হবিগঞ্জ বিএনপির নেতাদের দাবি, ৬৩ নেতা-কর্মীর শরীর থেকে গুলি অপসারণ করা হয়েছে

0
118
সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে।

হবিগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ৬৩ নেতা-কর্মীর শরীর থেকে গুলি অপসারণ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন দলের নেতারা। তাঁদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পাঁচজনকে সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে গতকাল শনিবার রাতে জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। এ সময় জেলা মহিলা দলের এক নেত্রীর স্বামীকে পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন নেতারা। অনেকে গ্রেপ্তারের ভয়ে আত্মগোপন করেছেন। শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় অবস্থিত জেলা বিএনপির কার্যালয় আজ রোববার তালাবদ্ধ দেখা গেছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জি কে গউছ বলেন, গতকালের ঘটনায় তাঁদের প্রায় ৩০০ নেতা-কর্মী আহত হন। তাঁদের মধ্যে দেড় শতাধিক গুলিবিদ্ধ। গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে নেতা-কর্মীরা সরকারি হাসপাতালে যাননি।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে হবিগঞ্জ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এম আওয়াল (৪৩), যুবদল সদস্য নুর উদ্দিন (৩৫), সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আমিন (২৮), যুবদল কর্মী সায়মন (২৮) ও লিমনের (২৫) অবস্থা গুরুতর। তাঁরা সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। চিকিৎসকেরা বলেছেন, তাঁদের অস্ত্রোপচার লাগবে।

জি কে গউছ আরও বলেন, গতকাল রাতে আহত ব্যক্তিদের জন্য তাঁর বাসায় স্থাপন করা অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পে ক্যাম্পে রাতভর চিকিৎসা চলে। সেখানে ৫৮ জনের শরীর থেকে গুলি অপসারণ করা হয়। এ ছাড়া সিলেটে পাঁচজনের শরীর থেকে গুলি অপসারণের পর তাঁরা সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হবিগঞ্জে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধলে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে রণক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। গতকাল শনিবার বিকেলে
হবিগঞ্জে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধলে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে রণক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। গতকাল শনিবার বিকেলে

বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বিকেল চারটায় হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করে। বিকেল পাঁচটার দিকে সমাবেশস্থল থেকে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়কে আসামাত্রই হবিগঞ্জ সদর থানার একদল পুলিশ বাধা দেয়। এ নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করলে বিএনপির নেতা-কর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাসও ছোড়ে। থেমে থেমে এ সংঘর্ষ প্রায় দুই ঘণ্টা চলতে থাকে। পুলিশ মুহুর্মুহু কয়েক শ গুলি ছুড়ে। এ সময় শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শহরের প্রধান সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকে সংঘর্ষের পুরোটা সময়।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ১০ থেকে ১২ জন গতকাল হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে তাঁরা গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসেন। অনেকেই বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসা নেন। কেউ কেউ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জি কে গউছের বাসভবনে স্থাপন করা অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পে চলে আসেন।

পুলিশের সংঘর্ষের পর হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির কাযালয়ের সামনে এভাবেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল ইট–পাটকেল।
পুলিশের সংঘর্ষের পর হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির কাযালয়ের সামনে এভাবেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল ইট–পাটকেল।

হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হবিগঞ্জ সদর সার্কেল) খলিলুর রহমান আজ দুপুরে বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের হামলায় তিনিসহ পুলিশের ৩০ থেকে ৩৫ সদস্য আহত হয়েছেন। অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিএনপির লোকজন পুলিশের ওপর ককটেল বিস্ফোরণ করে এ ঘটনার সূত্রপাত করে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। কতজন নেতা-কর্মী আটক হয়েছেন, তা জানতে চাইলে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশ কয়েকজন আটক আছেন। তাঁরা জড়িত কি না, তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

এদিকে গতকাল মধ্যরাতে হবিগঞ্জ শহরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাসাবাড়িতে ব্যাপক তল্লাশি চালায় পুলিশ। শহরের মোহনপুর এলাকায় জেলা মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া খানমের বাসাতেও অভিযান চালানো হয়। এ সময় এ বিএনপি নেত্রীকে না পেয়ে তাঁর স্বামী সাজন আহমেদকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘রাতভর পুলিশ জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে অভিযান চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি উপজেলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে একই রকমের অভিযান চালানোর অভিযোগ আমরা পেয়েছি।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.