তাকসিম আবার ওয়াসার এমডি হতে যাচ্ছেন

0
102

তিন বছরের জন্য আবারও ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন তাকসিম এ খান। মঙ্গলবার ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ৩০৬তম বৈঠকে এ বিষয়ক প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওয়াসা ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সাতজন বোর্ড সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে তিনজন সদস্য পুনর্নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) জানান। তাদের আপত্তির বিষয়টি আমলে না নিয়ে বোর্ড প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে।

ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের মোট সদস্য ১৩। এর মধ্যে এমডি ও বোর্ড চেয়ারম্যান পদাধিকার বলে সদস্য। পক্ষে মত দেওয়া সদস্যদের মধ্যে এমডি তাকসিম এ খান নিজে ও বোর্ড চেয়ারম্যান ড. সুজিত কুমার বালাও ছিলেন। আপত্তি দেওয়া বোর্ড সদস্যরা হলেন– ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের সভাপতি একেএম আব্দুল হামিদ, ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সহসভাপতি ইমরান আহমেদ ও ইনস্টিটিউব অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস বাংলাদেশের সহসভাপতি সাব্বির আহমেদ। উপস্থিত অন্য দু’জন সদস্য হলেন– ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মামুন রশিদ শুভ্র এবং সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। বোর্ড সভার প্রস্তাবে সরকার অনুমোদন দিলে ২০২৬ সালের ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত এমডি থাকতে পারবেন তাকসিম এ খান। পাশাপাশি টানা ১৭ বছর ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে থাকার রেকর্ডও তৈরি হবে।

এ ব্যাপারে বোর্ড চেয়ারম্যান সুজিত কুমার বালাকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। তবে এক বোর্ড সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা এমডি নিয়োগের নিয়ম জানতে চেয়েছিলাম। তারা কোনো নিয়ম দেখাতে চান না। তারা শুধু বর্তমান এমডির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পক্ষে কথা বলেন। তিনজন বোর্ড সদস্য এতে আপত্তি দিয়েছিলেন। তাদের আপত্তি আমলে নেওয়া হয়নি।’

আরেক বোর্ড সদস্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর মামুন রশিদ শুভ্র বলেন, ‘বোর্ডে আলোচনা হয়েছে, বর্তমান এমডি আগামীতে দায়িত্ব পালন করতে চাইলে তাঁর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হোক। কারণ তিনি অনেক অভিজ্ঞ ব্যক্তি। নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলেও তাঁর চেয়ে যোগ্য লোক পাওয়া কঠিন হবে। এ জন্য নিয়ম-নীতির মধ্যে থেকে বর্তমান এমডির মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য মত দিয়েছেন।’

চুক্তি অনুযায়ী তাকসিম এ খানের মেয়াদ আগামী ১৩ অক্টোবর শেষ হওয়ার কথা। ২০০৯ সালের ১৪ অক্টোবর তিনি প্রথম ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে দায়িত্ব পান। পরবর্তী সময়ে দফায় দফায় তাঁর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। টানা ১৪ বছর দায়িত্ব পালনের পর আবারও এমডি থাকার আগ্রহ দেখান তিনি। এ নিয়ে তাকসিম এ খানের সঙ্গে সাবেক বোর্ড চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফার দূরত্ব দেখা দেয়। এমডির বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠিও দিয়েছিলেন গোলাম মোস্তফা। এর পর গত ২১ মে গোলাম মোস্তফাকেই অব্যাহতি দেয় মন্ত্রণালয়।

গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এমডির মেয়াদ শেষের দিকে হওয়ায় আমি নিয়ম মতো পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এমডি নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এটা তাকসিম সাহেব মেনে নিতে পারেননি। এ জন্যই তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

এমডি নিয়োগে নিয়ম

ঢাকা ওয়াসার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দায়িত্বরত এমডির মেয়াদ শেষ হওয়ার ন্যূনতম তিন মাস আগে একাধিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবেদনপত্র চাওয়া হয়। ওয়াসা বোর্ড আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করে সর্বাধিক যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করবে। বোর্ড সদস্যরা তাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে নম্বর দেবেন। সর্বোচ্চ নম্বরের ভিত্তিতে তিন থেকে পাঁচজনের একটি তালিকা তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হয়। মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে তিনজনের নাম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাবে। প্রধানমন্ত্রী একজনকে এমডি পদের জন্য চূড়ান্ত করেন।

তাকসিম এ খান তিন বছরের জন্য প্রথম নিয়োগ পাওয়ার পর ২০১২ সালের অক্টোবরে তাঁর মেয়াদ শেষ হয়। পরে মন্ত্রণালয় দুই দফা তাঁর মেয়াদ বাড়ায়। ২০১৫ সালে ওয়াসা বোর্ড নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে বর্তমান এমডিই আবার নিয়োগ পান। পরে আর কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে বোর্ডের মাধ্যমে তাঁর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.