তিন কারণে উচ্চ ঝুঁকিতে পার্বত্য অঞ্চল

0
18

পার্বত্য চট্টগ্রাম (রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি) ও কক্সবাজারে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ কমছেই না। রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে তিন বছর ধরে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। বান্দরবানে ২০২৩ সালে রোগীর সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে কম।

তবে এই সংখ্যা ২০২১ সালের তুলনায় অনেক বেশি। কোনো এলাকায় এক বছরে প্রতি হাজার মানুষের মধ্যে একজনের বেশি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হলে তা উচ্চ ঝুঁকির এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়। দেশে ম্যালেরিয়া সংক্রমণের বেশি ঝুঁকিতে বান্দরবান ও রাঙামাটি। খাগড়াছড়িতে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক কম। তবে পার্বত্য জেলা হওয়ায় এখানে ঝুঁকি কম নয়।

মাঠপর্যায়ের চিকিৎসক, কীটতত্ত্ববিদ ও গবেষকদের ভাষ্যমতে, ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির পেছনে তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, পার্বত্য এলাকায় বিতরণ করা কীটনাশকযুক্ত মশারি মশা প্রতিরোধে কাজ করছে না। দ্বিতীয়ত, পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকায় সংক্রমণ বেশি হওয়ার পরও প্রতিবেশী দেশগুলোর দিকে নজরদারির অভাব। তৃতীয়ত, প্রকৃতি, মশা ও মানুষের আচরণে পরিবর্তন।

এমন পরিস্থিতিতে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছরের মতো আজ বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাপী ম্যালেরিয়া দিবস পালন করা হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য– ন্যায়সংগত বিশ্বের জন্য ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই আরও গতিশীল করতে হবে।

২০৩০ সালের মধ্যে সরকার দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূল করতে চায়। তবে রোগটি বৃদ্ধির প্রবণতা সরকারের লক্ষ্য পূরণে বাধা হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

অ্যানোফিলিস জাতীয় মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া হয়। দেশে অন্তত ৩৭ প্রজাতির অ্যানোফিলিস মশা রয়েছে। এর মধ্যে সাতটির বেশি প্রজাতি বেশি ম্যালেরিয়া ছড়ায়। সরকারের ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১৩টি জেলা ম্যালেরিয়াপ্রবণ। এর মধ্যে উচ্চ ঝুঁকিতে রাঙামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজার। দেশের মোট ম্যালেরিয়া সংক্রমণের ৯৫ শতাংশের বেশি এই তিন জেলায়। বাকি ১০ জেলা চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম, সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার তুলনামূলক নিম্ন ঝুঁকির এলাকা।
গত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সময়ে দেশে ১ হাজার ১৫৮ রোগী শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে রাঙামাটিতে সর্বোচ্চ ৫০৩, বান্দরবানে ৪৬০ ও কক্সবাজারে ১৩৮ জন রয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হচ্ছে তিন শ্রেণির মানুষ– যারা বনে গাছ কাটে, জুম বাগান রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং সীমান্তে চোরাচালানে জড়িত। তাদের মশারি দিয়েও রক্ষা করা সম্ভব নয়।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কীটতত্ত্ববিদ মুশতাক হোসেন বলেন, যেসব অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব সক্রিয়, সেখানে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সম্ভবত ওষুধ অকার্যকর হয়ে গেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.