কম মিষ্টি আর ছানার ঘ্রাণে অনন্য ফরিদপুরের ‘খোকা মিয়ার রসগোল্লা’

0
84
ফরিদপুরের খোকা মিয়ার রসগোল্লা

ফরিদপুর শহরের কমলাপুর মহল্লার একটি মোড়ের নাম তেঁতুলতলা। এখানকার ঐতিহ্য হয়ে টিকে আছে ‘আদি ঐতিহ্যবাহী খোকা মিয়ার মিষ্টি’ নামের দোকানটি। এখন অবশ্য এর আশপাশে আরও তিনটি মিষ্টির দোকান আছে। তবে খোকা মিয়ার রসগোল্লাই এই মোড়ের মিষ্টির মূল আকর্ষণ।

খোকা মিয়ার রসগোল্লা কেন ব্যতিক্রম? যাঁরা নিয়মিত মিষ্টি খান, তাঁদের মতে, এই রসগোল্লায় মিষ্টি কম, ছানার স্বাদ–ঘ্রাণ বেশি পাওয়া যায়, চামচে ভরে মুখে দিলে মিষ্টি খাওয়ার যে আমেজ পাওয়া যায়, তা অন্য রসগোল্লার ক্ষেত্রে ঘটে না। জেলার মানুষ তো এই মিষ্টি পছন্দ করেনই, এখানে বেড়াতে এসেও অনেকে কিনে নেন এই রসগোল্লা।

দোকানটি ৭৩ বছর আগে ১৯৫০ সালে স্থাপিত। প্রথম দিন থেকেই এই দোকানে রসগোল্লা বিক্রি শুরু হয়। শুরুতে মিষ্টির পাশাপাশি রুটি, পরোটা, সবজি ও চা বিক্রি হতো। তবে সময়ের পরিক্রমায় ও চাহিদায় রসগোল্লাতেই থিতু হন খোকা মিয়া। সঙ্গে রাখেন নিমকি। অনেকে মিষ্টির রসে নিমকি ভিজিয়ে খান।

‘খোকা মিয়া’ নামের আড়ালে যে ব্যক্তি আছেন, তাঁর নাম শেখ জহুরুল হক। তাঁর ডাকনাম খোকা। তিনি ও তাঁর বাবা শেখ ছবদাক হোসেন দোকানটি শুরু করেন। ১৯৮৮ সালে খোকা মিয়ার মৃত্যুর পর দোকানের হাল ধরেন তাঁর ছেলে শেখ আজমল হোসেন। আজমল ২০০৪ সালে মারা গেলে দোকানের হাল ধরেন খোকা মিয়ার আরেক ছেলে শেখ আমির হোসেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে এই দোকান।

শেখ আমির হোসেন বলেন, এই মিষ্টির মূল কারিগর ছিলেন দেবেন দাস নামের এক ব্যাক্তি। তিনি কমলাপুর মহল্লার কুঠিবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর সঙ্গে কাজ করার সুবাদে অন্য কারিগরেরাও রসগোল্লা বানানোর কৌশল শিখে নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পরপর দেবেন দাস মারা যান। তখন থেকে অন্য কারিগরেরা মিষ্টি বানিয়ে যাচ্ছেন।

খোকা মিয়ার মিষ্টির দোকানের সাইনবোর্ড
খোকা মিয়ার মিষ্টির দোকানের সাইনবোর্ড

তাঁদের দোকানের মিষ্টি কেন মানুষের এত প্রিয়, জানতে চাইলে শেখ আমির হোসেন বলেন, এ দোকানে কোনো রাখঢাক নেই। যা করা হয়, সবই ক্রেতার চোখের সামনে। সবাই মিষ্টি প্রস্তুত হওয়া দেখেন। ভেজালের কোনো কারবার নেই। দুধ জ্বাল দিয়ে ছানা করে সবার সামনেই মিষ্টি বানানো হয়। এখন তিনজন কারিগর মিষ্টি বানানোর কাজ করেন এখানে।

খোকা মিয়ার দোকান থেকে নিয়মিত মিষ্টি কেনেন ফরিদপুরের সালথা উপজেলার খোয়াড় গ্রামের বাসিন্দা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাঠ সহকারী মাফিকুল ইসলাম (৩২)। তিনি বলেন, মিষ্টি কম, মিষ্টির মধ্যে ছানার আসল স্বাদ পাওয়া যায়, মিষ্টি মুখে দিলে খেতেই ইচ্ছা করে, মুখ ফিরিয়ে নেন না। ইচ্ছা করলে এক বসাতেই ১৫-২০টা মিষ্টি খেয়ে ফেলা যায়।

শহরের কমলাপুর মহল্লার বাসিন্দা মাহবুব হোসেন ওরফে পিয়াল (৫৪) বলেন, ‘মিষ্টি কম বলে খাই। মিষ্টির গুণগত মান ভালো। ওরা ভালো দুধে ছানা করে মিষ্টি বানায়। এ মিষ্টি স্বাদে–গুণে অতুলনীয়।’

বেসরকারি সংস্থা ব্লাস্ট ফরিদপুরের সমন্বয়কারী শিপ্রা গোস্বামী বলেন, ‘বেশির ভাগ দোকানের মিষ্টিতে কৃত্রিম রং ও উপকরণ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এ মিষ্টিতে তা ব্যবহার করা হয় না। এ জন্য ভালো লাগে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.