তেলের দাম বাড়াতে সৌদি–রাশিয়া সহযোগিতা জোরদার হয়েছে

0
98
জ্বালানি তেল

জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে সৌদি আরব-রাশিয়ার সহযোগিতা জোরদার রয়েছে বলে জানিয়েছেন সৌদি জ্বালানিমন্ত্রী প্রিন্স আবদুল আজিজ বিন সালমান। বুধবার তিনি এক সম্মেলনে বলেছেন, তেলের বাজার চাঙা রাখতে ওপেক প্লাস জোট ‘যা প্রয়োজনীয়’ তা করবে।

পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশের জোটের সঙ্গে আরও কয়েকটি দেশ যোগ দিয়ে গঠন করেছে ওপেক প্লাস জোট, যাতে রয়েছে রাশিয়াও। জোটভুক্ত এসব দেশ বিশ্বের অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ৪০ শতাংশ উৎপাদন করে। দাম কমে যাওয়ার কারণে গত নভেম্বর থেকে জোটের সদস্যরা তেলের উৎপাদন কমিয়ে যাচ্ছে।

সৌদি আরব ও রাশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুটো তেল রপ্তানিকারক দেশ। তেলের দাম বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে দেশ দুটো গত সোমবার তেলের উৎপাদন আরও কমিয়ে দিয়েছে।

এরপর অল্প সময়ের জন্য তেলের দাম বেড়েছিল। তবে বুধবার ব্রেন্ট তেলের দাম ১ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেল ৭৫ দশমিক ৩০ ডলারে বিক্রি হচ্ছিল। বেশির ভাগ ওপেক সদস্যদেশ তাদের বাজেট খরচ চালাতে তেলের দাম ৮০ থেকে ১০০ ডলার প্রত্যাশা করে।

ওপেক বলছে, তারা কোনো দাম লক্ষ্য করে কাজ করছে না, বরং তারা এমন একটি ভারসাম্যপূর্ণ দাম চায়, যা ভোক্তা ও উৎপাদনকারী দেশ উভয়েরই স্বার্থ রক্ষা করবে।

ওপেক প্লাসের বাইরে সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। তারা চাইছে তেলের উৎপাদন বাড়ানো হোক, যাতে তেলের দাম কমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি চাঙা হতে পারে। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর ওয়াশিংটন রাশিয়ার সঙ্গে সৌদি আরবের সহযোগিতাকে সমালোচনা করেছে।

তবে রিয়াদ মার্কিন আহ্বানে কান দেয়নি। প্রিন্স আবদুল আজিজ বুধবার বলেছেন যে রাশিয়া ও সৌদি আরব তেলের উৎপাদন কমাতে নতুন করে যে সমঝোতায় পৌঁছেছে, তা সংশয়বাদীদের ভুল প্রমাণিত করেছে।

ওপেক জোটের দেশগুলোর মন্ত্রী ও বিভিন্ন তেল কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের উপস্থিতিতে তিনি ওপেক ইন্টারন্যাশনাল সেমিনারে বলেন, ‘সোমবার আমরা যে কেবল আমাদের (তেলের উৎপাদন হ্রাসের) চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছি তা-ই নয়, আমরা এটা করেছি রুশদের সম্মতিতেই।’

ওপেক অবশ্য ওই সম্মেলনে রয়টার্স, ব্লুমবার্গ এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদকদের প্রবেশাধিকার বাতিল করে। তবে অনুষ্ঠানের কিছু অংশ অনলাইনে সম্প্রচার করা হয়।

একটি সূত্র জানিয়েছে, অনলাইন সম্প্রচার শেষে প্রিন্স আবদুল আজিজ সেমিনারে বলেন যে তেলের বাজার চাঙা রাখতে ওপেক প্লাস ‘যা করার প্রয়োজন’ তার সবকিছুই করবে।

এখনকার মত যথেষ্ট

আন্তর্জাতিক এনার্জি এজেন্সি বলছে, ২০২৩ সালের দ্বিতীয় ভাগে তেলের বাজারে তেজিভাব থাকবে বলে তারা আশা করছে এবং অংশত এর কারণ হলো, তেলের উৎপাদন কমাতে ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্ত।

মর্গান স্ট্যানলির বিশ্লেষকেরা বুধবার তেলের সরবরাহ সম্পর্কে তাঁদের পূর্বাভাস কমিয়ে দেন। তাঁদের বক্তব্য হলো, ২০২৩ সালে তেলের মজুত কমে যাবে বলে তাঁরা মনে করছেন। তবে তাঁরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন যে ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে তেলের মজুত অতিরিক্ত হবে, কারণ ওপেকের সদস্য নয় এমন দেশগুলো চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বাড়াবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্বালানিমন্ত্রী সুহাইল আল মাজরুয়ি বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, তেলের উৎপাদন কমাতে যে সমঝোতা হয়েছে, বাজারে ভারসাম্য আনতে তা যথেষ্ট হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, বাজার বুঝতে এবং একটা ভারসাম্য আনতে এটা যথেষ্ট হবে।

আমিরাতের মন্ত্রী জানান, তাঁর দেশ তেলের উৎপাদন কমাবে না, কারণ তাঁরা সক্ষমতার তুলনায় এরই মধ্যে যথেষ্ট কম তেল উৎপাদন করছেন।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বড় বিষয়টি হলো, আমি দেখছি অনেক দেশই কম বিনিয়োগ করছে। এই জোটে যোগ দিতে আরও দেশকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে। যত বেশি দেশ যোগ দেবে, আমাদের কাজ তত সহজ হবে। নিশ্চিত হবে যে ভবিষ্যতে পৃথিবীতে তেলের যথেষ্ট সরবরাহ থাকবে।’

‘ভেবে দেখুন, আমাদের সঙ্গে যদি ৬০ শতাংশ উৎপাদনকারী থাকে কিংবা ৮০ শতাংশ উৎপাদনকারী থাকে, তখন আমরা অবশ্যই আরও ভালো একটি কাজ করতে পারব,’ যোগ করেন সুহাইল আল মাজরুয়ি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.