কয়েকটি ধারা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে: বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ

সাইবার নিরাপত্তা আইন

0
60
‘সাইবার নিরাপত্তা আইন ও আইন সাংবাদিকতা’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তব্য দেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের দক্ষিণ হলে,ছবি: সংগৃহীত

সাইবার নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ। ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন ও আইন সাংবাদিকতা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় সোমবার তিনি এ কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের দক্ষিণ হলে ওই কর্মশালার আয়োজন করে ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ)।

সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে বলতে গিয়ে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে, যে এই আইনটা সাংবাদিকবান্ধব আইন বা ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন বান্ধব আইন। বার বার একটা কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, ধারা ২৯ নতুন আইনে, মানহানি। আগে মানহানির জন্য হুট করে জেলে দেওয়া যেতো। এখন জরিমানার বিধান করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন বোদ্ধা ব্যক্তি যারা তারাও বিভিন্ন আর্টিকেলে এ নিয়ে কথাগুলো বারবার বলে এসেছেন।’

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, ‘আইনের পাঁচটি ধারা (২২, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৮)  যেকোনোভাবে আপনাকে বিপদে ফলতে পারে।…যদিও ২৯ ধারায় মানহানির বিষয়ে হয়তো বা আপনারা জরিমানা দিয়ে পার পেয়ে যেতে পারেন। কিন্তু কয়েকটা সেকশন খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে এই জার্নালিজমে (সাংবাদিকতায়)।’

আইনের ২২ ধারায় ‘ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক জালিয়াতি’ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। ধারাটি তুলে ধরে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে জালিয়াতি করেন, তাহলে ওই ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হবে একটি অপরাধ। তিনি বলেন, এখন ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে জালিয়াতি কাকে বলে? ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে জালিয়াতি বলে কোনো সংজ্ঞা কিন্তু এখানে নেই। আপনি সংজ্ঞায়িত করেন জালিয়াতিটাকে—কোন কাজটা করলে আমার জালিয়াতি হবে, কোন কাজটা করলে আমার জালিয়াতে হবে না? এখন যদি সংজ্ঞায়িত না করেন তাহলে একেক সময় একেক সরকার আসবে একেক ভিউ (দৃষ্টিভঙ্গি) নিয়ে। তথ্যমন্ত্রী হবেন একেক ভিউ নিয়ে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হবেন, একেক জনের একেক ধরনের মাইন্ডসেট (মানসিকতা) থাকে। কেউ সাংবাদিকবান্ধব হয়, কেউ খুব বেশি সমালোচনা সহ্য করতে পারে না, ইনটলারেন্স থাকে অনেকের প্রচন্ড।…তারপরে আমাদের পলিটিক্যাল অ্যাটমোস্ফেয়ারও ইনটলারেন্স (রাজনৈতিক পরিবেশও অসহিষ্ণু)।…ইনফ্যাক্ট ১৯৯১ থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে যখন একটা সরকার পরিবর্তনের পদ্ধতি মোটামুটিভাবে চালু হয়েছে, তখন থেকেই দুই বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রচণ্ড রকমের ইনটলারেন্স (অসহিষ্ণুতা) আমরা লক্ষ করেছি। কোনো ধরনের সমালোচনা হলে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন এগুলো ছাড়া আর কোনো পন্থা উনাদের হাতে খোলা আছে বলে মনে করেন না। এ ক্ষেত্রে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে দমন করতে গিয়ে দেখা যায় সাংবাদিকেরাও এটার ভিকটিম (ভুক্তভোগী) হয়ে যায়।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, এক্ষেত্রে এ ধরনের একটা ধারা খুব মারাত্মক একটা ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে (প্রতিবেদন করার ক্ষেত্রে)। আদালত রিপোর্টিংয়ে হয়তো বা নাও হতে পারে।

আইনের ২৩ ধারায় ‘ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক প্রতারণা’ বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। এই ধারাটি তুলে ধরে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা করেন, তাহলে ওই ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হবে একটি অপরাধ। অপরাধ হলে পাঁচ বৎসর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদন্ড।

ধারাটিতে একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক প্রতারণা অর্থ কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে অথবা অনুমতি ব্যতিরেকে কোনো কম্পিউটার প্রোগ্রাম, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল ডিভাইস, ডিজিটাল সিস্টেম, ডিজিটাল নেটওয়ার্কে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো তথ্য পরিবর্তন করা, মুছিয়া ফেলা, নূতন কোনো তথ্যের সংযুক্তি বা বিকৃতি ঘটানোর মাধ্যমে উহার মূল্য বা উপযোগিতা হ্রাস করা, তাহার নিজের বা অন্য কোনো ব্যক্তির কোনো সুবিধা প্রাপ্তির বা ক্ষতি করিবার চেষ্টা করা বা ছলনার আশ্রয় গ্রহণ করা। তিনি বলেন, এটাতে হয়তো বা খুব বেশি সাংবাদিকদেরকে ধরতে পারবে না। কিন্তু ইনজেনারেল (সাধারণত) যারা মিডিয়া ব্যবহার করে, এখন মিডিয়া ব্যবহার করার সংখ্যা বাংলাদেশে জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশের মতো হয়ে গেছে। এখন গরিব জনগোষ্ঠী যারা তাদের হাতেও মোবাইল ফোন আছে, ফেসবুক ব্যবহার করছে, ইউটিউব দেখছে ও আপলোড করছে। এটা ইনজেনারেল অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ধারা।

অনুষ্ঠানে প্রথম পর্বে আলোচনায় অংশ নেন আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি শামীমা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চলনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.