২২৮২২ কোটি টাকার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে পেট্রোবাংলা

0
20

স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আগামী চার বছরে ২২ হাজার ৮২২ কোটি টাকা খরচ করার পরিকল্পনা নিয়েছে পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে ১০০ কূপ খননে ব্যয় হবে ১৯ হাজার ৫০ কোটি টাকা। এতে ৪৮.৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হতে পারে। পাশাপাশি ৩ হাজার ৭৭২ কোটি টাকায় টুডি ও থ্রিডি সাইসমিক সার্ভে (ভূকম্পন জরিপ) করা হবে।

এ জরিপের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন-বণ্টন চুক্তির (পিএসসি) আলোকে আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকা হবে। এর আগে পেট্রোবাংলা ২০২২ সালে তিন বছরে ৪৮ কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছিল। দুই বছরে মাত্র ১১টি কূপ খনন করতে পেরেছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি। জ্বালানি বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দেশে বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা দিনে ৩৮০ কোটি ঘনফুট। আমদানি করা এলএনজিসহ পেট্রোবাংলা দিতে পারে কমবেশি ৩০০ কোটি ঘনফুট। দেশের স্থলভাগের গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাওয়া যাচ্ছে কম-বেশি ২০০ কোটি ঘনফুট।

জ্বালানি বিভাগের ‍হিসাব বলছে, ২০৩০ সালে দেশের দৈনিক গ্যাসের চাহিদা বেড়ে হবে ৫০০ কোটি ঘনফুট। পেট্রোবাংলা সরবরাহ করতে পারে ৪৩৫ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে স্থলভাগের গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাওয়া যেতে পারে ২১২ কোটি ঘনফুট। সমুদ্রের গ্যাসব্লক থেকে ১০ কোটি এবং এলএনজি থেকে ২১৩ কোটি ঘনফুট গাস মিলবে। যদিও এখন সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান শুরুই হয়নি।

এ বিষয়ে জ্বালানি সচিব মো. নুরুল আলম বলেন, আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে নিজেদের সম্পদ আহরণে উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু সমুদ্র (অফশোর) নয়, স্থলভাগেও (অনশোর) তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করতে হবে। সে জন্য অনশোর পিএসসি হালনাগাদ করা হচ্ছে, যাতে অনশোরেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হয়।

চলমান কার্যক্রম

গ্যাসের সংকট মেটাতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন ও ওয়ার্কওভারের (সংস্কার) পরিকল্পনা নেয় পেট্রোবাংলা। ২০২২ সালে গৃহীত তিন বছরের এই পরিকল্পনায় ইতোমধ্যে দুই বছর পেরিয়েছে। এখন পর্যন্ত ১১ কূপ খনন করে দিনে ১২.৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে ৩.৩ কোটি ঘনফুট। বর্তমানে তিনটি কূপে ওয়ার্কওভারের কাজ চলছে।

আরও ১০০ কূপ খননের পরিকল্পনা

৪৮ কূপ খননে ধীরগতির মধ্যেই ২০২৫ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে আরও ১০০ কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছে পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে ৬৯টি নতুন কূপ খননের মাধ্যমে দৈনিক প্রায় ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির আশা করছে তারা। পাশপাশি ৩১টি কূপে ওয়ার্কওভারের মাধ্যমে আরও ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিন বছরে নিজস্ব তহবিল থেকে পেট্রোবাংলা ৫ হাজার ৭২২ কোট টাকা খরচ করতে চায়। সরকারের কাছে চেয়েছে ১৩ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা।

সাইসমিক সার্ভে

নতুন সম্ভাব্য এলাকায় গ্যাসের মজুত চিহ্নিত করতে আগামী কয়েক বছরে ১০ হাজার ২২৫ লাইন কিলোমিটার টুডি ও ৭ হাজার ৮৫৪ বর্গকিলোমিটার থ্রিডি সাইসমিক সার্ভে করা হবে। এতে খরচ হতে পারে ৩ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা।

পরিত্যক্ত কূপ খনন পরিকল্পনা

এ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্থলভাগে ২৫৩টি কূপ খনন করা হয়েছে। এখন ৭০টি কূপ থেকে গ্যাস তোলা হচ্ছে। ৯৮টি কূপ নানা কারণে পরিত্যক্ত বা উৎপাদন সাময়িক বন্ধ আছে। পেট্রোবাংলার একটি সূত্র জানিয়েছে, এর মধ্যে ৩১টি কূপে ওয়ার্কওভার সম্ভব। অন্য কূপগুলোতেও গ্যাস উত্তোলনে আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে। এতে জাতীয় গ্রিডে আরও ২২-২৩ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বাড়তে পারে।

অনশোর পিএসসি

স্থলভাগে ২২টি গ্যাস ব্লক রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি উন্মুক্ত রয়েছে। এই ব্লকগুলোতে বাপেক্স ছাড়াও বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিয়েছে পেট্রোবাংলা। এ জন্য অফশোরের মতো অনশোর পিএসসি প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.