সুন্দরবনে ঢুকতে অনুমতিপত্রের সঙ্গে লাগবে লাল রং লাগানো নৌকা

0
107
সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতিপত্র নবায়ন করতে প্রতিদিন এভাবে ফরেস্ট স্টেশনের সামনে নৌকা নিয়ে ভিড় করছেন বনজীবীরা। কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের সামনে

সুন্দরবন পশ্চিম ও পূর্ব বন বিভাগের আওতাধীন জেলে বাওয়ালিদের সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য ১ জুলাই থেকে অনুমতিপত্র (বিএলসি) নবায়ন শুরু হয়েছে। পুরো জুলাই মাসে এ কার্যক্রম চলবে। এরপর অনুমোদিত নৌকা নিয়ে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে জেলেরা সুন্দরবনে ঢুকতে পারবেন। তবে এবার অনুমতিপত্রের সঙ্গে নৌকার দুই মাথায় কাঠের গায়ে লাল রঙের প্রলেপ দিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য অনুমোদিত নৌকা চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের বনরক্ষীরা।

যে নৌকাগুলোতে লাল রং দেওয়া থাকবে, শুধু সেই নৌকাগুলো নিয়ে জেলেরা মাছ ও কাঁকড়া ধরতে সুন্দরবনে যেতে পারবেন বলেন জানান কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায়। তিনি বলেন, বনজীবীরা সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতিপত্র (বিএলসি) নবায়ন করার সময় তাঁদের ব্যবহৃত নৌকার পরিমাপ অনুযায়ী সরকারি রাজস্বের টাকা দিচ্ছেন। এ কারণে অনুমতিপত্র নবায়নের সঙ্গে সঙ্গে নির্দিষ্ট নৌকার গায়ে লাল রং দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যাতে যে নৌকার মাপে রাজস্ব দেওয়া হচ্ছে, তার বাইরে অন্য কোনো নৌকা সুন্দরবনে যেতে না পারে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর জুলাই মাসে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জেলে–বাওয়ালিদের বনে প্রবেশের অনুমতিপত্র নবায়ন করা হয়। প্রায় ১২ হাজার বনজীবীকে সুন্দরবন থেকে সম্পদ আহরণের অনুমতি দেয় বন বিভাগ। এ বছর সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, ২৫ মণ ধারণক্ষমতার একটি নৌকার জন্য ১৫ টাকা হারে রাজস্ব দিতে হচ্ছে বনজীবীদের। এই অনুমতিপত্রের মেয়াদ আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। তবে অনুমতিপত্রধারীদের মধ্যে সুন্দরবনকেন্দ্রিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত, এমন পাঁচ শতাধিক বনজীবীর তালিকা করে তাদের অনুমতিপত্র নবায়ন না করে বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন বিভাগ।

সরেজমিনে সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনে দেখা যায়, কয়েকজন বনজীবী তাঁদের নৌকা নিয়ে ফরেস্ট স্টেশনের সামনে শাকবাড়িয়া নদীর ঘাটে অপেক্ষা করছেন। বনরক্ষীরা প্রতিটি নৌকার মাপ নিয়ে সেটি আবার খাতায় লিপিবদ্ধ করছেন। বনরক্ষীদের একজন লাল রঙের পাত্র নিয়ে পরিমাপ করা নৌকার দুই মাথায় রং লাগিয়ে দিচ্ছেন।

সেখানে কথা হয় কয়রা গ্রামের জেলে আবদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘জুন থেকে তিন মাস আমাগের বনে ঢোকার অনুমতি নাই। আমার নৌকা-জাল মেরামত করে ফেলিছি। আজ নৌকা নিয়ে অনুমতিপত্র নবায়ন করতে আইছি। নবায়ন হলি আগামী সেপ্টেম্বর থেকে বনে যাইতে পারব।’

অনুমতিপত্র নবায়ন করতে আসা আরেক জেলে খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমাগের বন-বাদা করে খেতে হয়। বর্তমানে সুন্দরবনে যাওয়া বন্ধ থাকার কারণে খেয়ে না খেয়ে ঋণে জর্জরিত হয়ে গেছি। আগেভাগে অনুমতি নিতি পারলি সুন্দরবনে ঢোকার অনুমতি দিলেই বনে ঢুকতি পারবানে। এবার নৌকায় লাল রং দিয়ে দিচ্ছে। নৌকা আর বদলানোরও সুযোগ নেই।’

সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রয় বলেন, ‘গত বছর আমার স্টেশনের আওতায় ৯৭৫টি বনজীবী নৌকার অনুমতিপত্র ছিল। এর মধ্যে বিভিন্ন সময় সুন্দরবনকেন্দ্রিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকায় ৪৪টি অনুমতিপত্র এ বছর নবায়ন না করে বাতিল করেছি। এ ছাড়া জেলেদের অনুমতিপত্র নবায়নের জন্য কারও মাধ্যম না ধরে সরাসরি নৌকা নিয়ে ফরেস্ট স্টেশনে আসতে নির্দেশ দিয়েছি। এতে জেলেদের প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না।’

সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ জেড এম হাসানুর রহমান বলেন, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবনে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। তবে পুরো সুন্দরবন এলাকা সংরক্ষিত। যে কেউ চাইলে বনে ঢুকতে পারেন না। প্রবেশের আগে সরকারি রাজস্ব পরিশোধ করে অনুমতি নিতে হয়। অনেক ফরেস্ট স্টেশন থেকে জেলেনৌকা চিহ্নিত করতে রং লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এটা ভালো উদ্যোগ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.