সাত জেলায় মামলায় আসামি ৫ হাজার

0
81
রাজধানীর মিরপুর বাঙলা কলেজের সামনে মঙ্গলবার মোটরসাইকেলে আগুন দেয় বিএনপি নেতাকর্মীরা

বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচির প্রথম দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় পুলিশ এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। সাত জেলায় মামলায় বিএনপির প্রায় পাঁচ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭৬ জনকে।

বিএনপি বলছে, তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে; আবার তাদেরই আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এসব সাজানো মামলা দিয়ে আন্দোলন ও বিরোধী দলকে দমন করতে চায় সরকার। তবে পুলিশ বলছে, ফাঁড়িতে হামলা ও সরকারি কাজে বাধা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর আক্রমণের ঘটনায় মামলা করা হয়।

মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্তত সাতটি জেলায় বিএনপির এক দফার কর্মসূচি ঘিরে সংঘর্ষ হয়। কোনো কোনো জায়গায় বিএনপির ওপর হামলার অভিযোগ করেন দলটির নেতাকর্মী।

ফেনীতে বিএনপির দুই হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে পুলিশ। জয়পুরহাটে বিএনপির সহস্রাধিক নেতাকর্মীর নামে মামলা করেছে পুলিশ এবং এক ছাত্রলীগ নেতা। খাগড়াছড়িতে ১৫৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। বগুড়ায় চার মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপির ২১১ জনকে। কিশোরগঞ্জে বিএনপির একশ নেতার নামে মামলা করেছে পুলিশ। পিরোজপুরে মামলায় প্রায় ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

ঢাকায় আসামি সহস্রাধিক

মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের সামনে ছাত্রলীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়েছে। এতে সহস্রাধিক আসামি করা হয়েছে। একটি মামলার বাদী বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী রুবেল হোসেন, অপর মামলার বাদী প্রতিষ্ঠানটির স্টাফ মহিদুর রহমান। এ মামলায় ২২৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বুধবার দারুস সালাম জোনের সহকারী কমিশনার মফিজুর রহমান পলাশ দুটি মামলা হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, দুই মামলায় গ্রেপ্তারদের আদালতে নিয়ে রিমান্ড আবেদন করা হয়। পরে আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

শিক্ষার্থীর মামলায় ১২০ জন এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের মামলায় ১০৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া দুই মামলায় অজ্ঞাত আরও এক হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় বাঙলা কলেজের ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ স্থানীয় থানা, ওয়ার্ড যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।

আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া মোটরসাইকেলটির মালিক রুবেল হোসেন তাঁর এজাহারে বলেন, দলবদ্ধভাবে লাঠিসোটা নিয়ে কলেজ শিক্ষার্থীদের হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়েছে। বিএনপির পদযাত্রা যাওয়ার সময় তিনি ছাড়াও তোফাজ্জল হোসেন পলাশ, সোহাগ, নাসির ও ইসরাত টার্গেট ছিলেন।

ফেনী

ফেনীতে বিএনপির পদযাত্রায় সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দলটির দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করে থানায় দুটি মামলা করেছে। মামলায় ৮৮ জনের নাম উল্লেখ এবং আরও দুই হাজার নেতাকর্মীকে অজ্ঞাত আসামি  করা হয়েছে।
মামলায় আসামিদের মধ্যে রয়েছেন– জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার, যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী,  ইয়াকুব নবী, সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, যুবদল সভাপতি জাকির হোসেন প্রমুখ। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি এবং পুলিশের কাজে বাধা ও হামলা আইনে আরেকটি মামলা করা হয়।

ফেনী থানার ওসি নিজাম উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার রাতে ফেনী থানার এসআই হায়াত উল্লাহ বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, বিএনপি আয়োজিত পদযাত্রা থেকে পুলিশের ওপর বারবার হামলা, ককটেল নিক্ষেপ ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া হয়। তবে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বলেন, ঘটনাটি সম্পূর্ণ সাজানো এবং নির্বাচনের আগে বিএনপিকে মাঠ ছাড়ার উদ্দেশ্যে সরকারের নির্দেশে পুলিশ এসব মামলা করছে। ফেনী থানার ওসি নিজাম উদ্দিন জানান, সংঘর্ষে পুলিশ ২২০ রাউন্ড গুলি ও ২২ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে।

জয়পুরহাট

জয়পুরহাট শহরের স্টেশন সড়কে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশ ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দুটি মামলা করা হয়েছে। মামলায় এজাহারনামীয় ২৩২ এবং অজ্ঞাত এক হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। জয়পুরহাট সদর থানায় এ দুটি মামলা করা হয়। মামলায় দু’জনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। তাদের জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন জয়পুরহাট সদর উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল আলীম ও ছাত্রদল নেতা মারজান হোসেন।
মঙ্গলবার রাতে পুলিশের এসআই রুবেল বাদী হয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানা প্রধানসহ ৮২ জনের নাম উল্লেখসহ ৪০০ থেকে ৫০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। একই ঘটনায় আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর ওপর হামলা ও মারধরের অভিযোগ এনে ছাত্রলীগ সভাপতি জাকারিয়া হোসেন রাজা বাদী হয়ে বিএনপির দেড়শ জনের নামসহ অজ্ঞাত ৪০০-৫০০ নেতাকর্মীকে আসামি করে পৃথক মামলা করেন।

খাগড়াছড়ি

সংঘর্ষের ঘটনায় ১৫৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। খাগড়াছড়ি সদর থানার এসআই মামুন হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় এরই মধ্যে ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর থানার ওসি আরিফুর রহমান।

তবে সরেজমিন সদর থানায় গিয়ে আটকদের উপস্থিত স্বজনদের মুখে শোনা গেছে ভিন্ন কথা। তাদের অভিযোগ, পুলিশ নিরীহ ছাত্র-যুবকদের আটক করে মঙ্গলবারের ঘটনার ব্যর্থতা আড়াল করার চেষ্টা করছে।

মঙ্গলবার সংঘর্ষের সময় বিএনপির কর্মীরা পৌরসভা কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর ঘটনায় সরকারি সম্পত্তি বিনষ্টের অভিযোগে আরও একটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন পৌর মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী।

বগুড়া

সহিংসতার ঘটনায় পৃথক চার মামলায় বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনাসহ দলের ২১১ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর থানায় তিনটি ও দুপচাঁচিয়া থানায় একটি মামলা হয়। বগুড়া বনানী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগরকে প্রধান করে ৪৯ জনকে আসামি করা হয়। বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক শহীদুল ইসলাম বিশেষ ক্ষমতা আইনে অন্য মামলাটি করেন। এ মামলায়ও হেনাসহ ২৬ জনকে আসামি করা হয়।

বগুড়া সদর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক আব্দুল মালেক বাদী অপর মামলায় জেলা বিএনপির সভাপতি ও পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশাকে প্রধান আসামি করে ১১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ ছাড়া বাস ভাঙচুরের অভিযোগে দুপচাঁচিয়া থানায় আদমদীঘি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি সভাপতি আব্দুল মুহিত তালুকদারসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়। শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের চালক ফেরদৌস বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মঙ্গলবার বগুড়া শহরে একই সময়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির আয়োজন করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এ ঘটনায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

কিশোরগঞ্জ

বিএনপির পদযাত্রায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে কিশোরগঞ্জে মামলা হয়েছে। সদর থানার এসআই ফজলুর রহমান বাদী হয়ে ১৯ জনকে এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাত ৬০ থেকে ৭০ জনের নামে বুধবার মামলাটি করেন। সদর থানার ওসি মোহাম্মদ দাউদ জানান, এজাহারে জেলা যুবদলের সভাপতি খসরুজ্জামান শরীফ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আবু নাসের সুমন ও জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক তারেকুজ্জামান পার্নেলসহ ১৯ জনের নাম রয়েছে। অন্যরা অজ্ঞাতনামা। তবে কোনো গ্রেপ্তার নেই।

মঙ্গলবার দুপুরে জেলা শহরের রথখলা এলাকায় বিএনপির পদযাত্রায় পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরসহ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ পাল্টা রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বিএনপির অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

পিরোজপুর

বিএনপির পদযাত্রা থেকে পুলিশের ওপর হামলা ও পুলিশ সদস্যদের আহত করার অভিযোগে সদর থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় বিএনপির ৮০ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা, বোমাবাজি, সহিংসতা ও নাশকতার অভিযোগ এনে সদর থানার এসআই মাকসুদুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় ১৫ জন বিএনপির নেতাকর্মীকে আটক দেখানো হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.