রুবিয়ালেসকে সরে যেতে বলছেন স্প্যানিশ ফুটবলের আঞ্চলিক কর্তারাও

0
110
স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের বিতর্কিত সভাপতি লুইস রুবিয়ালেস, এএফপি

নারী বিশ্বকাপ ফাইনালের পর চুমু-কাণ্ডে জড়িয়ে পড়া সভাপতি লুইস রুবিয়ালেসকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করতে বলেছেন স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের আঞ্চলিক নেতারা। গতকাল সোমবার এক জরুরি বৈঠকের পর দেওয়া এক বিবৃতিতে রুবিয়ালেসকে এ অনুরোধ জানানো হয়।

অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ ফাইনালে স্পেন জেতার পর দলটির খেলোয়াড় হেনি হেরমোসোকে ঠোঁটে চুমু খান ৪৬ বছর বয়সী রুবিয়ালেস। তবে সে চুমু তাঁর অনুমতিতে হয়নি বলে জানিয়েছেন হেরমোসো। এর পর থেকেই রুবিয়ালেসকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। রুবিয়ালেসকে ৯০ দিনের জন্য নিষিদ্ধও করে ফিফা। যদিও পদত্যাগ না করার ঘোষণা দিয়ে রুবিয়ালেস বলেছেন, হেরমোসোকে তাঁর চুমুর ব্যাপারটি পারস্পরিক সম্মতিক্রমেই হয়েছে।

তবে রুবিয়ালেসকে ফিফা নিষিদ্ধ করার পর এক জরুরি বৈঠক করেন স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইএফ-রয়্যাল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন) আঞ্চলিক সভাপতিরা। এরপর সংগঠনটির দেওয়া এক বিবৃতিতে রুবিয়ালেসকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক ঘটনাবলি এবং স্প্যানিশ ফুটবলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন করার যে অগ্রহণযোগ্য আচরণ, এরপর (আঞ্চলিক) সভাপতিরা লুইস রুবিয়ালেসকে অনতিবিলম্বে আরফইএফের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে অনুরোধ করছে।’

হেরমোসোর পক্ষে স্পেনের রাস্তায় প্ল্যাকার্ড
হেরমোসোর পক্ষে স্পেনের রাস্তায় প্ল্যাকার্ড, এএফপি

অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান পেদ্রো রোচাকে সর্বসম্মতিক্রমে সমর্থন জানানোর সঙ্গে ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনায় পুরোপুরি পরিবর্তনের দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘স্প্যানিশ ফুটবলের ব্যবস্থাপনায় নতুন পথ আনতে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ফেডারেশনের কৌশলগত পদে আসন্ন ও গভীর পরিবর্তনের দাবি জানাই।’

এর আগে রুবিয়ালেসের বিপক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হেরমোসো বিবৃতি দেওয়ার পর তাঁর বিপক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন। যদিও ফিফা রুবিয়ালেসকে নিষিদ্ধ করার পর তাঁকে ও ফেডারেশনকে জানায়, হেরমোসোর সঙ্গে যাতে যোগাযোগের চেষ্টা না করা হয়।

এদিকে রুবিয়ালেসের ওই কাণ্ড যৌন হয়রানির মতো অপরাধের পর্যায়ে পড়ে কি না, সে ব্যাপারে প্রাথমিক তদন্তও শুরু হয়েছে। স্পেনের শীর্ষ ফৌজদারি আদালতের পক্ষে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হেরমোসোর বিবৃতি অনুযায়ী এর আইনি তাৎপর্য নির্ধারণ করাটা জরুরি।

রুবিয়ালেসের ওই কাণ্ড যৌন হয়রানির মতো অপরাধের পর্যায়ে পড়ে কি না, সে ব্যাপারে প্রাথমিক তদন্তও শুরু হয়েছে
রুবিয়ালেসের ওই কাণ্ড যৌন হয়রানির মতো অপরাধের পর্যায়ে পড়ে কি না, সে ব্যাপারে প্রাথমিক তদন্তও শুরু হয়েছে, এএফপি

হেরমোসো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, লুইস রুবিয়ালেস তাঁর বক্তব্যে যা যা দাবি করেছেন, বিশেষ করে, সম্মতিসূচক চুমুর ব্যাপারটি—তাঁর সঙ্গে এমন কোনো কথাবার্তাই হয়নি। এগুলো মিথ্যা এবং নিজের সুবিধার জন্য কাউকে নিয়ন্ত্রণ করার যে সংস্কৃতি তিনি গড়ে তুলেছেন, সেটারই অংশ।’

স্পেনের আদালতের বিবৃতিতে বলা হয়, কৌঁসুলিরা ঘটনার সত্য অনুসন্ধানে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছেন, যৌন নিপীড়নের কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না, সেটা নিশ্চিত হতে। তবে আইনি পদক্ষেপ নিতে হেরমোসো বা তাঁর প্রতিনিধির কাউকে যে মামলা করতে বা অভিযোগ করতে হবে, সেটিও মনে করে দেওয়া হয়েছে সে বিবৃতিতে।

এদিকে রুবিয়ালেসকে ফিফা নিষিদ্ধ করার পর ছেলের সমর্থনে গতকাল থেকে অনশনে নেমেছেন তাঁর মা আনহেলেস বেহার। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মত্রিলের দিভাইনা পাস্তোরা গির্জায় নিজেকে আটকে রেখে অনশনের মাধ্যমে এ প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করেন। গির্জার বাইরে রুবিয়ালেসের পরিবারের এক সদস্য সংবাদকর্মীদের জানিয়েছেন, নারী বিশ্বকাপ ফাইনালের বিজয়মঞ্চে আসলে কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে হেনি হেরমোসো ‘সত্যি’ না বলা পর্যন্ত আনহেলেস বেহার এই প্রতিবাদ চালিয়ে যাবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.