চবি চারুকলার পয়লা বৈশাখের শোভাযাত্রা নিয়ে শঙ্কা

0
116
মূল ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে আন্দোলন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীরা। চারুকলা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম, ২ ফেব্রুয়ারি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে এ বছর পয়লা বৈশাখ আয়োজনের প্রস্তুতি নেই। অন্য বছরগুলোয় ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা অন্তত ২০ দিন আগে থেকেই পয়লা বৈশাখের শোভাযাত্রা আয়োজনের নানা প্রস্তুতি নিতেন। এ বছর আর ১১ দিন বাকি থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। ফলে আয়োজনটি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।

গত বছর ২ নভেম্বর শ্রেণিকক্ষের পলেস্তারা খসে পড়ার পর ২২ দফা দাবিতে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করছিলেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। কর্তৃপক্ষ দাবি না মানায় এ আন্দোলন রূপ নেয় মূল ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের তিন মাস পর গত ২ ফেব্রুয়ারি ইনস্টিটিউট বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। তিন ধাপে এ বন্ধ ঈদ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী, বন্ধের সময় শিক্ষার্থীদের কেউ ইনস্টিটিউটের ভেতরে অবস্থান করতে পারবেন না।

ইনস্টিটিউটের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষার্থীদের অবস্থান করার জন্য এখন কোনো জায়গা নেই। ইনস্টিটিউটে অবস্থানে কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আর মূল ক্যাম্পাসে অবস্থান করলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বাধা দিচ্ছে। এ কারণে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও পয়লা বৈশাখ আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে পারছেন না। কর্তৃপক্ষ যদি অন্তত জায়গা নির্ধারণ করে দিত, তাহলে তাঁরা শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিতেন।

এদিকে গতকাল রোববার বেলা ১১টায় শোভাযাত্রার আয়োজনের অনুমতি চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন চারুকলার চারজন শিক্ষার্থী। তাঁরা হলেন স্নাতকোত্তরের জহির রায়হান, শিহাব শাহরিয়ার, চতুর্থ বর্ষের খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম ও দ্বিতীয় বর্ষের নূর ইকবাল।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় চারুকলায় গিয়ে দেখা যায়, চারুকলার মূল ফটক আটকানো। ভেতরে পাহারা দিচ্ছেন চারজন প্রহরী। গেট খুলে ভেতরে পা রাখতেই প্রহরীরা বাধা দেন।

জানতে চাইলে জহির রায়হান বলেন, পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান বাঙালির ঐতিহ্য। কিন্তু এ উৎসব পালনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো ধরনের সহযোগিতা নেই। তৃতীয় দফা চারুকলা বন্ধ ঘোষণা করে মূলত বৈশাখের আয়োজনকেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

জহির রায়হান ও খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম বলেন, গত বছরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান আয়োজনে আগ্রহী ছিল না। প্রশাসন কোনো ধরনের আর্থিক সাহায্যও করেনি। সহায়তা চাওয়ার পর স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল বরাদ্দ নেই।

মূল ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে আন্দোলন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীরা। চারুকলা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম, ২ ফেব্রুয়ারি।

মূল ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে আন্দোলন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীরা। চারুকলা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম, ২ ফেব্রুয়ারি। 

শিক্ষার্থীদের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার]বলেন, এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি। ইনস্টিটিউটের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে এ বছর পয়লা বৈশাখ পালনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি।

এরপর এবারের পয়লা বৈশাখের পরিকল্পনা কী তা জানতে ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুফিয়া বেগমের মুঠোফোনে অন্তত পাঁচবার কল করা হয়। তবে তিনি রিসিভ করেননি। পরে গতকাল ইনস্টিটিউটে তাঁর কার্যালয়ে গেলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

এখন যেমন চারুকলা

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় চারুকলায় গিয়ে দেখা যায়, চারুকলার মূল ফটক আটকানো। ভেতরে পাহারা দিচ্ছেন চারজন প্রহরী। গেট খুলে ভেতরে পা রাখতেই প্রহরীরা বাধা দেন। তাঁদের ভাষ্যমতে, সেখানে শিক্ষার্থীদের যাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। পরে সাংবাদিক পরিচয় দিলে প্রহরীরা বলেন, ‘পরিচালক ম্যাম বলেছেন, তাঁর অনুমতি ছাড়া কাউকে ঢুকতে না দিতে।’ এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রক্টরের অনুমতি নিলে প্রহরীরা ভেতরে ঢুকতে দেন।

ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, একাডেমিক ভবনে কয়েকজন নির্মাণশ্রমিক কাজ করছেন। আর শিল্পী রশিদ চৌধুরী আর্ট গ্যালারির বারান্দায় রান্নার সরঞ্জাম ও হাঁড়ি–পাতিল রাখা। ওই গ্যালারির এক কোনায় বিছানা পাতা রয়েছে। গ্যালারিতে কোনো সংস্কার কাজ চলছে না।

চারুকলাকে মেরে ফেলা হচ্ছে বলে মনে করেন ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রাতুল চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, এটা খুব লজ্জার বিষয় যে নগরে বৈশাখের উৎসব দিনে দিনে সমৃদ্ধ না হয়ে আরও সংকীর্ণ হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর বৈশাখের শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নেওয়া হতো আর্ট গ্যালারির ভেতরে, বারান্দায় ও সামনের ফাঁকা অংশে—এ তিন জায়গায়। সেখানে শিক্ষার্থীরা দলে দলে ভাগ হয়ে কেউ রংতুলিতে দেয়ালচিত্র আঁকতেন, আবার কেউ তৈরি করতেন হরেক রঙের মুখোশ। আরও তৈরি হতো গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী কুলা, পাতিল, ঘুড়ি ইত্যাদি। বর্ষবিদায় ও বরণ অনুষ্ঠানের শুরু হতো পয়লা বৈশাখের সকালে ঢাকের তালে। এরপর মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা, আলোচনা অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উৎসবের সমাপ্তি হতো।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, একাডেমিক ভবনে সংস্কারকাজ চললেও আর্ট গ্যালারিতে কোনো ধরনের কাজ হচ্ছে না। এ জায়গায় বিধিনিষেধ তুলে দিলে পয়লা বৈশাখের আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া যেত।

‘চারুকলাকে মেরে ফেলা হচ্ছে’

চারুকলাকে মেরে ফেলা হচ্ছে বলে মনে করেন ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রাতুল চন্দ্র দাস।তিনি বলেন, এটা খুব লজ্জার বিষয় যে নগরে বৈশাখের উৎসব দিনে দিনে সমৃদ্ধ না হয়ে আরও সংকীর্ণ হচ্ছে। তাঁদের সময়ে অন্তত এক মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হতো। এখন এই উৎসবের আর কয়েক দিন বাকি থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। যেখানে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। মোটকথা, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলাকে জোর করে মেরে ফেলা হচ্ছে।

১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয় চারুকলা বিভাগ। এরপর ২০১০ সালের আগস্টে চট্টগ্রামের সরকারি চারুকলা কলেজ ও এই বিভাগ এক হয়। তখন থেকেই এটি পরিচিত চারুকলা ইনস্টিটিউট নামে। এটির অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরের মেহেদীবাগ এলাকায় বাদশা মিঞা সড়কে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা আলাদাভাবে নববর্ষ উদ্‌যাপন করে আসছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.