ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিতে যাচ্ছে রুশ বাহিনী

0
71
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের যুদ্ধক্ষেত্রে একটি হোয়িৎজার কামানের কাছে দেশটির একজন সেনা সদস্য। ১৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধক্ষেত্রের অজ্ঞাত স্থানের চিত্র, ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর আভদিভকা রুশ বাহিনী নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতে পারে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দুই বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যেসব জায়গায় দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই হয়েছে, সেগুলোর একটি এই শহর।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কারবি বলেছেন, ‘আভদিভকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।’ ইউক্রেনের গোলাবারুদের ঘাটতির কথা তুলে ধরে এসব কথা বলেন তিনি।

রুশ সেনারা আভদিভকা লড়াইয়ে অগ্রগতি পেয়েছে। তারা শহরটি ঘিরে ফেলার মতো অবস্থায় পৌঁছে গেছে। এ পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ‘যত বেশি সম্ভব ইউক্রেনিয়ানদের প্রাণ বাঁচানোর’ জন্য যা যা করা দরকার, তার সবই করার অঙ্গীকার করেছেন।

রুশ হামলায় আভদিভকা শহরটি প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। এই শহরকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্কে প্রবেশের দ্বার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দোনেৎস্ক অঞ্চলের রাজধানী শহর দোনেৎস্কের ২০১৪ সালে নিয়ন্ত্রণে নেন রুশপন্থী যোদ্ধারা। পরে গণভোটের মাধ্যমে এই অঞ্চলকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করেছে মস্কো।

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় সামরিক অভিযান চালান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে ব্রিফিংয়ে জন কারবি বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেন বাহিনীর ব্যাপকভাবে গোলার ঘাটতি রয়েছে। সে কারণে আভদিভকরা শহরের পতন ঘটতে পারে।

রুশ বাহিনীতে নতুন করে নিয়োগ করা সদস্যদের দলে দলে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেন বাহিনীকে আক্রমণ চালানোর জন্য পাঠানো হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র। তিনি বলেন, কংগ্রেস এখনো মিত্রদের সহায়তার বিল অনুমোদন দেয়নি। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইউক্রেনকে গোলাবারুদ সরবরাহ করতে পারছে, যেগুলো তাদের এসব হামলা প্রতিহত করার জন্য জরুরিভাবে প্রয়োজন।

জন কারবি বলেন, রাশিয়ার সেনারা এখন আভদিভকায় ইউক্রেন বাহিনীর অবস্থানের কাছে পৌঁছে গেছেন। তাঁরা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভাঙতে শুরু করেছেন।

চলতি সপ্তাহের শুরুর মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে ৯৫ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি সহায়তার প্যাকেজ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ইউক্রেনকে ৬০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা রয়েছে। বিদেশি সহায়তার এই বিল এখন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়েছে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইউক্রেন ব্যাপকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল। ন্যাটোর মহাসচিব ইয়ানেস স্টলটেনবার্গ বৃহস্পতিবার সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেনকে অব্যাহতভাবে সামরিক সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতার প্রভাব ইতিমধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রে পড়তে শুরু করেছে।

বৃহস্পতিবার এক ভিডিও ভাষণে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, ‘যত বেশি সম্ভব ইউক্রেনিয়ানের জীবন বাঁচানোর জন্য আমাদের যোদ্ধাদের যেন পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনাগত ও কারিগরি সক্ষমতা থাকে, তা নিশ্চিতে আমরা সব কিছু করছি।’

জেলেনস্কি আজ বার্লিন ও প্যারিস সফর করছেন। এই সফরে তিনি জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি সই করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গেও নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি করে ইউক্রেন।

ইউক্রেনের জেনারেল ওলেকসান্দর টারনাভস্কিও বৃহস্পতিবার স্বীকার করেছেন, আভদিভকার ভেতরে তীব্র লড়াই হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের ভূমির প্রতিটি খণ্ড আমাদের কাছে মূল্যবান। তবে সবচেয়ে মূল্যবান ও অগ্রাধিকার হলো, ইউক্রেনের প্রত্যেক সেনার জীবন রক্ষা।’

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র দিমিত্রো লিখোভিও স্বীকার করেছেন, আভদিভকায় কিছু কিছু জায়গায় ইউক্রেনের সেনারা নিজেদের অবস্থান থেকে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.