‘আগে নৌকায় ভোটটা দেন, পরে আপনের ইচ্ছা’

0
122
একপর্যায়ে কেন্দ্রটিতে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকারী আনসার ও পুলিশ সদস্যরা ওই বুথের ভেতরে ঢোকেন এবং নৌকার ব্যাচধারী কর্মী এনামুলকে কক্ষের বাইরে বের করে দে

ভোট দেওয়ার গোপন কক্ষের পাশে বাইরের দিকে দাঁড়িয়ে নৌকা মার্কার মেয়রপ্রার্থীর ব্যাচ পরা একজন কর্মী এক ভোটারকে বলেন, ‘আগে নৌকা মার্কায় ভোটটা দেন। পরে আপনার ইচ্ছেমতো কাউন্সিলর যাঁকে ভালো লাগে, সেই প্রার্থীকে ভোট দেন।’

আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ১৫ নম্বর চহঠা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মহিলা–৪ নম্বর বুথ ও পুরুষ–৩ নম্বর বুথে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ওই কেন্দ্রের নম্বর ১২২।

পরে অন্য প্রার্থীর এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে নৌকার ব্যাজ পরা সেই কর্মীর পরিচয় জানা যায়। ওই কর্মীর নাম মোহাম্মদ এনামুল। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের (অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনা) ব্যবসা করেন। বাড়ি গণপাড়া এলাকায়।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চহঠা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কোনো সীমানাদেয়াল নেই। ভোট গ্রহণের সুবিধার জন্য চারপাশে কয়েকটি বাঁশের খুঁটি গেড়ে পলিথিনে সুতা বেঁধে কোনোমতে বেড়া দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই বেড়া ভেদ করে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত নৌকার প্রার্থীর কর্মীরা ভোট গ্রহণের বুথের ভেতর ঢুকছেন। অনেক কর্মী আবার জানলা দিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে ভোটারকে নির্দেশনা দিচ্ছেন।

ওই ভোটকেন্দ্রে পুরুষ-৩ ও মহিলা-৪ নম্বর বুথের ভোট গ্রহণ একটি শ্রেণিকক্ষের ভেতরে হচ্ছিল।

পুরুষ গোপন কক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে কালো কাপড়ের এপার থেকে ভেতরে যাওয়া এক ভোটারকে মোহাম্মদ এনামুল বলছিলেন, ‘আগে নৌকা মার্কায় ভোটটা দাও। তারপর অন্য মার্কা।’ এ সময় ওই বুথের ভেতরে থাকা মেয়রের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিয়োজিত এজেন্টদের কোনো প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। বুথের ভেতর টেবিলঘড়ি, হরিণ, হাতপাখা ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের এজেন্টরা ছিলেন।

একপর্যায়ে কেন্দ্রটিতে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকারী আনসার ও পুলিশ সদস্যরা ওই বুথের ভেতর ঢোকেন এবং নৌকার ব্যাচধারী কর্মী এনামুলকে কক্ষের বাইরে বের করে দেন। বের হওয়ার সময় এনামুল ওই বুথের ভেতরে নিয়োজিত নৌকা প্রতীকের এজেন্ট সাকির হোসেনকে অনেকটা শাসিয়ে বলছিলেন, ‘তুমি এখানে বসে আছ কেন? তুমি থাকবে ওইটার (গোপন কক্ষ) পাশে। মানুষকে নৌকায় ভোট দেওয়াবা আর কে কোন মার্কায় ভোট দেয়, সেটা দেখবা।’

নৌকা প্রতীকের ওই এজেন্ট সাকির হোসেন বলেন, ‘ও আমাকে বলছে ঠিকই, কিন্তু আমি তার কথা শুনি নাই, যাইও নাই।’ এরপরেই তিনি আবার বলেন, ‘মাত্র একবার গিয়েছি, আর যাইনি।’ এমন কাজ করাটা ঠিক হয়নি বলেও তিনি স্বীকার করেন। নির্দেশ প্রদানকারী নৌকা প্রতীকের ব্যাচধারী ব্যক্তি এনামুল নামের ওই ছাত্রলীগ কর্মীকে তিনি চেনেন না বলেও প্রথম আলোকে জানান।

ওই কক্ষে মহিলা–৪ নম্বর বুথের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবিদুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকেই সরাসরি ভেতরে এসে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে আমরা পুলিশের সহায়তা চেয়েছি। তারা আমাদের সাহায্য করেছে। যারা ভেতরে এসে এসব কথাবার্তা বলছিল, তাদের পরে বের করে দেওয়া হয়েছে।’

ভোটকেন্দ্রের বিদ্যালয়ের সীমানাদেয়াল না থাকায় বুথের কাছাকাছি মানুষ যাওয়া ঠেকাতে বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে কেন্দ্রটিতে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। কিছুক্ষণ পরপরই তাঁরা বাঁশি বাজিয়ে ঠেলা–ধাক্কা দিয়ে লোকজনকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছিলেন।

বুথের ভেতরে যাতে কাউকে দেখা না যায় ও নির্দেশনা দেওয়া না যায়, সে জন্য কেন্দ্রটিতে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সুমন চন্দ্র মজুমদার জানলাগুলো বাইরে থেকে বন্ধ করে দিচ্ছিলেন।

এসআই বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে আসলে আমাদের বাইরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে বাইরে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়। তবে অনেকেই ভেতরে উঁকি দিচ্ছে এবং নানাভাবে নির্দেশনা দিচ্ছে। তাদের আমরা সরিয়ে দিচ্ছি।’

চহঠা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বলেন, ‘বাইরে থেকে অনেকেই নানাভাবে চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমরা কাউকেই প্রশ্রয় দিচ্ছি না। আমাদের ওপর কোনো চাপ নেই। পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.