নকশিকাঁথার গ্রাম উদয়সাগর

ভবতোষ রায় মনা, ফুলছড়ি (গাইবান্ধা)

0
84
নকশিকাঁথার কারখানায় কাজ করছেন নারীকর্মীরা।

নকশিকাঁথা বানিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌরসভার উদয়সাগর গ্রামের দুই শতাধিক নারী। বিভিন্ন নকশার ঐতিহ্যবাহী এই কাঁথার জন্য গ্রামের নামই বদলে গেছে। এখন গ্রামটি ‘নকশিকাঁথাপল্লি’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। এ গ্রামের শেফালী বেগমই প্রথম নকশিকাঁথা বানিয়ে স্বাবলম্বী হন। তাঁর হাত ধরে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন গ্রামের আরও দুই শতাধিক নারী। তাঁরা বানাচ্ছেন বকুল, স্বদেশি, কার্পেট, লহরি কিংবা জামাই সোহাগী, ভরাট, জোর শামুকসহ সাধারণ কাঁথা।

কৈশোর পেরোনোর আগেই রেজাউল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয় শেফালী বেগমের। স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। সংসার জীবনে তিনি তিন ছেলেমেয়ের জননী। স্বামীর নির্দিষ্ট আয়ের উৎস না থাকায় অভাব-অনটনের মধ্যে সংসার চালানো ও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয় শেফালীকে। সংসারের টানাপোড়েনে প্রায় দিশেহারা পলাশবাড়ী পৌরসভার উদয়সাগর গ্রামের শেফালী বেগম। সেটি ২০১৮ সালের কথা। কাজের সন্ধান করতে গিয়ে পলাশবাড়ী উপজেলা বিআরডিপি অফিস থেকে গাইবান্ধা সমন্বিত পল্লি দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্পের আওতায় নকশিকাঁথা সেলাইয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নেন শেফালী। প্রশিক্ষণ শেষে ওই অফিস থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে নকশিকাঁথার কাজ শুরু করেন নিজ বাড়িতে। কিছু দিনের মধ্যে তার নকশিকাঁথার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে পলাশবাড়ী উপজেলায়। এরপর থেকে মানুষের কাছ থেকে নকশিকাঁথার অর্ডার পেতে থাকেন।

চাহিদা বাড়তে থাকায় এখন নিজেই গ্রামের দুই শতাধিক নারী নিয়ে নকশিকাঁথার একটি বিশাল কারখানা গড়ে তুলেছেন। একটি নকশিকাঁথা সেলাই করতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ দিন। এর রকমভেদে পারিশ্রমিক ৩ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা। আকর্ষণীয় ডিজাইন ও গুণগত মান ভালো হওয়ায় এখানকার নকশিকাঁথা যাচ্ছে ঢাকার আড়ং, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে। বগুড়ার এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে রপ্তানি হচ্ছে জর্ডানেও। উদয়সাগর এখন ‘নকশিপল্লী’ নামেই পরিচিতি লাভ করেছে।

নকশিকাঁথার কারিগর আজিরন বেগম বলেন, ‘বাড়ির কাজের পাশাপাশি আমি এ কাজ করি। এ কাঁথা সেলাইয়ের মজুরির টাকায় ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ও সংসারের কাজে ব্যয় করছি।’ আরেক কারিগর শাপলা আক্তার বলেন, ‘স্বামী দিনমজুরের কাজ করে যে টাকা পান, তা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলে না। শেফালী আপার কাছে নকশিকাঁথার সেলাই শিখে তাঁর কারখানাতেই কাজ করছি। এখানকার আয়ের টাকা ও স্বামীর মজুরি মিলে এখন দিন পার করতে পারছি ভালোই।’
শেফালী বেগম বলেন, ‘এ গ্রামের সব নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে নকশিকাঁথার দক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তাঁরা নকশিকাঁথার কারখানায় কাজ করার পাশাপাশি নিজেরাও একেকজন উদ্যোক্তা হতে পারেন এবং স্বাবলম্বী হতে পারেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.