জ্ঞানবাপী মসজিদে সমীক্ষা বুধবার পর্যন্ত স্থগিত

0
120
জ্ঞানবাপী মসজিদ

উত্তর প্রদেশের বারানসির জ্ঞানবাপী মসজিদের সমীক্ষার কাজ আগামী বুধবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত স্থগিত রাখার নির্দেশ দিলেন সুপ্রিম কোর্ট। আজ সোমবার এই নির্দেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রর বেঞ্চ বলেন, এই সময়ের মধ্যে বারানসি জেলা আদালতের নির্দেশের বিরুদ্ধে মসজিদ কমিটিকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে আবেদন জানাতে হবে।

কোনো মন্দির ভেঙে জ্ঞানবাপী মসজিদ তৈরি হয়েছিল কি না, তা সমীক্ষা করার দায়িত্ব বারানসি জেলা আদালত গত শুক্রবার আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়াকে (এএসআই) দিয়েছিলেন। নির্দেশ অনুযায়ী আজ সকাল সাতটা থেকে এএসআই ওই সমীক্ষা শুরু করে। তবে সেই সমীক্ষার আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল মসজিদ চত্বরের সেই বিতর্কিত ও ঘিরে রাখা অঞ্চলটি, যেখানে হিন্দুরা ‘শিবলিঙ্গ’ পাওয়া গেছে বলে দাবি করছেন।

মুসলমানদের দাবি, সেটি মসজিদের অজুখানা ও ফোয়ারার মুখ। সমীক্ষার কাজে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয়, সে জন্য ওই তল্লাটে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

বারানসি জেলা আদালতের ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় মসজিদ প্রশাসন ‘অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ’। তাদের আইনজীবী হুজেফা আহমদি আজ সকালে প্রধান বিচারপতির এজলাসকে বলেন, বারানসি জেলা আদালত নির্দেশ জারি করেছিলেন গত শুক্রবার বিকেলে। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাওয়ার সময় পর্যন্ত তাঁদের ছিল না। আজ সাতসকালেই এএসআই সমীক্ষার কাজ শুরু করে দিয়েছে। মসজিদ চত্বরে তারা খোঁড়াখুঁড়ি করলে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।

হুজেফা আহমদি এ কথাও বলেন, সমীক্ষা চালানো যাবে না বলে এর আগে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, বর্তমান নির্দেশ তারও পরিপন্থী। তা ছাড়া পূজার অধিকার দাবি জানিয়ে হিন্দুদের আবেদনের বৈধতাসংক্রান্ত মামলাও সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।

হিন্দুদের পক্ষে আইনজীবী শ্যাম দিওয়ান বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আগের নির্দেশ ছিল যেখানে ‘শিবলিঙ্গ’ পাওয়া গেছে সেই স্থান নিয়ে। বর্তমানের সমীক্ষা ওই স্থান বাদ দিয়ে করা হচ্ছে। এই সময় সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, আগের নির্দেশ ছিল ‘শিবলিঙ্গের’ কার্বন ডেটিংসংক্রান্ত, যা দিয়ে তার বয়স নির্ধারণ করা সম্ভব। বর্তমান সমীক্ষায় মসজিদ খোঁড়া হচ্ছে না।

আইনজীবী আহমেদি এর বিরোধিতা করে বলেন, জেলা আদালতের রায়ে স্পষ্ট ভাষায় ‘খননের’ কথা বলা হয়েছে। এই সময় সলিসিটর জেনারেলকে বেঞ্চ বলেন, এএসআই মসজিদ চত্বরে ঠিক কী করছে বা করতে চাইছে, তা বেলা সোয়া এগারোটার মধ্যে এজলাসকে জানাতে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী সলিসিটর জেনারেল খোঁজ নিয়ে জানান, ‘আগামী অন্তত এক সপ্তাহ খোঁড়াখুঁড়ির কোনো সম্ভাবনা নেই, যা হচ্ছে, তা স্রেফ মাপজোক, ফটোগ্রাফি ইত্যাদি। একটি ইটও সরানো হয়নি। আগামী এক সপ্তাহে হবেও না।’

মসজিদ কমিটির আইনজীবী আহমেদির আবেদন অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট এরপর বুধবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এএসআইকে সমীক্ষার কাজ বন্ধ করে জেলা আদালতের নির্দেশ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন।

অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি–বাবরি মসজিদ বিতর্ক যখন তুঙ্গে, সেই সময় প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাওয়ের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন কংগ্রেস জোট সরকার ধর্মস্থান আইন প্রণয়ন করেন। সেই আইনে বলা হয়েছিল, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হওয়ার সময় সব ধর্মস্থানের চরিত্র যেমন ছিল, তার বদল ঘটানো যাবে না। একমাত্র ব্যতিক্রম অযোধ্যা, যা আগে থেকেই ছিল বিচারাধীন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস) ও বিজেপি যদিও একেবারে শুরু থেকেই অযোধ্যার পাশাপাশি কাশীর (বারানসি) বিশ্বনাথ মন্দির ও মথুরার শ্রীকৃষ্ণ জন্মস্থানের মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে।

অযোধ্যায় যেমন বাবরি মসজিদ, বারানসিতে তেমন বিশ্বনাথ মন্দিরের লাগোয়া জ্ঞানবাপী মসজিদ ও মথুরায় শ্রীকৃষ্ণ জন্মস্থানের সঙ্গেই শাহি ইদগা মসজিদের অবস্থান। বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদীরা ওই দুই ধর্মস্থানকে মসজিদ–মুক্ত করতে বদ্ধপরিকর।

অযোধ্যা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে হিন্দুত্ববাদীরা এরপর কাশী ও মথুরা নিয়ে উদ্যোগী হয়। দুটি ক্ষেত্রেই পূজার অধিকারের দাবিতে স্থানীয় আদালতে একাধিক মামলা করা হয়।

সেই সঙ্গে আরজি, মন্দির ভেঙে ওই দুই স্থানে মসজিদ তৈরি হয়েছিল কি না, তা নিরুপণ করার। বারানসিতে বিশ্বনাথ মন্দির ও জ্ঞানবাপী মসজিদের একটি অভিন্ন দেয়াল হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি রয়েছে বলে হিন্দুদের দাবি। ২০২১ সালে সেই দেবদেবীর (শৃঙ্গার গৌরী) নিত্য পূজার দাবি জানিয়ে পাঁচ হিন্দু নারী মামলা করেন। বর্তমান চলমান মামলাগুলো সেই সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের নিষ্পত্তির দাবিতে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.