দেশের সব মহাসড়কে বিজিবি

0
105
বিজিবি

বিএনপি ও জামায়াতের তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচিতে নাশকতা ঠেকাতে শক্ত অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন। অবরোধের সময় দেশের সব মহাসড়কে টহল দেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সোমবার রাতেই বিজিবির ওই টহল শুরু হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ, র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।

সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় অবরোধ কর্মসূচিতেও বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার শঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না প্রশাসনের কর্মকর্তারা। চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে।  এ কারণে রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। চলাচল বা পণ্য পরিবহনে কোথাও বাধা দেওয়া হলে অথবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, টহলের পাশাপাশি চলছে গোয়েন্দা নজরদারি। বিশেষ করে মহাসড়ক ও রেলপথের নিরাপত্তায় বাড়তি নজর দেওয়া হয়েছে।

গুজব বা মিথ্যা তথ্য, ছবি দিয়ে কেউ যেন অস্থিতিশীলতা বা আতঙ্ক ছড়াতে না পারে সে ব্যাপারে কাজ করছে সাইবার টিম। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও নাশকতার কোনো তথ্য থাকলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করে জানানোর অনুরোধ করেছে পুলিশ সদরদপ্তর।

মঙ্গলবার থেকে টানা তিন দিন দেশব্যাপী রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথে সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। এ নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

এর আগে গত ২৮ অক্টোবর দল দুটির মহাসমাবেশের দিন ঢাকার কয়েকটি স্থান রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রাণ যায় পুলিশ সদস্যসহ দু’জনের। পরদিন তাদের হরতালকেন্দ্রিক নাশকতা ও অন্য ঘটনায় মৃত্যু হয় তিনজনের।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খঃ মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মসূচি কোনো ধ্বংসাত্মক কাজের অংশ হতে পারে না। যারা এমন কর্মসূচিতে সায় দেবেন, তাদের কথা আলাদা। যদি কেউ সায় না দেন, তাহলে তাঁর সুরক্ষা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। কেউ যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন তাহলে পুলিশ দায়িত্বের জায়গা থেকে আইন প্রয়োগ করবে। নগরবাসীকে নিরাপদ রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে।’

তিনি জানান, অবরোধে ঢাকাবাসীর জানমালের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করা হয়েছে। ডিএমপির নিরাপত্তা পরিকল্পনায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সহযোগিতা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। কারণ, প্রত্যেকের নাগরিক অধিকারের পাশাপাশি নাগরিক দায়িত্বও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘দুষ্কৃতকারীদের বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। আমাদের প্রস্তুতিও রয়েছে।’

বিএনপি-জামায়াত প্রসঙ্গে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই, তবে তারা যে নাশকতা করবে সমসাময়িক কর্মকাণ্ড তার ইঙ্গিত দেয়।’ নগরবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা আইনের প্রতি যেমন শ্রদ্ধাশীল থাকবেন, তেমনি দায়িত্বের জায়গা থেকে সবাই যেন খেয়াল রাখেন। এলাকায় নাশকতার চেষ্টা হচ্ছে কিনা, কারা নাশকতা করছে, সে ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন।’

এদিকে, ঢাকার বাইরের সব জেলার পুলিশ অবরোধ কর্মসূচিতে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সোমবার দফায় দফায় বৈঠক করে। জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হলে কোনো আপত্তি নেই। তবে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।

সড়কপথের পাশাপাশি রেলপথে যেন কেউ নাশকতা করতে না পারে সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের সহায়তায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে রেল পুলিশ (জিআরপি)।

মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান বলেন, ‘কেউ জনশৃঙ্খলায় ব্যাঘাত ঘটাতে চাইলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। পণ্য পরিবহনে কোনো সমস্যা হবে না। হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।’

পণ্যবাহী যান চলাচলে এসকর্ট

দেশের বিভিন্ন মহাসড়কের নিরাপত্তায় থাকছে হাইওয়ে পুলিশ। জেলা ও মহানগর পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে পণ্যবাহী যানচলাচল নির্বিঘ্ন করার প্রস্তুতি নিয়েছে তারা। এমনকি পণ্য নিরাপদে পৌঁছে দিতে প্রয়োজনে ‘কনভয় আকারে’ বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হবে। পণ্যবাহী যানবাহনের সামনে-পেছনে ও মাঝখানে ‘এসকর্ট’ থাকবে। হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘মহাসড়কের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে যাত্রার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো সড়কে পণ্যবাহী গাড়ির নিরাপত্তা দেওয়া হবে।’

র‍্যাবের তিন শতাধিক টহল দল

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘অবরোধে জনজীবন স্বাভাবিক রাখা, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষায় র‍্যাবের ১৫টি ব্যাটালিয়নের তিন শতাধিক টহল দল কাজ করবে। পাশাপাশি দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি চলবে। কেউ নাশকতা বা সহিংসতার চেষ্টা করলে দ্রুত শনাক্ত করে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’ বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবিলায় র‍্যাবের স্পেশাল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স রিজার্ভ রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

খন্দকার আল মঈন জানান, সিসি ক্যামেরা ও ভিডিও ফুটেজ এবং অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে সাম্প্রতিক নাশকতা ও সহিংসতায় জড়িতদের শনাক্ত করতে কাজ করছে র‌্যাব, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে স্বার্থান্বেষী মহল অনলাইনে উস্কানিমূলক বক্তব্য, মিথ্যা তথ্য বা গুজব ছড়াচ্ছে; বিভিন্ন ভিডিও ছড়িয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। র‍্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম তাদের শনাক্ত করে নজরদারি করছে।

সাহাদাত হোসেন পরশ ও ইন্দ্রজিৎ সরকার

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.