কারও উড়ে গেছে হাত, কারও গেছে পা

সীতাকুণ্ডে ভয়াবহ বিস্ফোরণ

0
101
সীতাকুণ্ডে ভয়াবহ বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে ২০০ গজ ভেতরে গেলেই সীমা অক্সিজেন প্লান্ট। রাস্তার উত্তর পাশে কয়েক একর জায়গাজুড়ে এ কারখানার অবস্থান। প্লান্টটি স্থাপন করা হয়েছিল কারখানার মাঝে। সেটিই এখন মৃত্যু উপত্যকা। প্লান্টের ২০০ গজের মধ্যেই পড়ে আছে এক শ্রমিকের ঝলসানো হাত। আরেকটু দূরে ঝুলতে দেখা গেছে শ্রমিকদের পরনের প্যান্টসহ পায়ের মাংসপিণ্ড। এমনই বীভৎসতা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে সীতাকুণ্ডের কদমরসুলের অক্সিজেন প্লান্টে।

প্লান্টে হেলপারের কাজ করতেন মো. ফোরকান। অন্যান্য দিনের মতো শনিবারও কাজ করছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণ। এর পর তাঁর কিছু মনে নেই। চমেক হাসপাতালের বিছানায় জ্ঞান ফেরার পর দেখেন তাঁর বাঁ হাতের দুই আঙুল উড়ে গেছে। হাতে এখন ব্যান্ডেজ। আরেকটি আঙুলের অবস্থা খুবই খারাপ। তাঁর মতো মাসুদের ডান পা উড়ে গেছে। রিপনের বুকে ও ঊরু লোহার পাতের আঘাতে থেঁতলে গেছে। তাঁদের মতো বিস্ফোরণে আহত ১৮ জনই ক্ষতবিক্ষত। আহতদের কারও পা থেঁতলে গেছে, কারও মাথায় আঘাত, কারও চোখে গুরুতর জখম রয়েছে। কয়েকজন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। মারা যাওয়া দু’জনের নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যায়। বিস্ফোরণে আহতদের সামলাতে চমেক হাসপাতালের চিকিৎসকদের বেগ পেতে হয়েছে। হাসপাতালের সামনে ভিড় করেন উৎসুক জনতা।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২১ জনের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। আহতদের আমাদের সব চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারী সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

কদমরসুল এলাকার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন বলেন, বিস্ফোরণের পর টিন ও লোহার টুকরা উড়ে গিয়ে আশপাশে পড়েছে। কারাখানার ভেতর আহতদের মধ্যে অনেকের হাতের কবজি উড়ে গেছে। কারও পা উড়ে গেছে। দগ্ধ হয়েছেন অনেকে। মুসলিম উদ্দিন নামে এক বাসিন্দা বলেন, অনেকের হাত-পা কেটে যায়। এখান থেকে উড়ে যাওয়া লোহার টুকরার আঘাতে আধা কিলোমিটার দূরে শামসুল আলম নামে একজন মারা গেছেন।

মারা যাওয়া ফরিদের স্ত্রী রাশেদা জানান, তাঁদের সংসারে তিন মেয়ে। সবাই ছোট। ফরিদের আয়েই চলত সংসার। হেলপারের কাজ করে মাসে ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা পেতেন তিনি। এখন মেয়েদের কে দেখবে, সংসার কে চালাবে, তা কারও জানা নেই।

প্রসঙ্গত, শনিবার বিকেলে সীতাকুণ্ডের কদমরসুল (কেশবপুর) এলাকার সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেডের প্লান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জন নিহত হয়েছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.