খোলস পাল্টাচ্ছে হেফাজতে ইসলাম

0
117

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নানা কৌশল নিচ্ছে আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। নানা কর্মকাণ্ডের কারণে আগে বাদ পড়া নেতাদের টানা হচ্ছে দলে। ‘সরকারবিরোধী’ হিসেবে পরিচিত নেতাদের অনেকে পাচ্ছেন পদোন্নতিও। নতুন করে সাজানো হচ্ছে তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি। সবমিলিয়ে নির্বাচনের আগে সরকারকে চাপে রাখতে চাইছে হেফাজত।

ভোটের আগেই নেতাকর্মীর নামে থাকা শতাধিক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানোর পাশাপাশি কারাবন্দিদের মুক্তিও চাইবে দলটি। সরকার যদি তাদের এই দাবিতে সাড়া না দেয় তাহলে ভিন্ন পথও ভেবে রাখছে হেফাজতে ইসলাম।

জানা গেছে, কারাবন্দি সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককেও নতুন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দিতে চায় হেফাজতের একটি অংশ। মামলা-হামলায় পদ হারানো অন্য নেতাদেরও কমিটিতে আনার বিষয়টি এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। কমিটির কলেবর বাড়িয়ে তা ২০১ সদস্যের করতে সব প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। যোগ্যতা অনুযায়ী নেতাদের পদায়ন করতে মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমানের নেতৃত্বে ইতোমধ্যে ১২ সদস্যের একটি সাব-কমিটি করা হয়েছে। সেই সাব-কমিটি গত বুধবার ঢাকার ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে জামে মসজিদে বৈঠক করে। সেখানে পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটি খসড়াও করা হয়েছে। এই খসড়া চূড়ান্ত করবেন আমির ও মহাসচিব। তাদের অনুমোদন পেলেই নতুন নীতিনির্ধারণী পর্ষদ আসবে হেফাজতে। ওই বৈঠকে বর্তমান যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী ও মাওলানা কাইয়ুম সোবহানীকে নায়েবে আমির করা হয়। বাকিদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে পর্যায়ক্রমে।

দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম একটি বৃহত্তম অরাজনৈতিক ইসলামী সংগঠন। সংগঠন পরিচালনার স্বার্থেই কমিটি পুনর্গঠন করা হচ্ছে।’ প্রস্তাবিত নতুন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘আগের কমিটিতে আমি সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। এখন ৩২ মামলার আসামি আমি। সংগঠনের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। এখন সংগঠন যদি মূল্যায়ন করে তাহলে তা খুশি মনে গ্রহণ করব।’

‘সরকারবিরোধী’ অংশ হিসেবে পরিচিত আপনারা– এ বিষয়ে কী বলবেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘হেফাজত ইসলাম রক্ষার সংগঠন। সরকার যদি আমাদের দাবি মেনে বুকে টেনে নেয় তাহলে দেশ ও দশের জন্য মঙ্গল। অন্যথায় আমরা সরকারকে পিঠ দেখাতে বাধ্য হব।’

যারা কমিটিতে ঢুকছেন

জানা যায়, ২০২১ সালের ২৬ মার্চের পর দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অভিযানে গ্রেপ্তার হন হেফাজতের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা। পরিস্থিতি সামাল দিতে একই বছরের ২৫ এপ্রিল সারাদেশের কমিটি বিলুপ্ত করেন তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি মারা যাওয়ার পর সংগঠনটির হাল ধরেন মহিবুল্লাহ বাবুনগরী। বাড়ানো হয় কমিটির কলেবর। তারপরও বাদ পড়া নেতাদের অনেকের ঠাঁই হয়নি বর্তমান কমিটিতে। তাই মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা শাখাওয়াত হোসেন রাজি, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা মুফতি বশির উল্লাহকে যুগ্ম মহাসচিব পদে পুনর্বহাল করা হচ্ছে। আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীকেও সাংগঠনিক পদে পুনর্বহাল করা হচ্ছে। এদিকে বর্তমানে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে থাকা মাওলানা মীর ইদ্রিসকে করা হচ্ছে যুগ্ম মহাসচিব। যুগ্ম মহাসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে মাওলানা হারুন ইজহার ও মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরীকে। সাবেক প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়জীকে পদোন্নতি দিয়ে করা হচ্ছে সহকারী যুগ্ম মহাসচিব। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মাদ্রাসায় বৈঠক করে শিগগির হেফাজতের এই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর ঘিরে দুই বছর আগে সংঘাতের পর হেফাজতের যে কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছিল; তার সব সদস্যকে বর্তমান কমিটিতে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটি। হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক শাহ্‌ মুহাম্মদ ইয়াহইয়ার মৃত্যুর পর তাঁর পদ শূন্য হওয়ায় মাদ্রাসাটির বর্তমান মহাপরিচালক মুফতি খলিল আহমদ কাসেমী এবং আতাউল্লাহ হাফেজ্জীকে এরই মধ্যে সিনিয়র নায়েবে আমির করা হয়েছে। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতের আমির ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফী। তিনি ২০২০ সালে মারা যাওয়ার পর নানা আলোচনার মধ্যে ওই বছরের ১৫ নভেম্বর সম্মেলনে জুনাইদ বাবুনগরীকে আমির করে হেফাজতের ১৫১ সদস্যের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছিল।

কার নামে কত মামলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা হেফাজতে ইসলামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমীর নামে রয়েছে ৩৮টি, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের ২৭টি, আগের কমিটির শিক্ষা ও প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক হারুন এজাহারের নামে ২৬টি, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিবের নামে ২০টি, মুফতি শাখাওয়াত হোসেন রাজির নামে ২০টি, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব নাছির উদ্দিন মনিরের নামে ১৪টি, নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুফতি বশির উল্লার ১৪টি, সাবেক প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমানির ৮টি, সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক আতাউল্লা আমিনের ১১টি, মুন্সীগঞ্জ জেলা হেফাজতের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা ওবায়দুল্লাহ কাশেমির বিরুদ্ধে ১০টি, মাওলানা আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা বিচারাধীন বলে জানিয়েছে হেফাজত সূত্র।

এ নেতাদের আগে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হলেও এখন আবার নতুন করে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। সরকারবিরোধী এ অংশটি যত সক্রিয় হচ্ছে তত কোণঠাসা হচ্ছে শফিপন্থি হেফাজত নেতারা। শফির অনুসারী হিসেবে যারা পরিচিত তাদের কারোর ঠাঁই হচ্ছে না নতুন কমিটিতে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.