দুই দশক পর ‌‘বুড়ো’মুক্ত হচ্ছে রাজশাহী যুবলীগ

0
88

সাত বছর পর সম্মেলন হচ্ছে রাজশাহী মহানগর ও জেলা যুবলীগের। আগামী ২ সেপ্টেম্বর মহানগর যুবলীগের এবং ৩ সেপ্টেম্বর জেলা যুবলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রায় দুই দশক ধরে জেলা ও মহানগর যুবলীগের বর্তমান নেতৃত্ব বহাল রয়েছে। মাঝে একবার সম্মেলন হলেও আসতে পারেননি তরুণরা। এবার আবারও ‘বুড়ো’ নাকি তরুণরা নেতৃত্ব পাবেন, এ নিয়ে চলছে আলোচনা। এবার তরুণদের নিয়েই আলোচনা বেশি হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুবলীগের চেয়ারম্যানের নির্দেশে দিন ধার্য করে মহানগর ও জেলা যুবলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে।

মহানগর যুবলীগের নেতৃত্ব পেতে প্রায় দুই ডজন নেতা তৎপর রয়েছেন। এবার প্রার্থী হচ্ছেন না দুই মেয়াদে ২০ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করা সভাপতি রমজান আলী ও সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বাচ্চু। দলের হাইকমান্ডে তারা জীবনবৃত্তান্ত জমা দেননি। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ীও দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর আর নেতৃত্ব পাওয়ার সুযোগ নেই।

গত ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহী জেলা ও মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত নিয়েছে সংগঠনটির হাইকমান্ড। গত ১৮, ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি এই তিন দিন জীবনবৃত্তান্ত জমা নেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মহানগর যুবলীগের দুই পদের জন্য ২৮ নেতা তাদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে সভাপতি পদে ১০ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ১৮ জন।
সভাপতি পদে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মোমিন, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঠিকাদার তৌরিদ আল মাসুদ রনি, আমিনুর রহমান খান রুবেল, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিক, যুবলীগ নেতা মাহমুদ হাসান খান চৌধুরী ইতু, আশরাফুল আলম, মুখলেছুর রহমান মিলন, অ্যাডভোকেট কাওসার রহমান নাইজার, ইউসুফ আলী ও রবিউল ইসলাম রুবেল। সাধারণ সম্পাদক পদে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন নগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আকতার নাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক রায়হানুর রহমান রয়েল, মনিরুজ্জামান খান মনির, মুকুল শেখ, মাজেদুল আলম শিবলী, রেজাউর রহমান রাজীব, রমজান আলী জনি, জয়নাল আবেদীন, পিয়ারুল ইসলাম পাপ্পু, আরকান বাপ্পি, শাহাদাত হোসেন সুজন শেখ, মোরসালিন হক রাবু, আশিকুর রহমান অদ্বিত, মামুনুর রশিদ মাহবুব, প্রভাত রয় মনা, প্রণব সরকার, জাহিদ হাসান ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমন।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৫ মার্চ মহানগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে দ্বিতীয়বার রমজান আলী সভাপতি ও মোশাররফ হোসেন বাচ্চু সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। এর আগে ২০০৪ সালের ১৮ এপ্রিল মহানগর যুবলীগের সম্মেলন হয়েছিল। ওই সম্মেলনে তারাই সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত হন।
মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী বলেন, আমরা দুই মেয়াদে ২০ বছর নেতৃত্বে আছি। এবার আমরা যুবলীগের নেতৃত্বে আসব না। নতুনরা এবার দায়িত্ব পাবে।

রাজশাহী জেলা যুবলীগ
সাত বছর পর রাজশাহী জেলা যুবলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হতে যাচ্ছে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের দিকে চোখ সবার। প্রায় ৩০ জন নেতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। পদপ্রত্যাশী এসব নেতা আওয়ামী লীগ নেতাদের সমর্থন আদায়েও তৎপরতা চালাচ্ছেন।
গত ১৮, ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি– এই তিন দিন জীবনবৃত্তান্ত জমা নেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জেলা যুবলীগের দুই পদের জন্য ২৮ জন নেতা তাদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে সভাপতি পদে ১০ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৮ জন।

সভাপতি পদের জন্য যারা জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন– বর্তমান সহসভাপতি মাহমুদ হাসান ফয়সাল সজল, মোজাহিদ হোসেন মানিক, আলমগীর মুর্শেদ রঞ্জু, আনোয়ার হোসেন, তাসিকুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম রাজা, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলী আযম সেন্টু, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের হোসেন রুবন, পবা উপজেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি এমদাদুল হক, রেজাউন নবী আল মামুন। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে যারা জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন– জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাঘা উপজেলার পাকুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক হোসেন মিলন, সামাউন ইসলাম, ওয়াসিন রেজা লিটন, প্রচার সম্পাদক রফিকুজ্জামান রফিক, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক কামরুল হাসান মিঠু, সদস্য জৌলুস মাহমুদ জেমস, বাঘা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোকাদ্দেস আলী, জেলা যুবলীগের সদস্য মুক্তার হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সেজানুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি মামুন আর রশিদ, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য হাসিনুর রহমান সজল, মোহনপুর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনসহ ১৮ জন।
সর্বশেষ রাজশাহী জেলা যুবলীগের কমিটি হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ। সে সময় দ্বিতীয়বার আবু সালেহ সভাপতি হন। সাধারণ সম্পাদক হন খালিদ ওয়াসি টিটু। তিনি মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন আলী আজম সেন্টু। আবু সালেহ ২০০৪ সালে প্রথম জেলা যুবলীগের সভাপতি হন। এর পর তিনি গত ২০ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। এবার তিনি জীবনবৃত্তান্ত জমা দেননি।
দুই দশক ধরে পুরোনো নেতৃত্ব থাকায় জেলা যুবলীগ প্রায় নিষ্ক্রিয়। সংগঠনের কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে। বর্তমান কমিটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্বের কারণে বর্ধিত সভার কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে।

জেলা যুবলীগের সহসভাপতি মাহমুদ হাসান ফয়সাল সজল বলেন, দীর্ঘদিন সম্মেলন নেই। পুরোনো নেতৃত্বে চলছে। সভাপতি-সম্পাদকের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ কারণে সংগঠনে অচলাবস্থা চলছে। সংগঠনের সম্মেলন হলে গতি ফিরবে। আমরা সবাই সম্মেলন চাই। আগামী নির্বাচনের আগেই সংগঠন গোছাতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.