এবার সুনির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে দিচ্ছে না রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন। নগরীর সৌন্দর্য রক্ষা ও কোরবানির বর্জ্য অপসারণের সুবিধার্থে ২০১৫ সাল থেকে প্রতি ওয়ার্ডে কয়েকটি স্থান নির্দিষ্ট করে দিত সিটি করপোরেশন। পাশাপাশি বিশেষ কিছু স্থানে থাকত পশু কোরবানির সব ব্যবস্থা। নগরবাসী সেখানে পশু নিয়ে গেলে কোরবানি করে মাংস বুঝিয়ে দেওয়া হতো। এবার সেই বিশেষ স্থানও থাকছে না। অতীতে বর্জ্য রাখার জন্য পলিব্যাগ সরবরাহ করা হলেও এবার সেই উদ্যোগেও ভাটা পড়েছে। ফলে অতীতের মতো যত্রতত্র পশু কোরবানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে ভজকট তৈরির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও উভয় সিটি করপোরেশন বলছে, তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করবে।

জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতায় মিরপুরে একটি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতায় হাজারীবাগে একটি স্লটার হাউস (জবাইখানা) রয়েছে। কাপ্তানবাজারে আরেকটি নির্মাণাধীন।

রাজধানীর দুই থেকে আড়াই কোটি মানুষের মাংসের চাহিদা জোগানের জন্য প্রতিদিন যে পশু জবাই হয়, এর অন্তত ৯৫ শতাংশই হয় কাঁচাবাজার ও রাস্তাঘাটে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। আর কোরবানির সময় একসঙ্গে অসংখ্য পশু জবাইয়ের কারণে স্বল্প সময়ে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য তৈরি হয়। আগে দিনের পর দিন ওই সব বর্জ্য রাজধানীতে যত্রতত্র পড়ে থাকতেও দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাই করলে রাজধানীর পরিবেশও যেমন ভালো থাকে, তেমনি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করার কাজটিও সহজ হয়।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি নগর পরিকল্পনাবিদ শেখ ফজলে রেজা সুমন বলেন, বিশৃঙ্খল অবস্থাকে সুশৃঙ্খল করতে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানির ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। প্রথম দিকে নগরবাসী এতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলেও পরে আর সাড়া মেলেনি। এমনকি শামিয়ানা টানিয়ে যে বিশেষ প্যান্ডেল তৈরি করে দেওয়া হতো, সেখানেও নগরবাসী যাচ্ছিলেন না। এ কারণেই হয়তো সিটি করপোরেশন এ উদ্যোগ থেকে সরে এসেছে।

ফজলে রেজা সুমন আরও বলেন, পশু কোরবানির জন্য আধুনিক স্লটার হাউস নির্মাণ বেশি প্রয়োজন। এ জন্য উদ্যোগও নেওয়া  হয়েছিল। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে জায়গাও খোঁজা হয়। পরিকল্পনা ছিল, কোনো কাঁচাবাজারে পশু জবাই হবে না। স্লটার হাউসগুলোতে কসাইরা পশু জবাই করে বাজারে মাংস বিক্রি করবেন। ওই স্লটার হাউসগুলোই কোরবানির সময় নগরবাসী ব্যবহার করবেন।

তিনি বলেন, উন্নত দেশে সবাই পশু কিনে স্লটার হাউসে দিয়ে দেয়। তারা কোরবানি করে মাংস বুঝিয়ে দেয়। সিটি করপোরেশন এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

এ ব্যাপারে ডিএনসিসির মুখপাত্র মকবুল হোসেন বলেন, এবার কোনো স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া না হলেও কাউন্সিলরদের অনুরোধ করা হয়েছে, তারা যেন এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনা করে স্থান নির্ধারণ করে সেখানে পশু কোরবানি করেন। এতে বর্জ্য অপসারণ সহজ হবে। পাশাপাশি পরিবেশও ভালো থাকবে।

ডিএনসিসির ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেওয়ান আবদুল মান্নান বলেন, নির্দিষ্ট স্থানে কেউ পশু নিতে চায় না। কারণ, আমাদের একটা আবেগ আছে। অনেকে গরুটাকে গ্যারেজে রেখে তাঁর সন্তানকে দেখান। আবার আমাদের ঢাকা শহরের প্রেক্ষাপট সব জায়গা এক রকম নয়। যেসব স্থানে প্রশস্ত রাস্তা রয়েছে, সেখানে কিছু এলাকাবাসী মিলে একটি ত্রিপল টানিয়ে পশু জবাই করে। আবার স্লটার হাউস পদ্ধতিতে গেলে হয়তো লোকজন মনে করবে, তাঁর গরু পাল্টিয়ে দিয়েছে বা মাংস কম দিয়েছে। তবে মানুষ যাতে কোরবানির বর্জ্য ব্যাগে রাখতে পারে, এ জন্য ৪০ হাজার পলিব্যাগ চেয়েছিলাম। ডিএনসিসি ১৫ হাজার ব্যাগ দিয়েছে। এগুলো হাউজিং সোসাইটির মাধ্যমে বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে।

ডিএসসিসির ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আসাদুজ্জামান বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে এক হাজার করে পলিব্যাগ দেওয়া হতে পারে। পাশাপাশি ব্লিচিং পাউডারও দেওয়া হবে। তবে আমার ওয়ার্ডে রোববার পর্যন্ত সেগুলো পৌঁছেনি।

ডিএসসিসির মুখপাত্র আবু নাছের বলেন, বর্তমান মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পর কখনোই পশু কোরবানির স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। তবে নগরবাসীকে বরাবরই অনুরোধ করা হয়েছে, তাঁরা যেন বাড়ির আঙিনায় বা সুবিধাজনক স্থানে পশু কোরবানি করেন এবং নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য রাখেন। কোরবানি শেষে পানি ও ব্লিচিং পাউডার দিয়ে স্থানটা ভালো করে ধুয়ে দেন। তাহলে পরিবেশ ভালো থাকবে, বর্জ্য অপসারণও সহজ হবে।

জানা যায়, ২০১৫ সালে ঈদুল আজহার সময় রাস্তায় পশু কোরবানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তখন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পশু কোরবানির জন্য ডিএনসিসি এলাকায় ২০৮টি ও ডিএসসিসি এলাকায় ৩২৪টি স্থান নির্ধারণ করা হয়। স্থানগুলো সঠিকভাবে বাছাই না করায় অনেকেই পশু কোরবানি দিতে এসে বিড়ম্বনায় পড়েন। ২০১৯ সাল থেকে ডিএসসিসি সম্পূর্ণ স্থান নির্ধারণ বাতিল করে দেয়। ডিএনসিসি কাজটি চালিয়ে যাচ্ছিল। তারাও নগরবাসীকে নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি করতে উৎসাহী করে তুলতে পারেনি। এ অবস্থায় স্থান নির্ধারণ করা থেকে এবার সম্পূর্ণ সরে আসে দুই সিটি করপোরেশন।

অমিতোষ পাল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.