বিএনপি সংসদে নেই, নির্বাচনকালীন সরকারের চিন্তায়ও নেই: প্রধানমন্ত্রী

0
197
জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে আজ সোমবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছবি: পিআইডি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নির্বাচনকালীন সরকারে সংসদে থাকা দলগুলো চাইলে তাদের কাউকে কাউকে মন্ত্রিত্ব দেওয়ার ইঙ্গিত করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে বিএনপির মতো সংসদে যারা নেই, তাদের বিষয়টি চিন্তায় নেই বলে তিনি জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘পার্লামেন্টে যারা আছে, তাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছা প্রকাশ করে যে নির্বাচনকালীন সরকারে তারা আসতে চায়, আমরা নিতে রাজি আছি।’

আজ সোমবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সম্পর্কে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনটি বিটিভিসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। শুরুতে প্রধানমন্ত্রী তিন দেশ সফরে অর্জন, সেখানে করা চুক্তি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে লিখিত বক্তব্য দেন। এরপর তিনি সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন।

সংবাদ সম্মেলনে একেবারে শেষ প্রশ্নটি ছিল সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকালীন সরকারটা কেমন হবে। এতে বিরোধী দলের কেউ থাকবে কী না। বিএনপি আন্দোলন নিয়ে অনুভব করছেন কীনা। এর জবাবে প্রথমেই হাসতে হাসতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন কি আমি কানব। ওই নির্বাচন আসতেছে ভয় পাব? কেন ভয় পাব? আমি জনগণের জন্য কাজ করছি। জনগণ যদি ভোট দেয় আছি। না দিলে নাই।’

বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট মিনিস্টার পদ্ধতি অনুসরণ করে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সেখানে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও একইভাবে নির্বাচন হবে।

নির্বাচনকালীন সরকারে বিরোধীদের রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এটুকু উদারতা দেখাতে পারি। পার্লামেন্টে যারা আছে, তাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছা প্রকাশ করে যে নির্বাচনকালীন সরকারে তারা আসতে চায়, আমরা নিতে রাজি আছি। এই উদারতা আগে আমরা দেখিয়েছি। এমনকি ২০১৪ সালে আমি খালেদা জিয়াকেও আহ্বান করেছিলাম। তারা তো আসেনি। এখন তো তারা নাইও পার্লামেন্টে। কাজেই ওদের নিয়ে চিন্তারও কিছু নাই।’

‘মাইক লাগিয়ে আন্দোলন করেই যাচ্ছে’

বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা মাইক লাগিয়ে আন্দোলন করেই যাচ্ছে। সরকার হটাবে! আমরা তো তাদেরকে কিছু বলছি না? আমরা যখন অপজিশনে (বিরোধীদলে) ছিলাম আমাদের কী নামতে দিয়েছে? গ্রেনেড হামলা করেও হত্যা করার চেষ্টা করেছে। আমাদের ২১ হাজার নেতা-কর্মী হত্যা করেছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে।’

বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচিতে জ্বালাও-পোড়ায়ের ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন ঠেকাতে তারা ৫০০ স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছে। সাড়ে তিন হাজার লোক আগুনে পোড়ানো হয়েছে। ৩ হাজার ৮০০ গাড়ি, ২৭টি ট্রেন, নয়টি লঞ্চ, ৭০টি সরকারি অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি বলে দিয়েছি আন্দোলন করুক, কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু জ্বালাও-পোড়াও যদি কিছু করতে যায়, কোনো মানুষকে যদি আবারও এ রকম পোড়ায়, তবে তাকে ছাড়ব না। মানুষের ক্ষতি আর করতে দেব না।’

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘পোড়া মানুষগুলি নিজের সন্তানকে কোলে নিতে পারেন না। নিজের চেহারা নিয়ে কোথাও যেতে পারেন না। কী বীভৎস অবস্থা সৃষ্টি করেছে এই বিএনপি-জামায়াত?

২০০৮ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় ঐক্যজোট ২৯টি সিট পেয়েছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এঁরা আবার বড় বড় কথা বলে! আর দালালি? কার পয়সায় এই আন্দোলন করছে? কোন খান থেকে টাকা পাচ্ছে?’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ কী এত অন্ধ হয়ে গেছে, চোখে দেখে না? হাজার হাজার কোটি টাকা তো লুট করে নিয়েই গেছে। আর কাদের মদদে করছে, সেটা একটু খোঁজ নেন না? এত টাকা কোথায় পাচ্ছে? যে যে লোক নিয়ে আসে। প্রতিদিন মাইক লাগিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছে। এটা তো এমনি এমনি বিনা পয়সায় হচ্ছে না। কত টাকা দিচ্ছে, কত লোক আনবে? মোটরসাইকেলে কতজন চড়বে, সেসব হিসাব তো আছে।’

গাজীপুরে রাস্তা বন্ধ করে নির্বাচনী সভা করা সংক্রান্ত একটি খবরের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি যে প্রতিদিন হার্ট অব দ্যা সিটিতে, রাস্তা বন্ধ করে তাদের অফিসের সামনে মিটিং করে! এই যে জ্ঞানী লোক কথা বলেন, এই দৃশ্য চোখে পড়ে না? প্রেসক্লাবের সামনে, পুরানা পল্টনে সব জায়গায় রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করছে, এগুলো চোখে পড়ে না কেন?’

বিএনপির আন্দোলন থেকে দলটির নেতারা লাভবান হচ্ছে এমন ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  ‘কিছু লাভবান হচ্ছে, হোক। যত পারুক আন্দোলন করুক। আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি আমার জনগণের সাথে আছি। জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। জনগণের আস্থা বিশ্বাসই আমার একমাত্র শক্তি।’

বাবা, মা, ভাইসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যার কথা উল্লেখ করে আবেগতাড়িত হন প্রধানমন্ত্রী। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার তো হারাবার কিছু নেই। মা বাবা ভাই সব হারিয়েছি। আমি আমার দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘যারা আমাদের দুর্বলতা খোঁজে আর অর্থের হিসেব নেয়, মানি লন্ডারিং তো করেছে খালেদা জিয়া তার দুই ছেলে। ৪০ কোটি টাকা তো উদ্ধার করে নিয়ে আসছি। এখনো বিএনপি নেতাদের টাকা বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে জমা আছে। কারও কারও টাকা ফ্রিজ করা আছে। মানি লন্ডারিং করে টাকা বিদেশি টাকা নিয়ে বড় বড় নাম কিনছে সেটাও একটু খোঁজে বের করেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যত বেশি কাজ করে তার পিছেই লেগে থাকে। এটাই তো নিয়ম। তো এগুলো তিনি গুরুত্ব দেন না।

মানুষের কল্যাণ করাই তাঁর কাজ উল্লেখ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অনেকের এটা পছন্দ হবে না। কারণ আমাদের স্বাধীনতার বিরোধী যারা করেছে, যারা গণহত্যায় সমর্থন করেছে, জাতির পিতাকে যারা হত্যা করেছে তাদের এগুলো পছন্দ হবে না। তারা আমার বিরুদ্ধে শত্রুতা করেই যাবে।’

নিজের জীবনের নিরাপত্তা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো বোমা প্রুফ হয়ে গেছি। বোমা পুতেও মারতে পারে নাই। গুলি সরাসরি করেছে, তাও আমি মরি নাই। গ্রেনেড হামলা করেছে, তাও মরি নাই। যত চেষ্টা করুক। আল্লাহ তায়ালা কাজ দেয়। আল্লাহ মানুষকে একটা কাজ দেয়। সে কাজটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহই রক্ষা করেন।’

প্রধানমন্ত্রী আরেক প্রশ্নের জবাবে আবারও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দেশ থেকে কোনো কিছু কিনবেন না বলে জানান। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে দুটি এ ধরনের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন।  তবে এর বিস্তারিত আর কিছু বলতে চাননি তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.