অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ: বিএনপি

0
101
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল ২০২৩’ অগণতান্ত্রিক, শ্রমিক ও পেশাজীবীদের স্বার্থবিরোধী, একতরফা, নিবর্তনমূলক এবং আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির স্পষ্ট বরখেলাপ।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

গতকাল সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের আলোচ্যসূচি গণমাধ্যমকে জানাতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আইনটি প্রণয়নের কোনো পর্যায়েই অংশীজনের মতামত নেওয়া হয়নি। প্রস্তাবিত আইনের পরিধি শুধু বিস্তৃত নয়, অসীম। সরকার ইচ্ছা করলেই যেকোনো শিল্প, প্রতিষ্ঠান, পেশা ও সেবাকে এই আইনের আওতায় এনে ধর্মঘট নিষিদ্ধ করে তা অমান্য করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বানাতে পারবে।

যুগ যুগ ধরে আন্দোলন করে শ্রমজীবী জনগণ যা কিছু অধিকার অর্জন করেছিল, তা এই আইন দিয়ে নাকচ করে দেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, প্রচলিত শ্রম আইনে কোনো ধর্মঘট জনজীবন কিংবা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করলে তা নিষিদ্ধ করে সংশ্লিষ্ট বিরোধটি শ্রম আদালতে পাঠানোর কথা বলা আছে। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, সরকার প্রয়োজন মনে করলেই লক্ষ কোটি শ্রমজীবী, পেশাজীবী মানুষকে সারা জীবন ধর্মঘট নিষিদ্ধ ঘোষণার আওতায় রাখতে পারবে। কিন্তু তাঁদের ন্যায্য সমস্যা সমাধান কিংবা প্রাপ্য আদায়ের কোনো বিকল্পের কথা আইনে রাখা হয়নি।

মির্জা ফখরুলের ভাষ্য, বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে আইএলওর কনভেনশন নম্বর ৮৭ অনুসমর্থন করেছে। যেখানে ধর্মঘটের অধিকারকে সংগঠিত হওয়ার অধিকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই কনভেনশনে স্বাধীনভাবে সংগঠিত হওয়ার অধিকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত বিলে দেশের বিপুলসংখ্যক শিল্প, প্রতিষ্ঠান ও সেবা খাতকে ‘অত্যাবশ্যক পরিষেবা’ চিহ্নিত করে শ্রমজীবী মানুষের ধর্মঘটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার অর্থ হলো তাদের সংগঠিত হওয়ার অধিকারও কেড়ে নেওয়া।

একই বছর বাংলাদেশ আইএলওর কনভেনশন নম্বর ৯৮ অনুসমর্থন করেছে। এই কনভেনশনে স্বাধীনভাবে যৌথ দর–কষাকষির অধিকার নিশ্চয়তা দিয়েছে। সবাই জানে ধর্মঘটের অধিকার হলো যৌথ দর–কষাকষির প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। ‘অত্যাবশ্যক পরিষেবা’ বিলে ধর্মঘটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার অর্থ হলো যৌথ দর–কষাকষির অধিকারও কেড়ে নেওয়া। এটাও সরকারের আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির স্পষ্ট বরখেলাপ এবং শ্রমিক সংগঠন ও আন্দোলনকে অকার্যকর করে মালিকদের নির্যাতন, বঞ্ছনা ও শোষণ সুরক্ষার হাতিয়ার।

আইএলওর সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ওই প্রতিষ্ঠানে গঠনতন্ত্র মানতে বাধ্য বলেও মনে করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, যেখানে বলা হয়েছে কোনো সদস্যরাষ্ট্র কোনো কনভেনশন অনুসমর্থন করলে তার প্রতিটি বিধান বাস্তবায়ন করবে। রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন কনভেনশনের কোনো বিধানের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ হলে সেই আইন পরিবর্তন করতে হবে। অথচ প্রস্তাবিত আইনে অনুসমর্থনকৃত কনভেনশনের বিধান অগ্রাহ্য করে সরকার আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করছে।

বিএনপি মনে করে, প্রস্তাবিত আইনটি শুধু শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ ও অধিকারকেই ক্ষুণ্ন করবে না, এটি সামগ্রিকভাবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও জনগণের সংবিধান সম্মত প্রতিবাদের অধিকার পরিপন্থী। প্রস্তাবিত ‘অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল ২০২৩’ প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ‘কুখ্যাত আইন’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ‘কুখ্যাত আইন’ আখ্যা দিয়ে বিএনপির মহাসচিব দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের মতামত জানাতে গিয়ে আরও বলেন, সভা মনে করে, এই কুখ্যাত আইন বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীন মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায়। এটি গণতন্ত্রকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সরকার এই আইনের সুযোগ নিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী, সংবাদকর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করছে।

ফ্যাসিবাদী শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করার লক্ষ্যে এই নিবর্তনমূলক আইনকে হাতিয়ার হিসেবে সরকার ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা আট মাসের বেশি সময় কারাগারে আটক রয়েছেন এবং ইউএনবি সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে একই আইনে মামলার বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে বলেও জানান মির্জা ফখরুল। তিনি অবিলম্বে কারাগারে আটক শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরাসহ সব বন্দীর মুক্তি ও এই আইনের অধীন সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.