স্ত্রীকে হত্যার পর নিজেকে ‘মৃত’ দেখিয়ে দুর্গম চরে আত্মগোপন, অবশেষে গ্রেপ্তার

0
84
১২ বছর আগে স্ত্রীকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ওসমান আলী। গতকাল বুধবার রাতে জামালপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে

ছুরিকাঘাতে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে মো. ওসমান আলীর বিচার চলছিল আদালতে। হঠাৎ একদিন পরিবারের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হলো, কিডনিরোগে মৃত্যু হয়েছে আসামি ওসমান আলীর। এর ছয় বছর পর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার যমুনা নদীর দুর্গম চরে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।

গতকাল বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে জামালপুরের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান তাঁর কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। গ্রেপ্তার মো. ওসমান আলী ইসলামপুর উপজেলার মন্নিয়ারচর গ্রামের মো. বাচ্চু ফকিরের ছেলে। হত্যার শিকার লাকী বেগম একই গ্রামের আবদুল রহিমের মেয়ে। ওসমান আলীকে গতকাল বিকেলে ইসলামপুরের দুর্গম চর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, ২০১২ সালের ১৯ আগস্ট লাকী বেগম তাঁর স্বামী ওসমান আলীর কাছে এক হাজার টাকা চান। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া লাগে। একপর্যায়ে ওসমান স্ত্রীকে বাড়ির একটি গোয়ালঘরে পাশে টিউবওয়েলের পাড়ে নিয়ে ছুরিকাঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই লাকী বেগমের মৃত্যু হয়। ২০১২ সালের ২১ আগস্ট নিহত গৃহবধূর বাবা আবদুল রহিম ইসলামপুর থানায় একটি মামলা করেন। সেই থেকে ওসমান আলী পলাতক ছিলেন।

জীবিত আসামিকে মৃত দেখিয়ে মামলাটি শেষ করার অপচেষ্টা চলছিল। কিন্তু ওসমান আলীকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে মৃতপ্রায় মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হলো।

মো. কামরুজ্জামান, পুলিশ সুপার, জামালপুর

 

এদিকে পুলিশ মামলার তদন্ত শেষে একমাত্র আসামি ওসমান আলীকে অভিযুক্ত করে ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এর পর থেকে আদালতে মামলার বিচারকাজ চলছিল। এদিকে ওসমান আলী কিডনিজনিত সমস্যায় ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেছেন বলে পরিবার আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতকে অবহিত করে।

পুলিশ বলছে, আসামির মৃত্যুর বিষয়টি পুলিশের কাছে সন্দেহ হয়। ফলে বিষয়টি নিয়ে নিবিড়ভাবে তদন্ত করতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ ওসমান আলীর জীবিত থাকার বিষয়টি জানতে পারে। পরে বিভিন্ন মাধ্যম ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাঁর অবস্থান শনাক্ত করা হয়। গতকাল পুলিশের একটি দল গাইবান্ধার সাঘাটা ও ইসলামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী যমুনা নদীর দুর্গম চরে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, স্ত্রীকে হত্যার দায়ে সাজার ভয়ে প্রায় ছয় বছর ধরে মৃত হিসেবে আত্মগোপনে ছিলেন ওসমান আলী। জীবিত আসামিকে মৃত দেখিয়ে মামলাটি শেষ করার অপচেষ্টা চলছিল। কিন্তু ওসমান আলীকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে মৃতপ্রায় মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হলো। গতকাল রাতেই আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.