নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে ইসির নীতিমালা সাংবাদিকদের শিকলবন্দী করবে: সুজন

0
96
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)

নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্বপ্রাপ্ত গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জারি করা নীতিমালা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। আজ রোববার সুজন এ আহ্বান জানিয়ে বলেছে, নীতিমালার নির্দেশনাগুলো কার্যত সাংবাদিকদের শিকলবন্দী করবে।

সুজন এক বিবৃতিতে বলেছে, নীতিমালাটি সাংবাদিকদের নির্বাচনী তথ্য সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে। সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা না করেই এ নীতিমালা জারি করা হয়েছে; যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশীজনদের কার্যকর অংশগ্রহণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করেছে। নীতিমালাটি বাতিল করে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে হবে।

সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান ও সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের সই করা এ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নির্বাচন কমিশন ১২ এপ্রিল নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে দায়িত্বপ্রাপ্ত গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য একটি নীতিমালা জারি করে। বিভিন্ন সাংবাদিক ও নাগরিক সংগঠনের প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে নীতিমালাটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে কমিশন আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু দুই সপ্তাহ পেরোলেও এটি সংশোধন বা বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

সুজন বলেছে, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করা কমিশনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সাংবাদিকদের নির্বাচনী তথ্য সংগ্রহে সহযোগিতার লক্ষ্যে কমিশন ওই নীতিমালা জারি করেছে বলা হলেও নীতিমালার নির্দেশনাগুলো কার্যত সাংবাদিকদের শিকলবন্দী করবে।

মোটরসাইকেল সাংবাদিকদের অতিপ্রয়োজনীয় বাহন এবং এটি ব্যবহার করে সাংবাদিকেরা খবর সংগ্রহের জন্য দ্রুত যাতায়াত করতে পারেন বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। এতে আরও বলা হয়, অনেক ভোটকেন্দ্র রয়েছে, যেগুলো দুর্গম এলাকায়। সেসব কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেলই একমাত্র বাহন। সংবাদ সংগ্রহে মোটরসাইকেলের এই গুরুত্ব নির্বাচন কমিশনের জানা না থাকার কথা নয়। নির্বাচনের দিন সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারে কমিশনের নিষেধাজ্ঞার ফলে অনেক সাংবাদিক দুর্গম এলাকার ভোটকেন্দ্রে খবর সংগ্রহে যেতে পারবেন না। ফলে ওই সব এলাকার নির্বাচনের পরিস্থিতি জনগণ জানতে পারবেন না।

নীতিমালার সমালোচনা করে বিবৃতিতে বলা হয়, ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে অনুমোদনহীন কোনো ব্যক্তি প্রবেশ করতে পারেন না। তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও তথ্য সংগ্রহের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিকেরা কেন্দ্রে প্রবেশ করে ভোটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। সাংবাদিকেরা ভোটের দিনের বিভিন্ন ঘটনা জনগণের সামনে তুলে ধরেন। সাংবাদিকেরা ভোটকক্ষে ১০ মিনিটের বেশি অবস্থান করতে পারবেন না, ভোটকক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না—এ ধরনের নিয়ম জনগণের কাছে সঠিক নির্বাচনী তথ্য তুলে ধরার পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের জন্য বাধার সৃষ্টি করবে।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে সাংবাদিকদের জন্য ১২টি নির্দেশনাসংবলিত এমনই একটি নীতিমালা জারি করা হয়েছিল উল্লেখ করে সুজন বলেছে, তুলনা করলে দেখা যায়, ওই নীতিমালার নির্দেশনারগুলোর তুলনায় ২০২৩ সালের নির্দেশনাগুলো আরও কঠোর। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে একই ধরনের নির্দেশনা জারি করা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কমিশনের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক করবে বলে মনে করে সুজন।

এদিকে এই নীতিমালা সংশোধনের দাবি জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের আজ স্মারকলিপি দিয়েছে নির্বাচন কমিশনে দায়িত্বরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি)।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.