ধর্মশালায় রূপকথার অপেক্ষায় সাকিবরা

0
99
অধিনায়ক সাকিব আল হাসান

দুপুরে চট সরিয়ে, বিকেলে চূড়ান্ত পরিচর্যা অবস্থায় উইকেটের চারপাশ ঘুরে কোনো একটা রহস্যের উদঘাটন করায় ব্যস্ত ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তবে কি পিচের গভীরে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের মৃত্যুফাঁদ খুঁজছিলেন তারা? পিচ তো সবার জন্যই সমান, ফাঁদটা আসলে পাততে হয়। সাকিব-হাথুরুসিংহে ইংলিশদের জন্য সে রকম একটা কিছু করার কৌশল খুঁজছিলেন। একজন বোলার বেশি খেলানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা হবে আজ সকালে উইকেট দেখার পর। এ রকম ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ সবারই জানা, বিশ্বকাপে জয়ের ছন্দ ধরে রাখতে মরিয়া বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের পর চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ধর্মশালা ছাড়তে পারলে অনুভূতিটা অন্যরকম থাকবে।

এক দিনের ক্রিকেটে বিশ্বে বাংলাদেশের জন্য অজেয় কোনো দল নেই। ইংল্যান্ড তো একেবারেই নয়। সেই ২০১০ সালে ব্রিস্টলের কাউন্টি গ্রাউন্ডের ঐতিহাসিক জয়ের পর থেকে ব্রিটেনের ক্রিকেট দলকে আর কঠিন মনে হয়নি সাকিবদের কাছে। গত ১৩ বছরে ওয়ানডেতে ইংলিশদের ১২ বার মোকাবিলা করে পাঁচবার জিতেছে বাংলাদেশ। যেখানে দুটি হলো বিশ্বকাপ ম্যাচ– ২০১১ সালে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। তবে সবচেয়ে বড় জয়টি এসেছে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে। যে পরাজয় বিশ্বকাপের লিগ পর্ব থেকে বিদায় করেছিল ইংলিশদের। সেদিনের পরাজিত অধিনায়ক ইয়ন মরগানকে সংবাদ সম্মেলনে কঠিন সময় পার করতে হয়েছিল। যদিও উনিশের বিশ্বকাপ মরগান ও তাঁর দল ইংল্যান্ড জিতেছে টুর্নামেন্টে বেশি ছক্কা মারার পরিসংখ্যানে এগিয়ে থেকে। গতকাল যখন আরেকটি বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচের প্রস্তুতি চলছিল, তখনই আইসিসির কলামিস্ট হিসেবে মিডিয়ার মুখোমুখি হলেন ইংলিশ সাবেক অধিনায়ক। তিনি বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করার পাশাপাশি আজকের ম্যাচে ভালো করার সম্ভাবনাও দেখছেন। কারণ আফগানিস্তানের বিপক্ষে একপেশে ক্রিকেট খেলে ম্যাচ জেতায় আলোচনায় আছে টাইগার বাহিনী।

ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে। উদ্বোধনী সে ম্যাচের জয়ী দল নিউজিল্যান্ড। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ৯ উইকেটে ২৮২ রান করেও উড়ে যেতে হয় চ্যাম্পিয়নদের। এক দিনের ক্রিকেটে ইংল্যান্ড গত ছয়-সাত বছরে যে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে, তা কিছুটা শিল্পে পরিণত হয়েছে। তারাই যখন কিউদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি, তখন ধরে নিতে হবে ভারত বিশ্বকাপে অনেক চমকের দেখা পাবেন দর্শক। ধর্মশালায় আজ তেমন কিছু ঘটে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ ছন্দে থাকা বাংলাদেশ সত্যিকারের ভয়ংকর দল। ইংলিশদের তা অজানা নয়। এই জানা থেকেই জশ বাটলাররা গতকাল সকাল থেকে মরিয়া হয়ে অনুশীলন করেন হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামের কন্ডিশনে ভালোভাবে মানিয়ে নিতে। আসলে এই মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটি ইংলিশদের জন্য যতটা কঠিন, বাংলাদেশের জন্য ততটাই সহজ। খেলার অভিজ্ঞতাই পার্থক্যটা গড়ে দিয়েছে। ২০১৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপ খেলা, আর দু’দিন আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপে আফগানদের হারানোর টাটকা স্মৃতির চেয়ে ভালো অভিজ্ঞতা আর কিইবা হতে পারে।

প্রথম ম্যাচে কন্ডিশন নিয়ে কিছুটা ধাঁধায় পড়েছিল টাইগার টিম ম্যানেজমেন্ট। তিন পেসার আর দুই স্পিনার খেলিয়ে সফল হলেও প্রথম দিকে চাপ তৈরি হয়েছিল। কারণ হাথুরুসিংহের ভাবনার বিপরীত ছিল উইকেটের চরিত্র। কিছুটা টার্নিং পিচ হওয়ায় সাকিব ও মিরাজ সফল ছিলেন বল হাতে। গতকাল বিকেলে ন্যারা উইকেট দেখার পর ষষ্ঠ বোলার খেলানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়ে যাওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে মাহমুদউল্লাহকে বিশ্রাম দিয়ে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে খেলাতে পারেন কোচ। প্রতিপক্ষের বোলিং লাইনআপ মাথায় রেখে ব্যাটিং লাইন বড় করার পরিকল্পনা থাকলে শেষ মেহেদীও খেলতে পারেন। টিম ম্যানেজমেন্ট অনেক ভেবে-চিন্তে এসব সিদ্ধান্ত নিতে পারছে। আবার প্রতিপক্ষের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার বেন স্টোকসের না খেলাটাও স্বস্তির। চোটের কারণে খেলছেন না ইংলিশ এ চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার। বাকিরা ঠিকই আছেন। প্রস্তুতি ম্যাচে জয়ের স্মৃতি সঙ্গী করে প্রথম জয়ের খোঁজে নামবেন জশ বাটলাররা। আর বাংলাদেশ নামবে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের স্বপ্ন চুরমার করে গুঁড়িয়ে দিতে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.