সংক্রমণ বাড়ছে এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

0
117
করোনাভাইরাস

বৈশ্বিকভাবে সংক্রমণ কমলেও বাংলাদেশসহ কিছু দেশে বাড়ছে। হাসপাতালেও রোগী ভর্তি বাড়ছে।

বিশ্বের সব অঞ্চল ও অধিকাংশ দেশে করোনার সংক্রমণ কমতে দেখা যাচ্ছে। গত চার সপ্তাহে যে কয়েকটি দেশে সংক্রমণ বাড়তি দেখা গেছে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। করোনা মহামারি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার এই বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

সংক্রমণ বৃদ্ধির হার ২০ শতাংশের বেশি, এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে। পাশাপাশি হাসপাতালে রোগী ভর্তি নিয়মিতভাবে বাড়ছে, এমন দেশের তালিকাতেও বাংলাদেশ রয়েছে। অবশ্য এ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের কোনো উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা দেখা যাচ্ছে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতি চার সপ্তাহের তথ্য পর্যালোচনা করে বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সর্বশেষ বিশ্লেষণে ২২ মে থেকে ১৮ জুনের তথ্য নেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন অনেকেই করোনা পরীক্ষা করাতে চান না, পরীক্ষা করানো কমে গেছে। তাই বৈশ্বিকভাবে সংক্রমিত মানুষের সঠিক সংখ্যার প্রতিফলন প্রতিবেদনে নেই।

২৮ দিনে সারা বিশ্বে ১৭ হাজার ৩০৩টি করোনাভাইরাসের জিন বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি ধরনকে (এক্স.বিবি.১.৫ ও এক্স.বিবি.১.১৬) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘ভেরিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ বলছে এবং এই দুটি ধরনের গতিবিধি অনুসরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ছয়টি ধরনকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

দেশের পরিস্থিতি

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, দেশে সংক্রমণ বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, চার সপ্তাহে (২২ মে থেকে ১৮ জুন) বাংলাদেশে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৮৪৪ জন; তার আগের চার সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৭২। দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে আনুপাতিক হারে বাংলাদেশে সংক্রমণ সর্বোচ্চ। এই অঞ্চলে আনুপাতিক হারে বাংলাদেশের পর সংক্রমণ বেশি দেখা গেছে থাইল্যান্ডে।

দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্যদেশ ১১টি—বাংলাদেশ, ভুটান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও পূর্ব তিমুর। ভারতে জনসংখ্যা অনেক বেশি হলেও গত চার সপ্তাহের হিসেবে প্রতিবেশী এই দেশে সংক্রমণ অনেক কম দেখা গেছে। দেশটিকে নতুনভাবে আক্রান্ত হয়েছে ৭ হাজার ১৯ জন।

বাংলাদেশে শুধু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাই না, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, নিয়মিতভাবে হাসপাতালে রোগী ভর্তিও বাড়ছে। সংস্থাটি বলছে, গত চার সপ্তাহে সারা বিশ্বে নিয়মিতভাবে ২৭টি দেশে নতুন রোগী ভর্তি বেড়েছে। আনুপাতিক হারে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি বেড়েছে বাংলাদেশে। তালিকায় অন্যদের মধ্যে আছে জিম্বাবুয়ে, মাল্টা ও কিউবা।

এ ব্যাপারে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, ‘করোনা অনেকটা মৌসুমি রোগের মতো হয়ে গেছে। এই সময় আমাদের দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা বাড়ে, শ্বাসতন্ত্রবাহিত রোগ বলে করোনাও বাড়ছে। এই বৃদ্ধি আগস্ট পর্যন্ত থেকে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। এ রকম আমরা ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালেও দেখেছি।’

গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত সারা দেশে ৮৩৬ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৬০ জনের। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় করোনা শনাক্তের হার ৭ দশমিক ১৮। গতকাল হাসপাতালে ৬৪ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে ৩৪ ছিলেন আইসিইউতে।

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৪২ হাজার ৪৯ জনের। সরকারি হিসাবে, এর মধ্যে মারা গেছে ২৯ হাজার ৪৫৮ জন।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বাংলাদেশে প্রায় ৩৬ কোটি ডোজ করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। জনসংখ্যার ৮৯ শতাংশকে প্রথম ডোজ এবং ৮৩ শতাংশকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা করোনাকে অবহেলা না করার কথা বলছেন। কারণ বয়স্ক, ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষ বা দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগা মানুষ করোনায় আক্রান্ত হলে জটিলতার পাশাপাশি মৃত্যুঝুঁকিও রয়েছে। উপসর্গ দেখা দিলে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে, পরীক্ষায় শনাক্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, চিকিৎসকের পরামর্শে অবস্থার উন্নতি না হলে দ্রুত নিকটস্থ করোনা হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.