হাতিরঝিল থানায় জিডির বিষয়ে যা বললেন অপু বিশ্বাস

0
126
অপু বিশ্বাস

নিজের ইউটিউব চ্যানেল হ্যাক করে বন্ধ করার অভিযোগ দিয়ে প্রযোজক সিমি ইসলাম কলি চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস ও তাঁর ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক পেজের অ্যাডমিন জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এই প্রযোজক জানিয়েছেন, আশ্বাস দিয়েও চ্যানেল ফেরত না পাওয়ায় বাধ্য হয়েই সে সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

খবরটি নিশ্চিত করে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আওলাদ হোসেন বলেন, ‘১৮ সেপ্টেম্বর রাতে সিমি ইসলাম কলি নামের একজন এসে চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস ও তাঁর চ্যানেল, ফেসবুক পেজের অ্যাডমিন জাহিদুল ইসলামের নামে সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা কলির ইউটিউব চ্যানেল হ্যাক করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত করছি।’
অপু বিশ্বাস তাঁর বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরির বিষয়টি অবগত। মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি  বলেন, ‘আবেদনকারী তো আমার যোগ্যই নয়। তাঁর সম্পর্কে কী বলব? আমার অ্যাডমিনের যোগ্যতার কাতারে সে। তাই আমার অ্যাডমিনই বিষয়টি দেখছেন। আমার  চ্যানেলের কনটেন্ট চুরি করে তিনিই আবার আমাদের বিরুদ্ধে জিডি করেন। এটি হাস্যকর। তাঁর চ্যানেল তো সাসপেন্ড করেছে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ। এখানে আমাদের কী?’

অপু বিশ্বাস আরও বলেন, ‘শুনেছি, আমাকে হেয় করে কথা বলেন তিনি। ওনার কী যোগ্যতা আছে আমাকে নিয়ে কথা বলার? কোথায় আগরতলা, কোথায় চৌকির তলা! এসব মানুষের জন্যই তো আমাদের চলচ্চিত্রের এই দুর্দশা। এঁদের কারণেই প্রতারণার শিকার হয়ে সিনেমায় নতুন প্রযোজকেরা বেশি দিন টিকতে পারেন না এখানে। আমাকে বলা হয়, আমি নাকি ফিতা কাটি নায়িকা। আরে যোগ্যদেরই তো এ ধরনের অনুষ্ঠানে ডাকা হয়। তারকা ভ্যালুর কারণেই আমাদের মতো তারকাদের দিয়ে এ ধরনের অনুষ্ঠান করা হয়। দেখেন না, ক্রিকেটের বড় বড় তারকাকেও নতুন প্রতিষ্ঠানে উদ্বোধন, ফিতা কাটতে ডাকা হয়।’

অপু বিশ্বাস
অপু বিশ্বাস, ছবি : অপু বিশ্বাসের সৌজন্যে

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘তাহলে তাঁকে ডাকে না কেন? কারণ, ওনার সেই যোগ্যতায় নেই। আমাকে নিয়ে কথা বলার সাহস তাঁকে কে দিয়েছে?’
‘অপু বিশ্বাস’, ‘অপু বিশ্বাস অফিশিয়াল’ নামে দুটি ইউটিউব চ্যানেল ও অপু বিশ্বাসের ফেসবুকের দুটি পেজের অ্যাডমিন জাহিদুল ইসলাম।

তিনি জানান, মাস দেড়েক আগের ঘটনা। দেখতে পান, ‘অপু বিশ্বাস’ ও ‘অপু বিশ্বাস অফিশিয়াল’ থেকে দুটি কনটেন্ট হুবহু কপি করে ‘এসকে ফিল্মস ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হচ্ছে। পরে জানতে জানতে পারেন, এই চ্যানেলের মালিক সিমি ইসলাম কলি। তিনি নাকি প্রযোজক ও নায়িকা। আগে তাঁকে চিনতেন না। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমাদের চ্যানেলের কনটেন্ট আমি নিয়ম করে একটা স্ট্রাইক মারি। এর তিন–চার দিন পর দেখি, আরও তিন-চারটি  ভিডিও তাঁর চ্যানেলে চালাচ্ছে। পরে আমি আরও স্ট্রাইক মারি। এরপর ইউটিউব টিম যাচাই–বাছাই করে ওনার চ্যানেল থেকে আমার ভিডিওগুলো সরিয়েছে ফেলে।’

কলি ফোন দিয়ে তাঁকে হুমকিসহ বাজে আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ জাহিদুলের। বলেন, ‘ফোন দিয়েই তিনি আমাকে বলেন, “আপনি কে?” অপরিচিত নম্বর। আমি পাল্টা বলি, আপনি কে? তিনি বলেন, “আমি সিমি ইসলাম কলি। চলচ্চিত্র প্রযোজক।” আমি তখন বলি, বলেন। তখন তিনি আমাকে বলেন, “তুই কি আমার চ্যানেল স্ট্রাইক দিয়েছিস? তুই আমার চ্যানেলে স্ট্রাইক দেওয়ার কারণে আমার চ্যানেল বাদ হয়ে গেছে।” আমি বললাম, আপু, স্ট্রাইক খেলে তো চ্যানেল বাদ হবেই। আপনি অন্য চ্যানেল থেকে ভিডিও কপি করে চালাচ্ছেন। আপনি অনুমতি নিয়েছেন? তখন তিনি বলেন, “আমি প্রযোজক, আমি নায়িকার ভিডিও চালাতেই পারি। অনুমতি নিতে হবে কেন?” তখন আমি বলি, না, ইউটিউবে এ ধরনের কোনো রুল নেই যে প্রযোজক নায়িকার ভিডিও ব্যবহার করলে কোনো ক্ষতি হবে না। এই ফুটেজ তো আপনার কোনো সিনেমার নয়। ফুটেজগুলো অপু বিশ্বাসের সন্তান আব্রামের ও পরীমনির ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের। আপনি অনুমতি ছাড়া ভিডিও ব্যবহার করেছেন, আমি স্ট্রাইক দিয়েছি। এখন আপনি ইউটিউব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। এরপরও তিনি বলেন, “আমি এত কিছু বুঝি না। তুই স্ট্রাইক তুলে দে।” এরপর আমি ফোন রেখে দিয়েছি। এরপর থেকেই তিনি আমাকে নানাভাবে ফোনে, হোয়াটসঅ্যাপে বিরক্ত করতে থাকেন। কখনো কখনো হুমকিও দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এর কিছুদিন পরে আমাকে আবার ফোন দিয়ে তিন বলেন, “তুই কি স্ট্রাইকগুলো তুলবি না?” আমি বলি, না, আমি তুলব না। কারণ, আমি এসবের অ্যাডমিন, মালিক নয়। তখন তিনি বলেন, “দেখ, বেয়াদবি করার কারণে নায়িকা দিঘীকে হাইকোর্ট দেখিয়েছি। তুই যদি স্ট্রাইক না তুলিস, তোকে জেল খাটাব।” আমি তাঁকে বললাম, অপরাধ তো করেছেন আপনি। উল্টো আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন কেন? এরপর অপু বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলছি বলে ফোন রেখে দেন তিনি। চার-পাঁচ দিন পরে জানতে পারলাম আমাদের নামে জিডি করেছেন ওই প্রযোজক।’

অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস।ছবি: ফেসবুক
অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস। ছবি: ফেসবুক

এ ব্যাপারে সিমি ইসলাম জানান, দুটি ভিডিও ফুটেজের কথা বলা হচ্ছে, প্রথমটি পরীর ছেলের জন্মদিনে অপু বিশ্বাস উপহার দেওয়ার বিষয়। আরেকটি অপু বিশ্বাস ও তাঁর ছেলের দুষ্টুমির একটি ভিডিও ছিল। বলেন, ‘ভিডিও দুটি আমি পাই আমাদের প্রযোজকদের একটি গ্রুপ থেকে। একদমই ভালো লাগা থেকে ভিডিও দুটি আপ করি। চ্যানেল স্ট্রাইক মেরে বন্ধ করা হলে জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলি। সে আমাকে অপু বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। আমি অপু বিশ্বাসের কাছে ভুল স্বীকার করে তাঁর ছোট হিসেবে ক্ষমা চেয়ে চ্যানেলের স্ট্রাইক তোলার জন্য বলি। তিনি ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আমাকে আশ্বাস দিয়ে জাহিদুলের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। জিডি করার আগে প্রায় ২০ দিন ধরেই তাঁর পেছনে ঘুরেছি। দেব, দিচ্ছি আবার বলে কী, এই কাজ করতে সময় লাগবে, অনেক সমস্যা আছে—এভাবে নানা ধরনের টালবাহানা করেই আসছিলেন। বিষয়টির সমাধান করতে চলচ্চিত্রের অনেকেরই কাছেই গিয়েছি। আশ্বাস দিলেও কাজ হয়নি। আর কত জাহিদুলের পিছে ঘুরব? চ্যানেলটি ফিরে পেতে বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি।’

‘ফিতা কাটা নায়িকা’—অপু বিশ্বাসের উদ্দেশে এমন কথা বলা প্রসঙ্গে এই প্রযোজক বলেন, ‘এটি আমি রাগের বশীভূত হয়ে বলে ফেলেছি। কারণ, ছোট্ট এই বিষয়টি নিয়ে অপু ও তাঁর অ্যাডমিনের কাছে এত ধরনা দিয়েছি, এরপরও কাজ হয়নি। তাঁদের ব্যবহারে আমি মানসিকভাবে আহত হয়েছি। তাই কথা প্রসঙ্গে বিষয়টি আমার মুখে থেকে বেরিয়েছে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.